।।ছবিটা পেলব করে।।
নক্ষত্র জলে গড়া টলটলে দানাটি নোলকে।
কোন সে পটুয়া এঁকেছে আকর্ণ, তিলফুল বাঁশি
আমিতো ঘরের খাই,উন্মনা মনের দায় আমার নেই,
কেন দেগে দিয়ে বল 'চরিত্রে দোষ'!
চোখ চলে যায় আলগোছে;
কী যেন সে খোঁজে!
গুণীনের কাছে গেলে!তুলে নিলে বশীকরণ বাণ?
কেন যে বোঝ না এই অপমান
দোষের ভাগী করে রাখে তোমাকেও!
পটুয়াকে ডাকো,ছবিটা পেলব করে আঁকুক আবার...
সেদিন কি অনুবাদে মেপেছিলে সন্ধ্যার নিভৃতিতে!
পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছেনে ছেনে
ক্রুদ্ধ ভালবেসে?
ভাবনিতো গড়েপিঠে নেবে
শব্দ দিয়ে মেপে
বৃষ্টি কি এসেছিল অলৌকিক ঝেঁপে?
কিছু কথা মন্দ্র দ্বিপ্রহরে;
কিছু চিহ্ন আঁকা আজও দিব্য সিঁড়িঘরে।
রয়েছিতো বানপ্রস্থে দীর্ঘ দীর্ঘকাল
ঘৃণা করে ঘৃণা সয়ে ঘৃণার আবহে
বেঁচে আছি, বেঁচে গেছি তীব্রতর দ্রোহে…
।। নাও ছুঁয়ে দেখো ।।
ছুঁয়ে দেখ…
নাও,
ছুঁয়ে দেখ;
এই আমি, সেই আমি।
ছোঁও!
ছুঁয়ে দেখ জলজ কুসুম।
পূর্ণ কর তোমার স্পর্শের মহিমায়…
।। অবগাহন ।।
এক একটি পরিবার যেন গ্ৰাম
গ্রামের মতন ছড়ানো
আলো অন্ধকার।
একা হয়ে যাই সুখের অসুখে
নিঃস্ব নির্বান্ধব
যাচ্ছি ধু ধু সীমান্তের দিকে।
বদলে যাচ্ছে পাটকিলে পাহাড়
আগুনের চরিত্র
শীত লাগছে 'মাগো' বড় জাড়!
শব্দ নেই বৈতরণীর
মেঘরঙ্ বন্ধুর বাড়ি
জলে দিচ্ছি জলের অঞ্জলি
আঙুলের ফাঁক দিয়ে জলের ঝর্ণা;
শুদ্ধ হচ্ছি 'পিতা নোহসি' তর্পণে।
সিদ্ধ হচ্ছি জলে ― অবগাহনে
বিশুদ্ধ মাতৃভাষায়...
।। লোকগাথা ।।
পাব ফিরে
হেসে উঠবে চরাচর ঢেউ ছুটবে ঘরে ও বাইরে।
◆
যদিও জেনেছি ঠিক, আর মাত্র সাত জন্ম পরে
বাতাসে ভাসবে তুমি এক পাগলের হাত ধরে।
◆
কে না জানে সাতজন্ম খুব বেশি নয়;
আমরাও ছুঁয়ে থেকে খুঁজে পাব নিজস্ব আশ্রয়।
◆
সাত জন্ম পরে
প্রতি ঘরে ঘরে
আমাদের ঐশী খেলাধুলো:
লোকগাথা হয়ে উড়বে কবিতার তুলো।
।। পর্ব: বানপ্রস্থ ।।
তখন রক্তের তেজ শোনেনিকো পরামর্শ কথা
হয়তো সতর্কবার্তা আনেনিকো গ্রাহ্যের সীমায়
উড়িয়েছে সবকিছু বেমালুম বাউল বাতাসে
ভেবেছে ছুটছে আগে আদপে তা নিছক পিছনে
চমক চটক মোহে ভুল সত্যে হয়ে মাতোয়ারা
যেন সেই রুখুভূমে রহস্যের চাবি খুঁজে ফেরা
নিষিদ্ধ দুপুর ডাক অপার্থিব রোদের দহনে
অথবা স্বপ্নের ঘোরে গন্ধবহ অলীক পুষ্পের
#
যখন সম্বিত ফেরে বয়ে গেছে আঙুলের ফাঁকে
জলবিন্দু সময়ের! গলে গলে গলে গেছে কবে
কোদালে মেঘের ফাঁকে উঁকি মারা অলৌকিক হাসি
ভবিতব্য কাকে বলে লোকগাথা জানে সেই কথা
বুড়ো বট সব জানে জানে বেঁটেখাটো বাস্তসাপ
স্থবির জানেনা কিছু দীর্ঘতর হয় মনস্তাপ।
।। বাগান ।।
মাটিতে পুঁতেছি বীজ মহা ঘুম থেকে হাই তোলে দু'একটি পাতা;
ফুলের উৎসব আজ ধীরে ধীরে বাড়ে বৃক্ষলতা।
ফুল হবে ফল হবে উচ্ছ্বাসে পাখি ও প্রজাপতি,
সেখানে কাটবে সময় আমাদের সানন্দ মাতামাতি।
মেঘ ডাকে বৃষ্টি পড়ে রস জমে গাছের শিকড়ে,
পরাগে পরাগ লাগে সুখপাখি ডালে ডালে ওড়ে…
।। চাঁদ ধোয়া জলে… ।।
রোদ মরলে ভেঙে যায় দ্বিপ্রাহরিক ঘুম
ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্নগুলো ছিঁড়ে যায় আরও;
সেলাই করা হয়না।
বৃষ্টি নেই বলে বর্ষা-ঋতুও বেশ বিষন্ন
তাবলে এখানে গভীর কোনও সংরাগ নেই
কখনও কুড়িয়ে আনিনি কদম কেশর;
মালা থেকে খসে পড়া একটি ফুল!
কেউ কি দিয়েছে কুপ্রস্তাব বর্ষার কানে?
তাহলে কেন সে পরেনি ধূপছায়া শাড়ি:
প্রাইম টাইমে জমছেনা মিয়া কি মলহার!
কবে আসবে গো পলাশডাঙায়?
ভিজিয়ে দেবে শুক্লপক্ষের চাঁদ ধোয়া জলে…
।। কথা ।।
কথা মানে বাক্।শব্দের ধ্বনি-প্রতিমা
দলমা থেকে হেঁটে আসা হাতিটিও জানে
শব্দের মহিমা।গোপন ডেরায় রুদ্ধবাক্
জঙ্গলনন্দিনী ভগিনী আমার কোন মূল্যে জেনে নিলে
গামছা ঢাকা প্রতিশ্রুতির সঠিক অনুবাদ!
শালের উৎসবকালে বারুদের বিকৃত বিভৎসা
বৃক্ষের শিকড়ে ঢালে অঙ্গারের গোপন দহন।
বৃক্ষরাজি বুঝেছে কি কালনেমীর বার্বরিক লোভ!
বাহা পরবের ভরা রাতে থই থই সুরভি পাপড়ি
নাগিনীর নিঃশ্বাস-বিষে কুঁকড়ে আছে ঘরবন্দি মেয়ে।
কথা।কথা শোনো;কথা বলো ঝিটকার জঙ্গল,
বাজাও বাজাও মাদল তুমি ওই কাড়াম পরবে
মারাং বুরু তুরু রু রু ওড়াও নিশান―
শেয়াল শকুন পাল খুঁজে নিক্ গর্তের সন্ধান
।। আরেক নক্ষত্রের দিকে… ।।
নক্ষত্র প্রদেশে তুমি ছিলে সংগোপনে
তোমাকে এনেছি ভেলভেট কৌটায় সাবধানে অনিবার্য সতর্কতায়
অগ্নি সম্ভবা তুমি কৃষাণীর বেশে আলের উপরে এসে দাঁড়াও
পাকুড়তলার মাঠ জিভ পিছলে যাওয়া আয়না হয়ে থই থই
গুছি হাত করে-পিছিয়ে পিছিয়ে
হিলহিল করবে ক'দিনেই পূব থেকে পশ্চিমে
সন্ত্রস্থ শামুক গুগলি জানে ফনফনিয়ে বাড়-বৃদ্ধি
ঋতুমতী ধানের থোড় ফাটবে 'ধানফুল আয়' বলে ডাক দেবে পুরুষ
তুমি কাস্তেতে পোঁড় কাটো,তেল দাও গাড়ির লিগে
তোমাকে নিয়ে যাবো নক্ষত্রের দেশ থেকে আরেক নক্ষত্রের দিকে…
যযাতি দেবল ছদ্মনামে লেখেন। প্রকৃত নাম পরেশ মণ্ডল। জন্ম, ২১জুন ১৯৫৪, পানাগড় গ্রাম। শৈশব থেকে প্রাক যৌবন কেটেছে গোপালপুর গ্রাম। পরে স্থায়ী বাসিন্দা পানাগড় গ্রাম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। কবিতার সঙ্গে দীর্ঘ বসবাস। ভালবাসেন ফুল, পাখি, প্রকৃতি সর্বোপরি মানুষ।
8 Comments
আহা, অপূর্ব সব কবিতা। এত সুন্দরের সমাবেশেও প্রতিটি কবিতার সৌন্দর্য আলাদা করে চেনা যায়। কবি তখনই অন্তরের হয়ে ওঠে যখন পাঠক নিজের অনুভূতিকে কবিতা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনা। এখানে সেটাই হয়েছে। আবার বলি, ওহে সুন্দর।
ReplyDeleteএই ভাললাগা আমাকে স্পর্শ করে গেল। শুভেচ্ছা। ভালবাসা।
Deleteচমৎকার!
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteযযাতি দেবল দাদার কবিতায় নক্ষত্র সন্ধান জারি থাক। আমার পাঠমুগ্ধতা জানাই। দশটি কবিতাই অনায়াস গম্য। অসাধারণ সৃজন। কলম জেগে থাক এভাবেই। নিত্য নতুন সৃজনে।
ReplyDeleteপ্রিয়বর!
Deleteপ্রিয়বর!
Deleteকবিতাগুলি সহজ অথচ আত্মবীক্ষণের নিবিড় পাঠ। নির্মেদ এবং স্বচ্ছ জীবনচেতনায় দার্শনিক উপলব্ধি:
ReplyDelete"রয়েছিতো বানপ্রস্থে দীর্ঘ দীর্ঘকাল
ঘৃণা করে ঘৃণা সয়ে ঘৃণার আবহে
বেঁচে আছি, বেঁচে গেছি তীব্রতর দ্রোহে…"
অথবা
"শব্দ নেই বৈতরণীর
মেঘরঙ্ বন্ধুর বাড়ি
জলে দিচ্ছি জলের অঞ্জলি
আঙুলের ফাঁক দিয়ে জলের ঝর্ণা;
শুদ্ধ হচ্ছি 'পিতা নোহসি' তর্পণে।
সিদ্ধ হচ্ছি জলে ― অবগাহনে
বিশুদ্ধ মাতৃভাষায়..."
পড়তে পড়তে কত কথা এসে যায়। প্রাত্যহিক জীবনযাপনে থেকে পারিপার্শ্বিক জীবন কথাও। লোকভাষা, লোকশিক্ষা এবং প্রচলিত নানা উপকথাও। বাঙালি জীবনের সংস্কৃতিকে কবি চিনিয়ে দিয়েছেন।