দ্যাখা–অদ্যাখা কাব্য ১
আমি চাই,
তোমার সাথে কোথাও কখনোই আমার দেখা না হউক।
আমি চাই, প্রাণপণে চাই।
তাই এড়িয়ে যাই, তোমার হাটা পথ।
এড়িয়ে যাই পরীবাগ, মালিবাগ, বাসাবো এবং ছায়াবীথি।
এড়িয়ে যাই প্রাণের শহরটাও।
এখন বুঝবেনা তুমি,
যে তুমি ভালোবাসা মাড়িয়ে হেটে গ্যাছো
যে তুমি অস্বীকার করে পালিয়েছো ভালোবাসা থেকে
যে তোমায় ইতিহাস মনে রাখবে হত্যাকারী, ভালোবাসার!
সেই তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই।
তুমি আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী ভালোবাসার।
বন্দীত্ব তোমার সোনার খাচায় আর কৌশলী ভিড়ে।
আমি চাই,
তোমার সাথে এ জন্মে আমার আর দ্যাখা না হউক।
আমি চাই,
আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।
আমি চাই একবার,
এককাপ ধোয়া ওঠা চায়ের কাপে,
চোখে চোখ রাখা আমার-তোমার দ্যাখা হউক।
আমি চাই একবার,
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে দ্যাখে নাও
আমি তোমাকে, আমার চোখে তোমাকে কিভাবে দ্যাখি?
একবার দ্যাখা উচিত তোমার।
মিথ্যা ঠাস-বুনটের শহরে আমি চাই, একবার
আমার সাথে তোমার দ্যাখা হয়ে যাক।
আমি শুনতে চাই আমার তুমি কি বলো আমায়?
আমি দ্যাখাতে চাই তোমায়, আমার অস্তিত্ব।
আমার জন্ম-মৃত্যুর পরিসংখ্যান,
আমার প্রতিমুহুর্তে হারিয়ে ফেলা নি:শ্বাস,
আমার বেগুনি পদ্ম, তোমার রং মেশানো সত্য।
আমার সান্ধ্যকালীন ফটোগ্রাফ কি বলে তোমায়?
আমি চাই, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খুব করে চাই।
আমি চাই,
তোমার সাথে আমার দ্যাখা না হউক।
আমি চাই,
আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।
দ্যাখা-অদ্যাখা কাব্যের শেষ হউক, অন্তত।
দ্যাখা–অদ্যাখা কাব্য ২
এক ক্ষয়িষ্ণু শহরের ইট-পাথরে ঘষে ঘষে
বুকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হৃদয় আর দেয়ালে ভর দেয়া কথাগুলো;
যা বলা হয়নি তোমায়।
তা পাশে নিয়ে বসে বসে দ্যাখছি,
আত্মবিধ্বংসী খেলায় মত্ত আমি দুচোখ ভরে দ্যাখছি
বিলবোর্ড ভালোবাসার শহর তোমার।
কত উজ্জ্বলতা, কত আত্মপ্রবঞ্চক হাসি নিয়ে,
সুখ সুখ হাসি মুখ নামক বিজ্ঞাপন চিত্রে তুমি, ফেইড ইন অর আউট।
ঝুলে আছো ভালোবাসা কটাক্ষ করে!
তাই আমি চাই,
হ্যাঁ, আমি চাই
তোমার সাথে কখনওই আমার দ্যাখা না হউক!
হ্যাঁ, আমি চাই অন্তত একবার মিথ্যে করে হলেও তোমার সাথে, তোমার দ্যাখা হউক!
আমি চাই আমাদের অদেখা অথচ খুব চেনা দেবদারু-রাধাচূড়ার
সারিসারি ছায়ায়, এক নিয়তি নির্ভর জেব্রাক্রসিং এ
কিংবা কোনও রাস্তায় কবিতাময় লিফলেটে,
অথবা কোনও এক ২৩শে পরীবাগের কোণায়;
আমার যে তুমি,
কেবলই আমার যে তুমি,
আমার সাথে সেই তোমার দ্যাখা হয়ে যাক.....
দ্যাখা - অদ্যাখা কাব্য ৩
রিকশা কিংবা বিছানার বাম পাশটায়
অথবা হৃদয়ের বাম-অলিন্দে একটা অসহ্য শূন্যস্থান;
আশ্চর্য শুন্যস্থান নিয়ে পরিব্রাজক আমি।
বেঁচে থাকি নিঃশ্বাস নেই এই যোনীবাহিত পৃথিবীতে।
অদ্ভুত নষ্টালজিক কিছু শব্দের হাহাকারে আমার ঘুম আসেনা।
তুমিহীন তুমিময়তার সেই শুন্যস্থান হিলিয়ামে পূর্ণ কানায় কানায়
- হাইড্রোজেনের দুই জোকার উড়ে যাওয়া
সাংকেতিক পানির
উপচে পড়া ঢেউ নিয়ে তাই
রিকশাটাকে নদী ভেবে
রাস্তায় হাটি আমি,
বিছানাটার সমুদ্র হয়ে ওঠা দ্যাখতে দ্যাখতে
একটা নিস্তব্ধতার একাকীত্বে গোল হয়ে বসে থাকি
পাশের বারান্দায়।
অপেক্ষা আর অপেক্ষায় কাটে আমার সোয়া দুই বছর!
ছুটি থেকে ছুটি নেয়া হয়না আমার,
দেয়া হয়না এক দেয়াশলাই বক্সে–ভালোবাসা মসলিন।
আমি চাই
তাই আমি চাই তোমার যে তুমি;
তার সাথে আমার; কখনওই যাতে দ্যাখা না হয়।
তোমার; তোমার সাথে আমার দ্যাখা সেতো ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যে এক নিগৃহীত বাংলার ইতিহাস!
তাই এই আমি চাই,
খুব করে চাই এই স্বাধীন বাংলায় আমার যে তুমি
সেই সন্ধ্যের ডুবে যাওয়া আকাশে লাল শাড়ি ছোট্ট লাল টিপে
ছাদে দাড়িয়ে
আমায় খোঁজায় ব্যস্ত যে অস্থির তুমি
সেই তোমার সাথে আমার দ্যাখা হউক,আবার।
আবার,
রিকশার বায়ে বসো তুমি, বিছানার বায়ে শুয়ে পড়ো।
আমি পাশে বসে আংগুল ছুই আংগুলে,
ছুয়ে দেই তোমার ঠোঁটের তিল আমার নিঃশ্বাসে,
সরিয়ে এলো মেঘ–চুমু আকি কপালে তোমার,
কিছু শব্দে আবার কিছু কথা হউক,
হউক লেখা একটা কবিতা
আবার দ্যাখার পর হউক ফুচকাতে ভর করা এক সন্ধ্যে।
একটা পায়ে হাটা পথে গোলাপ ফুটুক; আবার।
একটা ছবি হউক ভোরের,
একটা ঘর হউক আমাদের; ছোট্ট এক ঘর।
তোমার আমার মাঝে ছোট্ট একটা বালিশ হউক,
ছোট্ট এক আংগুল আধোবোলে বাধুক আমাদের।
তারপর ঠিক ৪৭ বছর পর আমি মরে যাই তোমার ঠোঁটে...
৪৭ বছর পরবর্তী মৃত্যুর আগে
ভালোবাসা-বাসি সংসারের জন্য হলেও আমার
- তোমার আমার সাথে দ্যাখা হউক অথবা হয়ে যাক।
1 Comments
দোদুল্যমান এই অবস্থা, না পাওয়ার থেকেও বেশি কষ্ট দেয়। কবির জন্য শুভকামনা। মুদ্রাক্ষরিকের আরেকটু সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।
ReplyDelete