তুরস্কের প্রেমের কবিতা ।। কেমাল'এরেন কেমাল বার্ক ।। অনুবাদ ।। মহুয়া দাস


কেমাল'এরেন কেমাল বার্ক তুরস্কের একজন কবি পেশায় একজন শিক্ষক তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা সাঙ্গুরলু'র সাপ্তাহিক কবিতা কর্ণারের সম্পাদনার সাথে যুক্ত তাঁর প্রেমের তিনটি কবিতা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মহুয়া দাস


অপেক্ষা 

গোলাপটি পাপড়ি মেলবে

সময় গুনছে সে

সময় গুনছি আমিও। 

সূর্যোদয়ের আগে 

প্রস্ফুটিত হও তুমি

আমি প্রহর গুনছি। 

অনেক সমুদ্র পেরিয়ে

আমার হৃদয়ে এসো রাণী

গোলাপের সুঘ্রাণ নিয়ে এসো। 

আমি অপেক্ষা করছি। 

 

আমার দৃষ্টি সব ছাড়িয়ে

অনেক দূরে এখন

আমার হৃদয় তোমাকে খুঁজছে

তোমার সুন্দর আত্মাকে আমার কাছে প্রেরণ করো,

দোহাই তোমার। 

আমি তোমার মসৃণ মনোলোভা ত্বকে লুব্ধ কি কোনদিনবলো

তবুও আমার হৃদয় পুড়ছে

দোহাই তোমার

আমাকে পুড়িও না। 

আমি ধৈর্য্য নিয়ে কত দিন

অপেক্ষায়বলো প্রিয়?

আমি প্রতিদিন তোমার জন্যে অপেক্ষা করিহে প্রিয়তমা। 

 

আমি সূঁচের ফোঁড়ে

সুন্দর রাস্তা রচনা করি

কখন তুমি আসবে প্রিয়

আমি পুড়তে পুড়তে

মোমের মতো গলে যাই

তারপর সেই গলন্ত মোমে

হৃদয় পোড়াই। 

তুমি যদি জানতে

আমার মন কেমন পাখনা মেলছে

আর যদি শুনতে পেতে

আমার আর্তরবহায়! 

আমার আশারা জ্বলজ্বল করছে

হ্যাঁএখনও। 

আমি অপেক্ষারত

শুধু তোমার জন্যে। 

 

কবে তুমি আসবে বলো

আমি হাওয়াকে জিজ্ঞেস করি। 

আমার চাওয়া বৃথা হবে না

আমি আমার মনকে বাঁধি

তবু আমি জ্বলন্ত অঙ্গার

স্বপ্নে আমি পুড়ে যাচ্ছি

আর গান গাইছি

আমি অপেক্ষা করছি প্রিয়। 

তুমি এসো।

 

 

এপ্রিলের বর্ষণ

তুমি আমার বুকের ওপর ঝরে পড়ো

ঠিক যেন এপ্রিলের ধারাস্নান

আমি তোমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে

তুমুল ভিজতে থাকি। 

 সারা পৃথিবী আমাদের নিয়ে ফিসফাস করুক। 

তুমি আমাকে শুনতে পাচ্ছ তো প্রিয়বলো। 

এসো আমরা ভবিষ্যতের কথা বলি

আমি কি চাই জানো

আমার জীবনের শেষ কথাটুকু যেন তোমাকে বলতে পারি

আমার শেষ নিঃশ্বাসটুকু যেন তোমার সঙ্গে থাকে। 

তোমার সামনে যেন বুনতে পারি হৃদয়ের শাশ্বত সেই গান

যে গান তোমার জন্যেই গাই। 

তোমার চোখের তারায় আর সুন্দর গালের টোলে 

ফুটে ওঠে যেন গোলাপি ফুলেরা।

যখন চাঁদের আলোয় তোমাকে  নির্নিমেষ দেখি আর বাহুডোরে বাঁধি

সুঘ্রাণ নিই তোমার শরীরের

মনে হয় যেন উড়ে যাই 

চাঁদের পানেকোন নক্ষত্রের গানে।

তোমার চারদিকে প্রজাপতি হয়ে উড়ব শুধু

তুমি আমার আত্মাতুমি আমারই। 

ফুঁসে আসা নদীর মতো

ছুটে আসতে চাই তোমার পানে। 

বলো দুটি হাতে হাতহৃদয়ে হৃদয় রেখে

আমরা সুখী হবো। 

আমার চোখে চোখ রাখো সোনা

জুড়োক প্রাণ,

কথা দাও সোনা

এভাবে কাটাবো সারাটা জীবন।

 


তুমি কি আর আমার কথা ভাবো

যখন তোমার জিম্মায় থাকি

তোমার সতর্ক দৃষ্টি যেন প্রশ্ন করে

স্বপ্নে তুমি কোথায় ঘুরে বেড়াও

তোমার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসির খেলা

"বলো আমাকেলজ্জা পেয়ো না

তুমি কি আমার কথা ভাবো?"

 

আমি রূপ খুঁজে বেড়াই না

না কথায় না কাজে

আমি যে রূপ খুঁজি

তা লুকিয়ে থাকে 

তোমার ঐ চোখে। 

 তোমার হৃদয়ের উত্তাপ যে বেশি পাই তা নয়,

তুমি আমার হৃদয়ে যে রাজপ্রাসাদ গড়েছ

আমি তোমাকে ঠিক সেইখানে লুকিয়ে রাখি। 

তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে প্রিয়

 

দেয়ালে যেখানে তোমার ছবি ঝুলছে

সেখানে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ

তুমি যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছ

আর আমি তোমার আজ্ঞাবহ। 

তোমার কথাগুলো আমার মাথায় সবসময় ঘোরে

"আমার হাতদুটো ধরোযেতে দিও না প্রিয়।" 

তুমি কি আর আমার কথা ভাবো

 

সুকুমার মুখটি ঘিরে কালো চুল ঝাঁপিয়ে এসেছে

কিন্তু আমি তাকিয়ে দেখি শুধু তোমার চোখ দুটি

সেখানে যেন সমুদ্রের গভীরতা

ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে তার সুঘ্রাণে

"কখন তুমি আমার চোখে চোখ রাখবে প্রিয়?"

তুমি কি আর আমার কথা ভাবো

 

আমার সবচেয়ে সুন্দর কবিতাগুলো লিখেছি

শুধু তোমাকে ভেবে

যখন হৃদয় খুঁড়ে ফেললেও

জিভে উচ্চারিত হয় না কোন শব্দ

ঠিক সেই সময়েই ঝরণার মতো

আমার কলম থেকে স্ফূরিত হয় কালি

আচ্ছাযখন তুমি মৃদু মৃদু হাসো

তখন তুমি আমার কথাই ভাবো?




এই লেখকের অন্য অনুবাদ... 

তুরস্কের কবিতা ।। অনুবাদ: মহুয়া দাস



Post a Comment

0 Comments