আসামের কবিতা ।। অনুবাদ: সত্যজিৎ চৌধুরী

 


মিণ্টুল হাজরিকা আসামের তরুণ প্রজন্মের কবি। জন্ম ১৯৯৩ সালকামরূপ জেলার মোখনীয়া গ্রাম। মিণ্টুলের লেখা আসামের সাতসরী, প্রকাশ, গরীয়সী, অন্যযুগসহ প্রায় সব খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়ে থাকে। ইংরেজি, হিন্দি ও ওড়িয়া ভাষাতেও মিণ্টুলের কবিতার অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে৷ প্রকাশিত কবিতার বই দের গান’ এবং হালধিহাট। কবিতার জন্য পেয়েছেন আসাম কাব্য কানন পুরস্কার। মিন্টুল হাজরিকার কবিতা অসমীয়া থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সত্যজিৎ চৌধুরী ৷

 

লেনিনবাদ

 

তাঁর আঙ্গুল ধরে ঘরের চাল ভেদ করে 

চাঁদের দাগগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়েছি

 

মুক্তির কবিতা না লিখলে কারখানার লোহা গলানো আগুন ফুল হয়ে ফোটে না বলে জেনেছি

 

আমি বিশ্বাস করা ভাগ্যদেবতার আশীর্বাদটাকে

নদীর জলে ছেড়ে দিয়ে এসেছি

 

আকাশের চাঁদ দেখে ভুলে যাইনি

বিছানায় আলো নিয়ে ঘুমোতে শিখেছি

 

সে না এলে জ্বলতে থাকতাম অগ্নিকুণ্ডে 

সুতরাং হৃদয়ে জলের ফুল ফুটিয়েছি 

 

দীর্ঘশ্বাসকে বিদায় জানিয়েছি

সে বাতাস কেটে বেরিয়ে গেছে 

সবুজ গাছগুলোর মাঝ দিয়ে...

 

আর আমি নদীর বুকে দেখেছি 

সূর্যের উদয় 

 

 

ক্যানভাস


 ততটুকুই হলদে যতটুকু প্রয়োজন

 সরষে ফুলের পাপড়িতে

 বাকিটুকু বিড়ির ধোঁয়া  

 কপালের লবণাক্ত সাগর

 পায়ের ক্ষত থেকে নির্গত পুঁজ

 

একটি আকাশ

রঙ বলতে ভাবনার এলোমেলো

সূর্যকে ঠোঁটে নিয়ে কাক দাঁড়িয়ে আছে

মাপছে নাকি সূর্য্যর ওজন 

নয়তো ততটুকুই স্থির মাধ্যকর্ষণ

 

একটি গ্রাম

গ্রাম নয় সঠিক বলতে একটি কঙ্কাল

উনোনে জাঁকা দিয়ে পাহারা দিচ্ছে  

খসে পড়া নিজেদের হাড়

ঠোঁটদুটি নিথর হয়ে পড়ে আছে

যেনো মূর্ছ যাওয়া একগুচ্ছ কথার ফুল

 

দ্রুত পায়ে পলায়নরত গর্ভিণীর পদতলে

ডুবে গেলো

অসুস্থ বাউলের শিশু-ভোলানো ছড়া

শ্রোতা নেইপিঠে দেওয়ার নেই ভরসার হাত

 

বাতাসে উড়িয়ে দিল স্মৃতির পৃষ্ঠা

মাঝপথে মাগরিবের আজান

গো-পালকের ঘর ফেরত ধুলোর সাথে ঘরে এলো

চোখের জলে ভেজা পদধ্বনি

দীর্ঘ শোভাযাত্রার সাথে 

কফিনে ফুলে ওঠা সরিষা ফুলের শরীর 

 

মাটিতে জন্মে না বাড়ে না সান্তনার গাছ

চাঁদ বাজায় না শুনে না ভুবনভুলানো গান

এত রঙ থাকতেও কেন এই

আঁধারের ছবি

অসুস্থ মেঘের পথ দিয়ে বেরোতেই

যাকে দাঁত দিয়ে পরখ করতে

হাত পেতে নেয় 

সেই কথা ধান নয় ধানের অপুষ্ট দানা 

 

কতটা শুকনো হলে ঢেঁকিতে

কুটতে পারে ধান ভেবে ধানের অপুষ্ট দানাকে

হাড়িত রাখতে পারে চাল ভেবে পাথরকে

উনোনে জ্বালাতে পারে কাঠ ভেবে নিজের

হাত-পা

কতটা যন্ত্রণা পেলে মানুষে গিলে বসে থাকে নদী

 

কেবল নীরব

ক্যানভাস পৃথিবী

 

আগন্তুক


টি শার্টে বেলিফুলের বাগান

উপরে হলদে মাখা আকাশ 

 

কি যে ঝকমকে ঝলমলে ফুলগুলি 

অশ্রুতে হাবুডুবু হয়ে নেতিয়ে পড়ে 

 

স্বপ্নপুরীর উঠোনে

শস্য বিহীন মাঠের হেমন্ত 

 

শিকড়ের গভীরতায় শুকিয়ে গেলো

জিভের নীচে বয়ে চলা নদী 

 

ঠোঁটের তিল এঁকে দিল নুনতো চুম্বন 

 

সুফীবাদের মাথা দিয়ে

তাসপাতার মেমসাহেব চলে যায় টগবগে ঘোড়ায় 

খট খট খট....

 

 পায়ের গোড়ালিতে মাটির সুগন্ধী ! 

 

চোখের বালুচরে ছটফট করে

দোয়েলপাখির গোধূলি বন্দনা 

 

একটি পৌরাণিক ক্লাবঘরের মগজে

বহন করতে ক্লান্ত না হওয়া অভিজ্ঞতা 

হাই-হিচকি তুলে...

 

নাভিতে পোনামাছের গন্ধ

স্বাদে রসায়নবাদের মূর্ছিত সঙ্গীত 

 

মদিরাতে গোলাপ

কণ্ঠে গজল

মজলিশে বুকের তাজা মাংস 

 

ভালোবাসার একসাগর ঢেউয়ে ঢেউয়ে

বিলাসী যৌবন 

 

মুখে আখাইর মতো ফুটে বিরহ রবীন্দ্রনাথ 

 

... এতেও হলো না গৃহবন্ধী

আগন্তুক বনে-জংঘলে হলো আদিম মানুষ 

 

 

জলকুমারের কথা 


উথলে উঠলো সাগর

সাগরের জোয়ার

চোখ পুড়ে ছাই হলো

গলায় জমা হলো বরফ 

 

দুপুরের আকাশে সূর্য হারালো 

 

তুলসী পাতার  হাত-পা পুরে গেলো

পাখীর বাসায় আগুন লাগলো

আত্মীয়রা ভোজসভায় খেতে শুরু করলো

আত্মীয়দের হৃদয় পুড়িয়ে 

 

একদল শিশুদের স্থিরচিত্র শান্ত মনে রাস্তায় চলেছে

বাতাসে গুনগুন করছে  মায়ের দুঃখের গান

 

শেষে খুলে গেলো প্রবেশদ্বার

 

কাগুজে- পত্রে খবর এলো 

রক্তে ভিজে গেছে চাঁদ 

পথে পথে মোমবাতির সমদল 

 

হলুদ বৃষ্টি ঝরে 

ঠোঁটের বাঁশি শীতে কাঁপে 

 

পথের সীমান্তে ফলক ঝুলে দিলেন  

পাথরের শরীরে লিখে দিলেন বুদ্ধের বাণী 

বাণীগুলো শেওলা হয়ে জন্মালো 

 

ছায়াটির কতকাল হলো মৃত্যু হয়েছে

 

জলের দর্পনে মুখ দেখে ভাবি 

আমি বেঁচে আছি!



Post a Comment

1 Comments

  1. মিণ্টুল হাজরিকা একজন ভালোমানের তরুন কবি। উনাকে আমি চিনি। লগ হয়েছিল একবার। তিন দিন উনার সাথে ছিলাম।

    ReplyDelete