ফজল
ওকে কবিতায় খুঁজবে
না
কবিতায় সে থাকে না
কবিতায় থাকি আমি,
থাকো তুমি
এবং আমাদের মতো
অনেকে।
নিজের ঘরে সে
লুকিয়ে রাখে নিজেকে
মাঝে মাঝে বেরিয়ে
আসে কবিতায় তুমি হয়ে আমি হয়ে
কুষ্ঠরোগে গলে
যাওয়া দেহটি
কাঁচা আমের মতো
শুকিয়ে দিয়ে রৌদ্রে
বর্ষাকালের ঘাসের
মতো ছাউনি ধরা খামাচি ও ফোঁড়াগুলো দাঁত দিয়ে ফাটিয়ে চেরাপুঞ্জির মতো ভিজে থাকে
স্বাধীনতা অথবা
প্রেমের রোদ্দুরে শুকাবো বলে
টুথপেস্টের
বিজ্ঞাপনে কোলগেট হাসি না মেরে
তার বদলি ক্ষতগুলো
বাক্সে ভরিয়ে
একটি গ্রাম এবং
একজন মানুষের ছবি আঁকে
যে গ্রামটি সেই মানুষটি অল্প আগে বিধ্বস্ত।
কবিতা এবং দেশের
থেকে প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয় ফজল
যেখানে শূর মেলে
বসে থাকে একটি কালো হাতি
ফজলকে দেয় একটি
অন্ধকার রাষ্ট্র
ফাঁকিবাজি একটি
গ্রাম
হতচ্ছাড়া একটি
প্রভাত
বিষাদের একটি আসন
ফজল আসলে একজন কবি
কবিকে কবিতায়
খুঁজবে না
কবিতায় ফজল অথবা
কবি
কেউ থাকে না।
ডারউইনের বিড়ি
ঘটনাটির পনেরো দিন
পর
ডারউইনের টলোমলো পা
পোষ্টমৰ্টেম করার
অস্ত্র নেই
ক্রোমেজোমের
পেটে রিফিল ঘুরিয়ে
ডারউইন দেখছে
বিড়িটা কতটা পুড়েছে ।
রাজপথকে জড়িয়ে নগর
ঘুমিয়ে পড়েছে
বারান্দা মেলে
দিয়েছে ধুলোর কেশ
আকাশের দিকে তাকিয়ে
কুকুরের দল চিৎকার করছে
একে অপরকে কামড়াচ্ছে,
দৌড়চ্ছে
ইঁদুর উড়িয়ে দিয়েছে
হাসির প্যারাসুট
ঠোঁটে কাঁচি নিয়ে
ফসল কাটছে পাখিরা ।
ছয়মাস পর ডারউইনের
দাঁড়ি গজিয়েছে
হাতে গিটার নিয়ে
মশারা এদিক সেদিক ঘুরছে
উঠোনে তৃণের দল
পেতেছে রাজনৈতিক সভা
ডারউইন ধীরে ধীরে
ছেড়ে দিচ্ছে মগজের লাটাই-সূতো ।
দূরের মাঠে গরুদের
চিৎকার
ঐরাবত দমকল উপড়িয়ে
খেলছে জলকেলি
ষাঁড় মেরে বাঘ
খুলেছে মাংসের দোকান
শিয়াল চোখে তীর
নিশানা করছে মুর্গীটিকে তাক করে
এক দশক পর ডারউইনের
মাথায় বরফ
স্মার্ট শহরগুলোতে
গাছেদের ইলেকশান
রাষ্ট্রপতি ভবন
দাঁড়িপাকা বৃদ্ধ
আইন এবং
ধর্মগ্রন্থের পাতা ছিঁড়ে
মেয়ে —উইপোকারা মাসিকের কাজ সারছে
আরশোলা ঈশ্বরের
মাথায় নির্মাণ করছে টয়লেট ।
জলচর স্থলে উঠেছে
‘নাসা’র
দুইটি হাইড্রোজেন প্রকল্পের বিস্ফোরণে
ভূগোল ত্যাগ করেছে
আমেরিকা এবং কানাডাকে
মঙ্গলগ্রহ ও
আকাশযানের সংঘর্ষে
দুই বছর যাবৎ
নিরুদ্দেশ হয়েছে সূর্য ।
দশ হাজার বছর পর –
ডারউইন খুঁজে পায়নি
হোমার থিয়রি
বিবর্তনের বিকাশ।
মারে,
ধরে এবং খায়।
তীব্র যুদ্ধ।
এক লাখ বছর পর,
উত্থান —পতনের ঢেউ।
সরসৃপের রাজত্ব।
স্তন্যপ্রাণীরা মিসাইল সাজিয়েছে ।
মৃত্যুর হেলিকপটারে
বিবর্তন বিড়ি ফুঁকে
ডারউইন বলছে —আমি ফিরে আসব ।
'আমাদের গ্রামে এখনো ১৯২১ সন চলে'
আমাদের গ্রামে এখনো
১৯২১ সন চলে
রাতে ফুল মুনির ছোট
ছেলেটি
হাউ হাউ করে কেঁদে
ওঠে গরমে
আব্বা আব্বা বলে
ফুল মনে উঠে বসে
একবার থালা দিয়ে
একবার আঁচল দিয়ে
বাতাস করে
থালার বাতাসে নাকি
জুড়ায় কলিজার গরম
আমরা পৃথিবী থেকে
১০০ বছর পিছনে থাকা
দেশে থেকে এক শতক
ভাত খেতে বসলেই
জুতার শব্দে
থালার ভাত থরথর করে
কাঁপে
চেপটা হয়ে চিড়া
হয়।
বিকেল বেলা আমরা
মৃতনদীর পাড়ে বসে
খৈনির দামে আগুন
দেখি
একজন অন্যজনের
কলিজা চিবোই।
সাথের মেয়েরা মা
হয়ে গেল
যারা কনে হতে
পারেনি
ওদের বস নৌকার সাথে
রবিবারে বাজারে
দর-দাম করা হয়।
এবং আমাকে সবাই এক
নামে চেনে
'লাগামছাড়া
গরু'
আমাদের মাথায় কেউ
হাত দিলে আমরা কাঁদি
স্বভাবগত ক্রন্দন।
আমাদের হাসিরও নাই
অভাব
পেটের ভাতের জন্য
হাসি বিক্রি করি
আবার জীবন করে ফেলি
বরবাদ।
সকালে ছেলেরা দাঁত
মাজতে বসে
খুরমা ভেবে ভেবে
কয়লা খায়
বইয়ের পরিবর্তে
ঝোলার সাথে
ঠোঙায় ভরে নিয়ে
খায় ভবিষ্যৎ
অংকের স্যারকে
খাতার বদলে এগিয়ে
দেয় জীবন।
মাগরিব হলেই গাজী
জেঠু ধর্মের কথা বলে
এবং আমার মনে পড়ে
মিচিফুল চাচির মুখ
আল্লাহ আল্লাহ করে
গ্রামে গ্রামে
ভিক্ষা করে গেল,
তাও চাচীর চিৎকার
শেষ হলো না
আমাদের গ্রামে এখনো
১৯২১ সন চলে
বাজারে ক্যালেন্ডার
না পেয়ে
ছনের দড়িতে গিট
মেরে মা হিসাব করে মাস
মাঠে বদর ভাই গরু
চরাতে যায়
বাঁশি বাজিয়ে
বাজিয়ে কত ডাকল গান্ধীজিকে
কালো বলদটিকে হালে
না লাগিয়ে
বসে বসে চোখে ধরা
পড়ছিল
কিভাবে বলবান হয়ে
ওঠছে
জানি কচুফুল
কোনোদিনই খোঁপাতে ফোটে না।
আমাদের গ্রামে এখনো
১৯২১ সন চলে।।
রাসেল চৌধুরীর জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে আসামের পশ্চিম সীমান্তের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রের চর অববাহিকায় চরখলিছামারী গ্রামে। শিক্ষা অসমীয়া ভাষায় স্নাতকোত্তর। ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করছেন। বর্তমানে তাঁর কবিতা অসমীয়া সাহিত্য পত্রিকাগুলিতে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছ । মূলত প্রগতিশীল উত্তরাধুনিক কবি। পেশা স্কুলের শিক্ষকতা। কৃষি কাজের সাথেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ।
এই লেখকের আরও অনুবাদ...
0 Comments