ডেভিড রোক্কো কোলাক্রাই ইতালির একজন উল্লেখযোগ্য কবি। প্রায় হাজারেরও বেশি পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। গণিতের শিক্ষক অথচ কবিতায় ঝরে পড়ে তীব্র আবেগ। পিয়ানো ও হার্প তাঁর নিত্য সঙ্গী। আর সঙ্গী একটি কুকুর। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। ডেভিড রোক্কো কোলাক্রাই’র দুটি কবিতার অনুবাদ করেছেন মহুয়া দাস
।। মা-লা-ভোগ্লিয়া ।।
সংক্ষিপ্ত ফেনার ধুকপুকুনির মধ্যে,
স্বয়ং ঈশ্বর যেন অপেক্ষারত এক গুটিপোকার মতো।
সৃষ্টি ও চালনা করছেন তরঙ্গের আমন্ত্রণ,
তরঙ্গের চূড়ায় চূড়ায় জড়িয়ে আমার নাম।
ডুমুরের উপর গ্রীষ্মের গুঁড়োর মতো লেগে আছে শব্দগুলি,
আর সূর্যাস্ত তাদেরকে রক্তিম পিন্ডে পরিণত করছে।
সূর্যাস্তের সমাহিত ক্ষমায় যেখানে নৈঃশব্দ্য থিতিয়ে পড়ে,
সেখানেই সমুদ্রের উপকূলে ম ম করছে
মদিরার সুমিষ্ট আঘ্রাণ।
জলপাইয়ের তলদেশে পড়ে পড়ে জ্বলতে থাকে পাথর।
তারা হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস ফেলে
অবাধ্য অঙ্গুরীয়ের মতো,
যখন জেলেরা সমুদ্রের নস্ট্যালজিয়া মেখে ঘরে ফেরে,
আর দিগন্তের পারে দূর দিকচক্রবাল যেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে।
পাথরে কত যে ইতিহাস লেখা আছে।
জালে ধরা পড়ে উঠে আসে কিছু,
বাকি সব কথারা জলের ধারে ঝিনুকের মতো জমা হয় ,
কুকুরের ভেজা থুতুই শুধু তাদের গন্ধ পায়।
কিংবা হয়তো কান্না, যেখানে একটি স্বপ্ন শুকিয়ে আছে ।
আমার শহর এখন ঘুমোচ্ছে।
উপত্যকার সামুদ্রিক শৈবালেরা ধুয়ে দেয় দুঃখ যত।
কোলাহল শেষে,
আমি বসে বসে এখন আমার সুখের হিসেব কষছি।
এক দুরন্ত সিগাল বয়ে আনছে
যত ভালোবাসার কথা,
আর সৌভাগ্যের কবচের চিহ্ন এক।
।। একটি অসম্পূর্ণ মানুষের রূপান্তরের কাহিনী ।।
আকাশের একাকীত্ব শুষে নিচ্ছে
বিদীর্ণ হৃদয়ের যত ক্ষয়ে আসা ভাবনা,
বাতাস এখানে যেন পাতলা হয়ে আসা ক্ষীণ সুতোর মতো।
আমার স্বপ্নের অঙ্গার বহুগুণে বর্ধিত,
মুখ যেন অপেক্ষার নীরবতা ।
চূর্ণবিচূর্ণ শেষ অক্ষরমালায়
সব অনুমান ধুলিসাৎ,
কন্ঠে প্রার্থনা সঙ্গীত।
প্রতারণার উত্তাপ ও জ্বলন ,
আর এই যে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া,
জীবনে এসে লাগছে ক্ষুরধার।
এবং এই যে আমি,
যে কোনদিনই বাবা হতে পারব না,
তাকিয়ে আছি নির্নিমেষ, হতাশ,
দিগন্তের দিকে।
সেখানে কোন ছায়া নেই।
যন্ত্রণা আঁকো আমার শরীরে,
গ্রহণের কাল আমার কঠিন অস্থিমজ্জা উপচে প্রবাহিত হচ্ছে,
অয়নকাল পেরিয়ে যাচ্ছি,
আমার শোণিতের হ্যাংওভারে
ডুবে যাচ্ছে আমার গতিজাড্য,
এবং সেখানে মিশে যাচ্ছে
আমার নাম ধারণ করতে যে পারত,
সেই অক্ষম সে, ও তার অনুপস্থিতি।
এক নির্লিপ্ত, নিরপেক্ষ শূণ্য স্থান,
শীতলতা ও ছাইয়ের সংমিশ্রণ।
আলোর উজ্জ্বল ও অনুজ্জ্বল সমাবেশ যেন,
যেখানে আমার বালিঘড়ি ঝুঁকে পড়েছে শাশ্বত কিছু সত্যের দিকে।
প্রথম ও শেষবারের মতো হয়তো, আওয়াজ সব বন্ধ হয়ে গেছে।
একটি অপূর্ণ মানুষের রূপান্তর,
যা, শুধু আমার কথাই বলতে পারত।
এই লেখকের আরও লেখকা...
0 Comments