আপনাকে, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙ
স্বেচ্ছায় শাড়ি খুলে শ্রীমতি কাদম্বরী আমার মুখের ভেতর পুরে দিলো
তাঁর অহঙ্কারি দুধের বোঁটা। দুপা ফাঁক ক’রে ঊরুসন্ধি দেখিয়ে বললো,
‘ও নব্য ঠাকুর পো, এ শরীর তোমারও।’
আমি মুসলমানের পোলা, আমার ঘেন্না হলো। তবু আমি কাদম্বরীর
সাথে রতিক্রিয়া সম্পন্ন করলাম। আর, এখন আমার মনে পড়ছে, রতিক্রিয়ার
সময় কাদম্বরী বউঠান ‘আঁ আঁ’-র বদলে ‘রবি রবি’ ব’লে অস্ফুট স্বরে গোঙাচ্ছিলো।
এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে; নারীর শরীরকে মনে হচ্ছে ঘিঞ্জি-শিল্প-গলি।
এইখানে দাঁড়িয়ে আমি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বাবু না কি রবীন্দ্রনাথ-
কার কাছে ক্ষমা চাইবো?
আন্টির সাথে ক্লাইমেক্স
‘ছাদে গিয়ে পৃথিবী দেখবে, চলো।’ বললো,
তিন তলার আন্টি। আমি শান্তি কুটিরের ছয়
তলায় থাকি। বললাম, ‘অ্যাঁ! পৃথিবী!’ পানির
টাঙ্কির পেছনে দাঁড়িয়ে খাঁ খাঁ রোদ্দুর ও নির্জনতা
ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আন্টি শরীর
দেখিয়ে বলে, ‘দ্যাখ্ বান্দর!’ আমি দেখি একটা
ডাবল ডেকার বাস আমাকে থেতলে যায়।
রাস্তা
মেয়েটা চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে।
সে জানে, আকাশ দেখতে হ’লে
এইভাবে শুতে হয়।
ওর দিকে ওভাবে তাকিয়ো না। ও থাক,
কিছুকাল ওভাবেই শুয়ে থাক। ইচ্ছে যাকে,
তাকে নিয়ে রগড় করুক।
-বজ্রবিদ্যুৎ গায়ে মেখে ফিরে সে
আসবেই। তারপর, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে
সমুদ্রে পাড়ে হাওয়া খাবে।
তোমাদের সমুদ্র দেখা শেষ হ’লে
তুমি ওর হাত ধ’রে রাস্তাটা
পার ক’রে দিয়ো।
মুরসালীন কায়কাউস
শোনা যায়, উনি ধর্ণাঢ্য কৃষক পরিবারের সন্তান। ওনার বাপ পুঁথি পাঠক
এবং বিশিষ্ট সৌখিনদার ছিলেন। এবং একসময় সীমাহীন দারিদ্র্যে ভূপতিত
হয়ে অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর উনি অপরিসীম স্ট্রাগল করেন
এবং তহুরা বানুকে বিবাহ করেন। আর এই যে আমাকে দেখছেন, কাউরে পুছি
না, আমি ওনারই ছেলে। আমি ওনাকে জগতের সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষ মনে করি।
ব্যর্থ মানুষের উচিৎ আত্মজীবনী লেখা। উনি আত্মজীবনী লিখতে পারবেন বলে
মনে হয় না। উনি গভর্মেন্টের চাকরি করে সংসার চালান এবং ওনার নাম
মুরসালীন কায়কাউস।
শিশু
সন্ধে ৭টার বুকে হাত রাখলেই আমি অসভ্য। অথচ, দুপুর দুটোয় মগবাজার ওভারব্রিজ পা ফাঁক ক’রে নামাজে বসেছে। আর এই দৃশ্যের ওপর, রূপবতী বিধবা একটি কাক হিসহিস করে খসিয়ে দিলে জল শহরে প্লাবন হলো। সেই প্লাবন-মহিমায় ভেসে গেলো ভ্রুণ-হত্যার মতো বিশুদ্ধ পাপ ও পঙ্কিলতা। এখন, নারীর মনের ভেতর যে যৌন-খোলস আমাকে ধারণ করতে চায় আমি তাকে ল্যাওড়া দেখিয়ে অবজ্ঞা করি আর ভাবি এবার পুরুষকে জড়িয়ে আমি একটানা তিনদিন ঘুমোবো এবং পুরুষের সাথেই সঙ্গমে জন্ম দিবো এক অদ্ভূত শিশু। সেই শিশু না নারী, না পুরুষ, না হিজড়া, সেই শিশু কেবলই শিশু আর ধর্মীয় গল্পের ঈশ্বরের মতো পরাক্রমশালী। সে পুরুষকে চাপকাবে, নারীকে চাপকাবে, হিজড়াকে চাপকাবে। আর সে নিজেই নিজের সাথে যৌন সঙ্গমে জন্ম দেবে ভোর ও লালিমা। ‘শুয়োরের বাচ্চা’ ব’লে শিশুটিকে গাল দেবে কেরানি আর অধ্যাপক। তখন সিভিল সোসাইটির মা-কে চুদে শিশুটিও মুতবে ব’লে প্রকাশ্য রাস্তায় মেশিনম্যানের মতো দাঁড়িয়ে যাবে আর ঘেন্না করবে জীর্ণ-চেতনার যোনি ও যৌনতা অর্থাৎ এইসব মানব-সমাজ, যেইখানে কেরানি আর অধ্যাপক গৃহের গুহার ভেতর স্ব স্ব বউ চুদে চুদে বাচ্চা বানায় আর সেই বাচ্চাকে সন্তান অ্যাখ্যা দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠায় এবং তাদেরই মতো কেরানি আর অধ্যাপক বানায়।
সহমরণের প্রস্তাবনা
চলো, মর্গে শুয়ে থাকি।
একটি দিন মৃত্যুর অভিনয় করি।
ওই তো তেতো প্রৌঢ় নিমগাছ।
কী সুন্দর ছিমছাম রাজবাড়ি মর্গটাকে দ্যাখো, সুধা। দ্যাখো, হেঁটে যাচ্ছে প্রিয়ব্রত ডোম
চলো, ম’রে যাই। প্রিয়ব্রত আমাদের
ফেঁড়ে-কেটে সেলাই করুক। আর, মৃত্যুর যন্ত্রণায়
আমরা একসাথে ছটফট করি
গ্রাসরুট ক্যাফে
এক কোটি বছর পর দেখা হ’লে, সুধা, গ্রাসরুটে বসবো আমরা। কফিতে চুমুক দেবো গল্প করবো আর পরস্পরের দিকে চেয়ে রবো দীর্ঘ সময়,
আমরা দেখবো, আমাদের চোখের ভেতর
সমুদ্র, নোনাজল, ঢেউ,
সমুদ্রে, নোনাজলে, ঢেউয়ে, আমরা বেদনা ভাসিয়ে দেবো
প্রেম ব’লে কিছু নেই
প্রেম ব’লে কিছু নেই, সুধা; ছিলো না কখনও।
এই যে বিযুক্ত হলাম আমরা; এবং তুমি পুনরায় ফিরে গেলে
লম্পট পুরুষের বুকে, এবং আমি ছলনাময়ী নারীর কাছে,
এই তো প্রেম! এই হচ্ছে আমাদের রক্তের সুর ও আকাঙক্ষা
পাহাড়ে, মুণ্ডুহীন এক নারী ক্রমাগত বাজিয়ে চলেছে বেহালা।
আর সে কাঁদছে। আর আমরা বিচ্ছেদের গান গাইতে গাইতে
যে যার মতো চ’লে যাচ্ছি আকাশ ও সমুদ্রের দিকে,
গুহা যুগে ফিরে যাবো; সুধা
গুহা যুগে ফিরে যাবো; সুধা
ভালো লাগছে না এই আলো।
আহারে অরুচি আমার। সঙ্গমে ক্লান্ত
শরীরের আবরণ খুলে ফিরে যাবো অরণ্যে,
আদি পৃথিবীতে।
পশুতে পরিণত হবো। পশুদের পবিত্র হৃদয়
প্রেমে ও পারমানবিকে, তোমরা, এইখানে
ভালো থেকো, প্রিয়তমা, অসুস্থ-বিজ্ঞানে,
বন্ধু
বহুদিন পর দেখা। বসলে হৃদয়ের পাশে। সেখানে নারী,
প্রতিভা আর খ্যাতি আমি সাজিয়ে রেখেছিলাম।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে তুমি বলছিলে, একটা বন্দুক
কিনেছো। এখন প্রায়শই পাখির মাংস মেখে ভাত খাও।
অক্টোবর থেকে ঘিয়ের ব্যবসা করবে।
কফি শেষ হ’লে বুকে বুক মিলিয়ে বিদায় নিলে। তোমার
বিদায়ের পর কী এক বোটকা গন্ধে ভ’রে উঠলো আমার
চারপাশ। বাসায় ফিরে দেখলাম আমার নারীকে তুমি জিভ
দিয়ে চেটেছো। প্রতিভাকে চাকু মেরেছো। আর খ্যাতি চুম্বন
করতে গিয়ে প’ড়ে গ্যাছো ভাগাড়ে। কেউ তোমাকে টেনে
তুলছে না সেই দুর্গন্ধময় পুঁজের নর্দমা থেকে। তুমি বাঁচাও
বাঁচাও ব’লে চিৎকার করছো।
আমার মায়া হ’লো। বন্ধু, হাত বাড়ালাম। উঠে এসো। আমার
খ্যাতি, প্রতিভা ও নারী এসব তোমারই। নিয়ে যাও।
এত্তেকাফ
গোল্লায় যেতে যেতে আমি তোমার কাছে
গেলাম। অথচ বাবা আমাকে মসজিদে
যেতে বলেছিলো। আমি আল আকসার গম্বুজ
দেখেছি। আমি জানি, তোমার স্তনের সৌন্দর্য
থেকে মোল্লারা চুরি ক’রে নিয়ে গ্যাছে গম্বুজের
ধারণা। তুমি যাই বলো, আমি বিড়ি খেতে খেতে
হাত রাখি প্যান্টের জিপারে। ভয় নেই, আমি
তোমার ভেতর অনন্ত এত্তেকাফে বসতে চাই।
হাতি বিষয়ক কর্মশালা
আমার যে বন্ধু তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে হাতির বাচ্চা গিফট করতে
চেয়েছিলো সে এখন কুর্মিটোলায় ভেড়া চড়ায়। তাঁর সৌভাগ্য
এই, আমি তাঁকে ভেড়ার মাহুত ব’লে ডাকি।
আর, দি লায়ন সার্কাসে আমি যে হাতিটিকে ফুটবল খেলতে
দেখেছিলাম সে কিন্তু কালোমানিকের নাম কখনও শোনে নি।
ম্যারাদোনা সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা ছিলো না। তাকে
কেবল কলাগাছ বিষয়ক ধারণার ভেতর ডুবে থাকতেই দেখা যেতো।
এ কথা সত্য, ম’রে যাওয়া হাতি আমি কখনও দেখি নি। অথচ
বরই গাছের নিচ দিয়ে যেতে হাতিও ভূতের ভয় পায়।
আমি, এলিফ্যান্ট রোডে ইতোপূর্বে বাঘের দুধের চা খেয়েছি।
এবার গেলে হাতির দুধের চা খাবো নিশ্চই।
বোধিসত্তার বাঘ সাপ ও প্রেমিক
আমার ভেতরের দোর্দণ্ড প্রতাপী বাঘ, আমার ভেতরের হিংসার
লিকলিকে সাপ, আর আমার ভেতরের কাঙাল প্রেমিক,
আমাকে ছিন্নভিন্ন ক’রে ছুটে যাচ্ছে তিনটি স্বপ্নময় আক্রোশ
আকাঙ্ক্ষার দিক, ছুটে যাচ্ছে যে যার নিজস্ব গন্তব্যের পথে।
বনের গহীন জঙ্গলের দিকে গ্যালো আমার ভেতরের দোর্দণ্ড
প্রতাপী বাঘ। অন্ধকারের কালো সুড়ঙ্গের দিকে গ্যালো আমার
ভেতরের হিংসার লিকলিকে সাপ। আর আমার ভেতরের
কাঙাল প্রেমিক, সে কেবল তোমার মুখের সৌরকরোজ্জ্বল
পথের দিকে এক আশ্চর্য সরল পদক্ষেপে ছুটে গ্যালো।
বাঘটি তার কাঙ্ক্ষিত শিকার পেলো। সাপটি তার ছোবলে
পরিতৃপ্ত। কিন্তু প্রেমিক চৌরাস্তার মোড়ে তোমাকে পুজো
দিয়েও ব্যর্থ হলো।
—আর ব্যর্থ প্রেমিকের আত্মহত্যার ভেতর বেজে ওঠে বিষাদের
বিপন্ন সাইরেন।
রাষ্ট্রবিরোধী গিটার
কার্তিক মাস এখনও আসে
নি। রাজপথে কুকুরের চোদাচুদি
তবু মামুলি ব্যাপার। আর আমরা
চুদতে গেলেই যতো দোষ! রাষ্ট্রীয়
অন্ধকার এসে চারদিকে ঘোৎ ঘোৎ
করে। জারি হয় রুল। সান্ধ্য-আইন।
প্রেসিডেন্ট, এতো পারো কুকুরের
চোদাচুদি থামাও দেখি!
অসুস্থ ইন্ডাস্ট্রি
এপাশ ফিরলে জীবনের চোদন
ওপাশ ফিরলে শিল্পের;
সোজা হ’য়ে শুয়ে দেখলাম কাজ হয় না।
পৃথিবী এক অসুস্থ ইন্ডাস্ট্রি; আমরা
তার উৎপাদিত বিষাদ।
প্রেমিকা
আমাকে বহুবার প্রেমিকা বদল করতে হয়েছে। বিশ্বাস করুন,
আমি অন্যায় কিছু করি নি। আমার প্রেমিকা বদলে অন্যায়
কিছু ছিলো না। যা ছিলো তা হচ্ছে সত্য সুন্দর আর সৌন্দর্যের
অর্চনা। আর কে না জানে বলুন, কবি মাত্রই সত্য সুন্দর আর
সৌন্দর্যের মুগ্ধ পুজারি।
যেদিন আমার জন্ম হলো সেদিনই আমি প্রথম প্রেমে পড়ি।
আমার ওই সত্য সুন্দর আর সৌন্দর্য তাঁর শাড়ির স্নিগ্ধ আঁচলে
আগলে আমাকে এই বসুমাতার কোমল মৃত্তিকায় হাঁটতে
শেখায়। আমার ওই প্রেমিকার নাম তহুরা বানু। তিনি ছিলেন
আমার মা।
শৈশবে যাঁর প্রেমে পড়ি আজ তাঁর নাম ভুলে গেছি। কিন্তু তাঁর
অপূর্ব সুন্দর মুখোশ্রী আমি ভুলি নি। কোনো প্রেমই ভুলে থাকা
অসম্ভব। মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে কিন্তু তাঁর প্রেম জেগে রবে
তাঁর হৃদয়ে। যার আভা চিরকাল জ্বলজ্বল করবে তাঁর সত্তার
ভেতর।
আমি কৈশোরে যার প্রেমে পড়ি তিনি রেহানা ম্যাডাম। আমাদের
বিদ্যালয়ের সম্মানীয়া শিক্ষয়িত্রী। তিনি যখন বাঙলা পড়াতেন
আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ওইভাবে তাকিয়ে
থাকতে থাকতেই আমার কৈশোর পেরিয়ে যায়।
বহু বিচিত্র আমার বয়ঃসন্ধি কালের প্রেম। শৈশব আর কৈশোরের
ভেতর দিয়ে আমি যখন যৌবনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত তখন আমি
বহু নারীর সংস্পর্শে আসি। ওই সব নারীর সংস্পর্শে আমার
বিকাশ। আমি আবিষ্কার করি আমাকে। আমি আবিষ্কার করি
আমার যৌবন।
আর এই যৌবনে ১৯৭১ সালের গল্প শুনে আমি এক স্নিগ্ধ শ্যামল
নারীর প্রেমে পড়ি। মহিয়সী এই নারীর সুধা পান করে আমি বাঁচি।
বিজয়ীনি এই নারীর হাসি আমার অহঙ্কার। চির সবুজ চির মহিয়ান
স্নিগ্ধ শ্যামল আমার এই প্রেমিকার নাম বাঙলাদেশ।
কালো এক বেড়ালের ছানা
এই যে কেটে যাচ্ছে সময় বিড়ি খেতে খেতে কাওলার নিসর্গে;
ট্রেনের নিতম্ব থেকে ভেসে আসছে ঘ্রাণের যাতনা; বেদনার
অনুভূতি ছড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে গ্যাব্রিয়েলের নিজস্ব বালিকারা;
আর ওলটানো নৌকোর ওপর ব’সে চাঁদকে প্রেমিকা, নদীকে
বিশ্বরোড, নারীকে রাস্তা ভাবি আমি। আমার ভাবনার ভেতর
অকস্মাৎ ঢুকে পড়ে চিৎপুরের মেঘ। আর ম’রে যাওয়া
পাখিদের রিষ্ট ও রিষ্ট আমাকে নিয়ে যায় পানশালার পায়ুতে।
সেখানে সর্প-রক্ত পানে মাঝ রাতে জেগে ওঠে যে শরীর সে
তোমার শরীরের ঘ্রাণ চায়। অথচ তোমার বুকের মধ্যে শুয়ে
থাকে কালো এক বেড়ালের ছানা।
ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ
হিস্ট্রি কাঁপানো ঘোড়ার ঠাটা বাড়ায় চুমু খেতে গিয়ে দেখি
যৌন অন্ধকার; আর সিংহাসনে ব’সে আছে মহাত্মা ঢ্যাড়শ।
ফলে, কল্পিত হাওয়ার হ্রেষা ভেসে আসে কানে; আর ১৭ নম্বর
পেজে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সেখানে, পাকা আমের মতো এক
টসটসা নারী আমাকে জাগিয়ে করে প্রকাশ্য র্যালা।
র্যালা শেষ হ’লে ভুতুড়ে কান্না শুনি। জাদুঘরের বাম পাঁজর
থেকে তুলে এনে আমি সেই কান্নাদায়গ্রস্ত ভুতুড়ে রক্ষিতাদের
প্রত্ম-মুখের-রেখা পাঠোদ্ধার করতে চাইলে তৎক্ষণাত এক দঙ্গল
কুয়াশা ঘাতকের মতো এসে আচ্ছন্ন ক’রে ফ্যালে ইতিহাসের
মানচিত্র। আর সেই মানচিত্রের ভেতর, সেই শীতরাত্রির
কঠিন আবহাওয়ার ভেতর, বিভ্রান্তি ছাড়া আমি আর কিছুই
দেখি না।
আমার পায়ের নিচে মিউজিয়ামের ফ্লোরে প’ড়ে থাকে
শতো শতো বছরের পুরোনো পুরুষের বীর্যের গুড়ো আর
জংধরা লোহার কারুকাজ।
মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের পর লিখিত কয়েকটি লাইন
সিনথির ওষ্ঠে চুমু খেলে রসে ওর গুদ ভিজে যেতো। মুখ ও
গুদের সম্পর্ক নিয়ে আমি প্রণয়ন করতে চাই একখানা ছহিহুল
কিতাব।
জীবন ও যন্ত্রণার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে এখন প্রায়ই হ্যান্ডশেক
করি টাউট বা ফালতু লোকের সাথে।
থাপড়ে দাঁত ফেলে দিয়েছি মৃত্যুর। এখন ওই হারামজাদা
অভিমানে ফিরিয়ে নিয়েছে মুখ।
একটা জীবন আমি খুচরো পয়সায় ভাঙিয়ে কিনে খাবো
সিগারেট। শব্দ ক’রে বারুদ পোড়াব। ধোঁয়া ছেড়ে হেসে
উঠবো শ্রদ্ধেয় ডক্টর সৈয়দ আল কুত্তার মতো।
‘দিনকাল ক্যামন যাচ্ছে?’—পরিচিত জনেরা শুধায়। বলি,
য্যামন যায় মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ।
আকাশ দ্যাখার মতো ভয়ানক ব্যাধিতে ভুগছি। আর শালা
বোকাচোদা দার্শনিক জীবনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পালিয়ে যায়।
কাঠঠোকরা
গাছের যৌনাঙ্গ থেকে ঠিকরে পড়া রোদ্দুরের মতো শাদা শাদা
অনুভূতির প্রচ্ছন্ন আভায় পৃথিবী লেপ্টে আছে।
সমস্ত অনুভূতিই তবে শুদ্ধ সঙ্গীত। আর খচ্চরের পায়ু পথ দিয়ে
যে ধ্বনি নির্গত হয় কখনও কখনও তাও কারও কারও মর্মে পশে যেতে
পারে ব’লে মনে হচ্ছে।
দ্যাখো, একটি নারী আকাশের দিকে নিতম্ব দিয়ে শিশ্ন গর্জনের মতো
ধেয়ে আসা সৌরঝড় প্রতিহত করছে।
এবং এইসব অশ্লীল ঘটনার মোকাবিলা করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে
সূর্যের আয়ুষ্কাল। তবু একজন কাঠঠোকরা জীবনে কতো কিউবিক কাঠ
ঠোকরায় তা হিসেবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
শখ
ঈশ্বর হ’তে চাই। অথচ ছেলেবেলায় খেলনার দোকানদার হ’তে
চেয়েছিলাম। একবার মা-র কাছে আবদার করেছিলাম একটা ট্রেন
কিনে দেবার জন্যে। হয়তো ট্রেনের চালক হ’তে চেয়েছিলাম। এখন
মনে নেই। বিষয়টি পুরোনো আর অস্পষ্ট হ’য়ে গ্যাছে।
বাবার অফিসের সামনে ছিলো একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ। কৃষ্ণচূড়া
আমার খুব প্রিয়। আমি কৃষ্ণচূড়া গাছ হ’তে চেয়েছিলাম। কোকিলের
চেয়ে কাকের কণ্ঠেই আমি মুগ্ধ হই বেশি। আর কাককেই মনে হয় শ্রেষ্ঠ
গায়ক পাখি। আমি কাকও হ’তে চেয়েছিলাম।
শখ ক’রে একবার একজন নারীকে ভালোবেসে ভেবেছিলাম, ওর
হাতে তুলে দেবো একগুচ্ছ লাল গোলাপ। কিন্তু ভালোবেসে ওই নারীটির
কাছে যেতেই মনে হ’লো ওকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করি। ধর্ষণ করতে গিয়ে
মনে হ’লো এটা কোনো বর্বরতা নয়।
অন্য আরেকবার সাবেক এক বিশ্বসুন্দরীর বিয়ে দিয়েছিলাম আমার
প্রপিতামহের লাগানো একটা বটবৃক্ষের সঙ্গে। আর ওদের বেডরুম থেকে
খুব গোপনে সরিয়ে রেখেছিলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও কনডম। যাতে
ওদের বুঝতে কষ্ট না হয় পাখিরা ওদেরই সন্তান।
মনে নেই, ক্যানো জানি একবার খুনি হ’তে চেয়েছিলাম। থ্রি নট থ্রি
হাতে বেরিয়ে পড়েছিলাম পথে। কাকে খুন করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
অকস্মাৎ দ্যাখা হ’য়ে যায় রুনা নাম্মী এক পতিতার সাথে। তাঁকে খুন
করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলি।
শখ থাকা ভালো। কিন্তু আমার শখ মুণ্ডুহীন। হতচ্ছাড়া এসব শখের
কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একবার আকাশ ছোঁয় আবার পরক্ষণে মহাকালকে
হাতের মুঠোয় বন্দী ক’রে ঢুকে যায় ইঁদুরের গর্তে।

0 Comments