প্রায় ২০ বছর পরের ঘটনা । জংলীপাহাড়ি গ্রামে আজ সাজো সাজো রব। স্থানীয় সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি কলেজে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এবারের সংবর্ধনার প্রাপক অনাথ আশ্রমের সকলের মা ঝিমলি হাঁসদা। ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর রাইকিশোরী দেবীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে নিতে ঝিমলি দেবীর দু'চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল।
সেই কালো রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। তখন আর কত বয়স? ঝিমলির বড়জোড় ১৭/১৮ হবে। স্থানীয় চার্চ-এর উদ্যোগে সেন্ট জোসেফ স্কুল সবেমাত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তরুণ শিক্ষকদের একজন সৌম্যকান্তি রজত জোয়ারদার। রজতের সাথে ঝিমলির বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগেনি। বসন্তের দোলোৎসবে মহুয়ার নেশায় কখন যে দুজন দুজনের কাছে সমর্পণ করেছিল,সে এক মধুর স্মৃতি।
কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। খবর এলো রজতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি হয়েছে। রজত ঝিমলিকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল। 'তোমাকে এসে আমি নিয়ে যাব'।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। রজতের কোনো খবর নেই। প্রকৃতির নিয়মে ঝিমলির শরীরের পরিবর্তন গ্রামবাসীদের কাছে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গ্রামের মুরুব্বিরা এই অবৈধ সন্তানকে মেনে নেবেনা। ঝিমলি তাই আঁধার রাতে ছুটে চলেছে খরস্রোতা পাহাড়ি নদীটির দিকে। তবে কি সে চিরতরে হারিয়ে যাবে, না তা কখনই নয়।
তারপর কি হয়েছিল । এখন কিছুই মনে নেই ঝিমলির। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখতে পেল হাসপাতালে ভর্তি। শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে ফাদার, বুধন এবং ডাক্তার।
ফাদার বললেন, বুধন তোকে বাঁচিয়েছে। তোর একটা কন্যা সন্তান হয়েছে। সবার অগোচরে আমার অনাথ আশ্রমে সে মানুষ হবে। তুই হবি সকলের মা।
করতালির শব্দে ঝিমলিদেবী সম্মিত ফিরে পেলেন। ইতিমধ্যে ফাদারের বক্তব্য শেষ হয়েছে। পরবর্তী বক্তা হিসাবে ডায়াসে উঠলেন সদর থেকে আসা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অফিসার। বক্তব্য দিতে গিয়ে উনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
'ক্ষমা করো, ঝিমলি। আমিই তোমার দুর্ভাগ্যবান স্বামী রজত জোয়ারদার।
কোনদিন জানতে পারিনি আমার ঔরসে তোমার চাঁদের মত একটি মেয়ে হয়েছে। ফাদারের কাছ থেকে সবকিছু জেনেছি। যার হাত থেকে তুমি পুরস্কার নিলে সেই রাইকিশোরীই আমাদের সন্তান।'
ঝিমলিদেবী আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলেন না। চেয়ার থেকে উঠে এসে রজতবাবু ও রাইকিশোরীকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
এই লেখকের আরও লেখা...
0 Comments