মঙ্গলেশ ডবরালের কবিতা ।। অনুবাদ ।। রাখি সরদার

মঙ্গলেশ ডবরাল হিন্দি সাহিত্যের স্বনামধন্য কবি। তিনি উত্তরাখণ্ডের টিহরী গারওয়াল পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কাফলপানীতে ১৯৪৮ সালের ৯ মে জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক হিন্দি কবিতায় মঙ্গলেশ ডবরাল তাৎপর্য পূর্ণ নাম। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। একদিকে যেমন বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদনা (জনসত্তা, অমৃত প্রভাত, হিন্দি মাসিক পত্রিকাপাবলিক এজেণ্ডাইত্যাদি) করেছেন পাশাপাশি পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ভারতের ‘ন্যাশনাল বুক ট্রাষ্ট’ এর। কবি মঙ্গলেশ হিন্দু পেট্রিয়ট, ভারত ভবন, প্রতিপক্ষ ও আরও বেশ কিছু পত্রিকাতে কাজ করেছেন। 

তিনি পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন কবিতায় সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের  চিত্র স্পষ্ট হয়ে  উঠেছে। পাহাড় পর লালটেন, ঘর কা রাস্তা, হাম যো দেখতে হ্যায় তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তিনি ২০০০ সালে হাম যো দেখতে হ্যাঁয় কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার-এ সম্মানিত হন। হিন্দি সাহিত্যের জনপ্রিয় এই কবি ২০২০ সালের ৯ই ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। হিন্দি থেকে বাংলায় তাঁর কয়েকটি কবিতার অনুবাদ করেছেন রাখি সরদার। 

প্রেম

কোনো একজন প্রসিদ্ধ ধর্মজ্ঞানী 

আমাকে বলেছিলেন– 

প্রেম একটি ভারি পাথর স্বরূপ

যার ভার বহন করা তোমার মতো দুর্বল হৃদয়ের

সাধ্য কোথায়!

 

আমি ভেবেছি, 

সেই পাথরকে খণ্ড খণ্ড করে ধারণ করব

 

কিন্তু এভাবে কী প্রেম পাওয়া যায়!

তখন তা হবে প্রেমের বিনাশ!

   

রুটি ও কবিতা 

যে রুটি  তৈরি করে, সে কবিতা লেখে না

যে কবিতা লেখে সে রুটি বানায় না 

দু’জনের কাজের মধ্যে কোনো সম্পর্কও দেখি না।

 

কিন্তু কথাটা হল

যখন কেউ রুটি খায় মনে হয় কবিতা পড়ছে 

আর কেউ কবিতা পড়লে মনে হয় রুটি খাচ্ছে।

 

টর্চ 

আমার ছেলেবেলায়

একবার আমার বাবা সুদর্শন একটি টর্চ এনেছিলেন,

যার গোলাকৃতি কাচের কাঠামোটি হাল আমলের

গাড়ির হেডলাইটের মতো।

 

তখন আমাদের ওখানে ওই টর্চটা ছিল 

আলোকসজ্জার প্রথম যন্ত্র 

যার অপূর্ব দীপ্তিতে রাত্রির অন্ধকার সরে গিয়ে

উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠত।

 

এক সকালে আমার এক প্রতিবেশিনী ঠাকুমা

বাবাকে বললেন–ওহে ছেলে, ওই যন্ত্র থেকে 

 উনুন জ্বালানোর জন্য কিছুটা আগুন দিয়ে দাও …

 

বাবা হাসতে হাসতে বললেন–কাকিমা, 

এতে আগুন থাকেনা, শুধুমাত্র আলোর জ্যোতি থাকে,

যা রাত্রি হলে জ্বালতে হয় এবং অন্ধকার পাহাড়ি অঞ্চলের 

 উঁচু–নীচু পথ পরিষ্কার দেখা যায় 

 

ঠাকুমা শুনে বললেন–ছেলে,

এই আলোর জ্যোতির সাথে যদি কিছুটা আগুন থাকতো

তো খুবই ভাল হতো 

 

আমাকে রাতদিন উনুন ধরানোর জন্য চিন্তা করতে হয়। 

গৃহস্থ মানুষের কাছে রাত্রিবেলায় উজ্জ্বল আলোর

কিই বা প্রয়োজন 

 

ধনবান মানুষেরই অন্ধকারে আলোর প্রয়োজন।

 

ঠাকুমার কথায় বাবা কিছু বলতে পারেন না 

কিছুক্ষণ নীরব থাকেন …

 

এতবছর পর স্মৃতিময় সেই ঘটনা,

টর্চের ন্যায় আলোর দ্যুতি, আগুন প্রার্থনাকারী ঠাকুমা

এবং বাবার নীরবতা প্রবাহিত হয়ে চলেছে আমাদের সময়ের  

কবিতায় এবং উহার অপ্রীতিকর অবস্থার ভিতর … 


Post a Comment

7 Comments

  1. ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ নেবেন

      Delete
  2. 'ভালোলাগা' রইল। মূল কবিতাগুলি পাশাপাশি থাকলে
    বোধ হয় সুবিধা হত পাঠকের।
    . -----চন্দ্রনাথ শেঠ

    ReplyDelete
    Replies
    1. যথাযথ বলেছ দাদা

      Delete
  3. মূল কবিতাগুলি পড়া ছিল। তাই এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য অনুবাদে মূল রচনার ভাব
    সম্পূর্ন অপরিবর্তিত ভাবে বজায় রেখে কবি রাখী সরদার বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে খুব মূল্যবান সার্থক সংযোজন করলেন।
    খুব ভাল লাগল তিনটি কবিতাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক অনেক ধন্যবাদ

      Delete
  4. তিনটি কবিতাই সুন্দর।বার্তাবহ।স্বচ্ছন অনুবাদ।যেন মৌলিক কবিতা পড়ছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
    —যযাতি দেবল, পানাগড়, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।

    ReplyDelete