শ্রীমুখে রবীন্দ্রনাথ
কখনো দেখা হয়নি
সাক্ষাৎ-ও হয়নি বাজারে-হাটে, পথে-ঘাটে
এমনকি কবির সভায়
একদিন একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম
যুগান্তর বিড়ির ধোঁয়া এসে নাকে লেগেছিল
কাঁধে ঝুলে থাকা বাঁদরের মতো ঝুলে ছিল
একটি রামধনু
বিড়ি জ্বালাতে কোথায় পেয়েছিল দেশলাই
সজাগ হয়ে শিরদেশে উদ্বিগ্নতায় দেখি
মায়ের সর্বদা রেখে দেওয়া দেশলাইয়ের বাক্সটি
রাত হলে কেউ যেন আমাকে চেপে ধরে
ছটফট করে উঠি
শুকিয়ে যায় গলা
প্রকৃতির ডাকে বাইরে বেরিয়ে দেখি
মেঘের মুঠো খোলা
তারমানে বিছানাতে এক হাঁটু জল
মিথ্যে বদনাম প্রেমের শুভ্রবরণ
বাঁশ পাতায় ভেজা বৃষ্টির শীত
অরণ্য জুড়ে একা থাকে বসে
সময় অসময়ে ঠোঁটে নিয়ে পাহাড়িয়া গান
দেখি নাই
শুনেছি
রুপালি চুল
তারই মাঝে মাঝে রাত্রি হলে ছোট ছোট জোনাকি
দিনে ঈগল খুঁটে খুঁটে রাখা রবি
দেখা হলে
কিছু সঙ্গসুখে
খুলতো লাল সুতোয় বাঁধা গোপন ফাইল
উদঘাটন করতে পারি প্রজাপতির জন্ম রহস্য
উড়ে থাকা পাখিদের নিয়ন্ত্রণের কৌশল
অস্থিরতাকে ভাসিয়ে দিলাম জলে
এবং এক আঁচল রৌদ্রস্নাত ঢেউয়ে জীবন
যদিও একটি জীবনে সম্ভব হয় না
তথাপি বজ্রমুঠি প্রতিজ্ঞার
দেখা পেলেই কথাগুলো নিত
নিজ পথে গতি
কার বিরহে বৈরাগী ও প্ৰিয়নাথ!
উদাস চোখে একটি ধূসর গ্রাম
খসে পরা বিকেল
এবং একটি মরা নদী।
পোনা মাছ
১)
সাদা রেখাচিত্র একটিতে
ঝুলে আছে
চোখের লবণাক্ত সাগরে সাঁতরে থাকা
একটি পোনা মাছ
চারা মাছের উপরে
একখানা জলন্ত সিংহাসন
ঝুঁকে থাকা গাছটি
ছায়া দিয়েছে
২)
আমি দর্শকের আসনে বসে দেখছিলাম–
ডিমের খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা
একটা পুরাতন কাহিনী
বট গাছের ডালে বসে
বুকের পাঁজরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে
লালন করছে দুপুরের পুকুর
আঙ্গুলের ডগায় গুনে দেখেছি
সেই ছোঁয়ায় মৃত্যু প্রাপ্ত অনেক পুকুর ফেরত পেয়েছিল
হারানো বসন্ত
৩)
পোনা মাছটি বাবার পিঠে বসে ভ্রমণ করছিল
ক্ষুধার মানচিত্রের জলে-স্থলে
আমাদের পেটের ক্ষুধার্ত গানটিকে ঘুম নিয়েছিল
পিত হলদে কচুরিপানার জলে
আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম জীবন
বাবার পেটে স্ফিত মাংসপিণ্ডদ্বয়
পোনা মাছটি এঁকে দেওয়া দুটি পাহাড়
একটিতে সূর্য অস্ত গেলে অন্যটিতে হয় উদয়।
৪)
বধির এবং শীতল হয়ে অপেক্ষায় থাকি
অপেক্ষা
একবেলার ভুড়িভোজের নীল ঢেউ
পোনা মাছটি আমাকে দেখালো
উড়ন্ত ঈগলের একটি পেইন্টিং
আমার ধূসর আকাশে
প্রজাপতির মতো গজালো দুটি ডানা ।
কাঁচের জানালা
এক
মোম গলে গলে জল হচ্ছিলো
হারেমে বসে বিধ্বস্ত চাঁদ কাঁদছিলো
সহ্যর সীমানা সেদিন করেছিল অতিক্রম
দুই
দেশলাই নেই
আবার জ্বলে উঠার অপেক্ষায়
গলে গলে জল হওয়া মোম
তিন
একঝাঁক বিষাক্ত বাতাস
ঈশ্বরের সাথে চুক্তি করে
ঝনঝন শব্দে ভেঙে গিয়েছিল
গল্পের দুপুরবেলার জানালার কাঁচ।
চার
শরীর ঝুলিয়ে রোদে বসে থাকা ফড়িং
ঈশ্বর ভক্ত ছিল
সকাল সন্ধ্যা ধূপদানির ছাইয়ে
জীবন খুঁজছিল
আপঙ মদের নেশায় ঈশ্বর
মেয়েটির প্রার্থনা ভুলে গিয়েছিল
ফড়িঙের হৃদয় হারানোর বেদনা
মোম গলা জলে ভেসে উঠেছিল ধীরে ধীরে
পাঁচ
কাঁটা বেছে মাছ খাও!
বলে কোথায় উধাও হলো আলো
মেয়েটির ভিতর থেকে
আলো পালালো বলাতে
আমার কোন আপত্তি নেই
কালো মাঠে ভর দিয়ে রাত্রি
মিহি ছাই মেখে কাটা-বাছা করেছে
ষড়যন্ত্রের মাছ
মাছের পেটে মাছের ডিম
বলে দশে দেখার ভয়
মাছের পোনা কিন্তু এমনই হয়
ছয়
অন্যকে লুকিয়ে এসেছো মৃত্যু
আমি তোমাকে ফেরত পাঠাতে পারি না
মোম গলে গলে জল হলেও
আঁধারের ভয়ে ঈশ্বর পলায়ন করলেও
আমি তোমাকে ফেরত পাঠাতে পারি না
মৃত্যু।
মিণ্টুল হাজরিকা। জন্ম ১৯৯৩ সাল, কামরূপ জেলার , বরম্বৈ অঞ্চলের মোখনীয়া গ্রাম। ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্যের চর্চা করা মিণ্টুল সামাজিক কাজকর্মের সাথেও জড়িত। কবিতার সাথে সাথেই গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনামূলক সাহিত্য, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ক লেখা লিখে থাকা মিণ্টুল হাজরিকার সাহিত্য কর্ম আসামের নামকরা পত্রিকা 'সাতসরী' 'প্রকাশ' 'গরীয়সী' 'অন্যযুগ'কে ধরে প্রায় সব খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়ে থাকে। ইংরেজি ও ওড়িয়া ভাষাতেও মিণ্টুলের কবিতা অনুবাদ ও প্রকাশ হয়েছে ৷ তিনি নিজেও অনুবাদ করেন। প্রকাশিত কবিতার বই “ র’দের গান” এবং “হালধিহাট”। কবিতার জন্য পেয়েছেন 'আসাম কাব্য কানন' পুরস্কার।
0 Comments