ঈশ্বর কণা অথবা শূন্যমাত্রা ও অন্যান্য ।। যযাতি দেবল



।। লুকোচুরি ।। 


ওখানে কে ছিল কে জানে সে তুমি নও

নদীতে নাও ছিলনাও কি তুমি বাও!

আমাকে নাও বলে টু-কি ডেকে কোথা যাও?

 

চুপিসারে!

 

এঘর ওঘর ছেড়ে কোথায় লুকালে?

ও পাখি কোথা তুই!পাতার আড়ালে?

ও নাকি পরী নয় ভোলালে বেভুলে

 

তাহলে!

 

কেন এ বিভ্রম বারেবারে...

      

               

।। সাঁতার শেখাবে তুমি! ।। 

 

তুমিতো দিয়েছিলে কথা নির্জনে শেখাবে

                                    মোহিনী সাঁতার

মধুরঙ্ নদী হয়ে ঘাই মেরে তুলে দেবে

                                      ওষ্ঠের প্রসাদ

বলেছিলে দুজনেই প'রে থাকবো ইথারের

                                  ধ্বনিল পোশাক

কথাতো দিয়েছিলে তুমি...

সবুজ মাছের মতো বাঁধ ভাঙা সরল উচ্ছাসে

উজানের হীরেকুচি ঢেউ ঠেলে নিয়ে যাবে

                                   মৎস‍্যকন‍্যা দেশে

বলেছিলে শৃঙ্গারেই শুদ্ধ হবে ভূমি

অলীক সঙ্গম সেরে জ‍্যোৎস্নাজল প্রশিক্ষণে 

                                প্রজাপতি সাঁতার

কথাতো দিয়েছিলে তুমি সাঁতারের শেষে

                             জড়াবে আশ্লেষে

                                      ভালবেসে

ভেঙে চূরে রৌরবের রুদ্ধ দ্বারদেশ

কথা দিয়েছিলে তুমিবলেছিলে

                       একদিন নিবিড় আরতিতে

রুমাল বেড়াল হয়ে উড়ে বসবে ঘরের পাঁচিলে

রভস আনন্দ রসে নটরাজ নৃত‍্যসুখে

                      হেসে উঠবে খল খল

সরলবর্গীয় বৃক্ষগুলির ছন্দ লয় তালে...

 


।। ঈশ্বর কণা অথবা শূন্যমাত্রা ।। 

 

তারপর জানতে জানতে জানতেজানতে হয়

জানার যন্ত্রণা

খড়মচিহ্নের মাথায় পা রেখে বেমালুম উচ্চারণ

প্রেম ও ঘৃণা

 সাদা বিশ্বাস উদাসীন আশ্রয়কে কেমন বানিয়ে তোলে

বেমালুম জতুগৃহ!

হা নিষাদ!আহা মহাকাব‍্যিক স্বার্থে বলি নিষাদ!

সেই রাজন‍্য মোহ

তুলোধোনা করতে করতে বদলে যায় আমূল

জানা এবং জিজ্ঞাস‍্য!

জানতে চাওয়ার সেই যন্ত্রণা হয়তো মোহ

যদিও রহস্য!

 


।। চাতকের সুখ নিয়ে ।। 

 

ভুলে গেছ

ছিল কিছু প্রারব্ধ কাজ ঘাস ছাঁটা সুরারোপ বেহাগের

মুছে দিয়ে ঘুম ক্রিম বাসি কাজলের দাগ আশাবরী আশা

ধারাস্নান স্নিগ্ধতায় ফুল তোলারাঙাপাড় হলুদ জমিতে

টিপ নেই গলা খালি ফুল্ল সুখে ফুলের সৌরভে

ভেসে যায় ভেসে যায় সুখগুলি ভেসে ভেসে যায়

ধূপ ও দীপের মায়া ঢেলে দিলে প্রাণের আরতি

ভোলনি তো

ঝোলায় দিয়েছ ভরে মুঠোভর্তি দুঃখ খোলামকুচি

চাতকের সুখ নিয়ে বাঁচি

কাছাকাছি নেই তবু পাশে থেকে বেঁধে বেঁধে আছি...

 

 

।। পঞ্চমুখী ।। 

 

১.

রাত কাটে ভোর হয় একা একা থাকা;

এ পোড়া প্রণয়জ্বালা শুধু বুকে আঁকা।

 

২.

তুমিতো পালকিতে ছিলে সুস্মিত বদনে,

একটি কিশোর ছিল নিঃসঙ্গ নির্জনে

 

৩.

সেদিনও সকাল ছিল সহাস্য উজ্জ্বল;

নওল কিশোর একা বিষাদ সম্বল

 

৪.

যাবে?

যাও তবে;

ডানা মেলে যাও

গিয়ে বলো নাও ভালবাসা নাও

 

৫.

মিছে কথা!

তোমারও রয়েছে কিছু ব‍্যথা!

গোপনে অন্তরালে:

ভেসেছ চোখের জলে...

 


।। সঙ্গে যাবেনা? ।। 

 

এইযে হলুদ কুসুম থালাটি গোল

প্রতিদিন জাগে কী অনুরাগেসুডোল

হেসে ভেসে যায় রঙ্ বদলায়

দেখি

 

ফুল পাখি সব আপন আপন

নিজেকে মেলেছে যে যার মতন

সেটাই নিয়ম সেইতো জীবন

নাকি?

 

তোমাকে চেনাবো তারামণ্ডল উঠোনে,

প্রথম দেখবো অরুন্ধতীকে দু'জনে

স্বাতী জলকণা রাখবো ঝিনুকে টলটলে

 

তখনি শঙ্খ তখনি বাজবে মন্দ্র

হয়তো মিথ্যে নয়তো কেবল সান্ধ্য;

তবুও চলন সপ্ত ঘোড়ার গতিতে 

সঙ্গে যাবেনা?হাসবে না হীরে দ‍্যূতিতে?


 

।। খাদ ।। 

 

নাকিনারায় নয়ছুড়ে দিয়েছে খাদের গভীরে

এত দাহ! বুক পুড়ছে জ্বলে যাচ্ছে ২০৬টা হাড়

এ কি আমার পাপ! আমারই পাপের শরীরে

চেপে বসছে ভার, যন্ত্রণার দুঃসহ পাহাড়

 

আলগা হচ্ছেজঙ্ ধরছে দরজায়

জোড় খুলছে, খুলে যাচ্ছে এক একটা জোড়

উড়বে সেউড়বে বলেই ডানা ঝাপটায়

 

কোন খাদ এটা! তলিয়েছি কতটা তলায়

 


।। বাকল ।। 

 

এখনও সায়ের আছে ঘাটে নেই নিমগাছটা

জলে নেই পদ্মপাতা ধোপাদের কাপড় কাচা

                   বাবুদের চুনোট করা

পাড়ে নেই তালের সারি পলাশের বাড়াবাড়ি

সেখানেই পালপাবনে পলতেয় আগুন জ্বালে

                   বলিহারি কোটার মালী

ভাসানে চরকি কদম চাঁচরের ঝর্ণাবাজি

 

আর ওই হাজরাপুকুর বুকে তার কুয়ো কেন

পোড়াগাঁয় জলের আকাল ধরনে ভরসা ছিল

                  মনে নেই সেসব কথা

ওদিকে পালদেবেড়া বালকের ঝাঁপাই ঝোড়া

কোঁচড়ে আমেরগুঁটি ও বালক ফিরলে বুঝি

                 এত চান তাও শুকনো

গরমে এমন খেলা সেদিনের দুপুরবেলা

কখনও পেয়ারাগাছে নয়তো গোয়ালঘরে

                 জমজমাট যাত্রাপালা

ভালকোর কাদাজলে পালিয়ে দুপুর কাটে

প্রতিবার ধরা পড়ে যা ঘটার সেটাই ঘটে

                   দমাদম বাজনা পিঠে

আজকে মনের কোণে ছোটে ওই কিশোরবেলা

ছোটে সেই বেড়িরচাকা মুখোমুখি মার ধাক্কা

                 বেড়ি নয় সেটাই গাড়ি

এতবার বাকল খসে চোখে তাও আউশ বেলা?

 

 

।। ভিড় ।। 

 

ভিড়ে ডুবে যাওয়া মানে এই নয় যে

সবাই একাত্ম হয়ে আছে 

ভিড় একা করতেও পারে

 

হারিয়ে গিয়ে যেমন অনেকের মধ্যে একা

মাইকের ডাক শোনা অথবা না-শোনা

শেষমেশ পথ চিনে চিনে ফেরা

 

ভিড়েরও সৌন্দর্য আছেআছে ক্লেদ ঘৃণা

ভিড় মানে নয় শুধু মানুষের ঢল

ঘোর লাগে,বেড়ে যায় সাহসের সীমা

 

নিঝুম গাছের ভিড়ে মানুষ একাকী

অবাক আর্তি নিয়ে ধ্রুবতারা খোঁজে

ধ‍্যানে দেখে ভিড়পথ;জনস্রোত অবাক আরতি


 

।। ভাতের আর্তি ।। 


ভাত ফুটলেই তার ম ম গন্ধ আমার চেনা

পাল্টে যায় চাল ও জলের নৃত্য ভঙ্গিমা

বাতাসে খুশির মহোৎসব:

ভাত মানে একটি ধান অঙ্কুর বীজের রহস্য

হিলহিলে বাতাসে সবুজে সবুজ নাচ মেঘ ও রৌদ্রের কেলি

আহা মরি যৌবন কলরব!

থোড় আসছে থোড় ফাটবে নিশাজল পুষ্টা ধান

সোনারোদে সোনালী শরীরে স্বচ্ছন্দ আড়মোড়া

উৎসব বিহঙ্গ ও ইঁদুরের

মরাইয়ের আহ্বান শুনি ফড়েদের লালা ভেজা ঠোঁট

মিথ্যুকের কিষাণ মাণ্ডিধোঁকার টাটির ছেনালি

বাতাসে নবান্নের আর্তি গুমরে মরে...



 

Post a Comment

25 Comments

  1. দারুণ প্রত‍্যেকটি কবিতা। কবির নিজের
    জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে থাকা আটপৌড়ে গ্রাম‍্যজীবনের কথকতা। অপূর্ব সব কথামালা, পূর্বাপর চলমান সময়কে ধরে পথচলা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।

      Delete
  2. ভালো লাগলো বেশ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ বন্ধু।কিন্তু কে আপনি নাম নেই।তাই বুঝতে পারছি না।

      Delete
  3. চমৎকার।
    যযাতির কবিতা
    'ঝিনুকে রাখা স্বাতী জলক্ণা '

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।আপনার নাম দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।ভালো থাকবেন।

      Delete
  4. একগুচ্ছ অপূর্ব কবিতা। জীবনের কবিতা। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন ছন্দে এক একরকম আবহকে ফুলের মতো ফুটিয়েছ। শৈশব কৈশোর যৌবনের পরিক্রমা সেরে যেন পূর্ণতার খোঁজে যেন একটা রঙিন কথামালা। আবার পড়ার মতো। (তারাশংকর)

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়েছ দেখে ভালো লাগলো।শুভকামনা

      Delete
  5. প্রত্যেকটি কবিতা খুবই সুন্দর। আর তোমার শব্দচয়ন ও দুর্দান্ত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনন্ত শুভেচ্ছা।

      Delete
  6. অন্তহীন শুভেচ্ছা...

    ReplyDelete
  7. সুন্দর সব ক'টি কবিতা। বাস্তব থেকে সামান্য কোণে উঠে আছে কবির ভাবনা কিন্তু অসামান্য ভাবায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো লাগল আপনার মন্তব্য।কিন্তু আপনার নাম দেখতে পাচ্ছি না।নাম জানতে পারলে ভালো লাগতো।

      Delete
  8. "এতবার বাকল খসে চোখে তাও আউশ বেলা?" মারাত্মক ! বিশেষ ভালোলাগা 'ঈশ্বরকণা অথবা শূন্যমাত্রা' ও 'খাদ' । ভাষার সারল্য গভীরতাকে ধরতে সাহায্য করেছে ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানবেন।

      Delete
    2. ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানবেন।

      Delete
    3. যযাতির শুভেচ্ছা।

      Delete
  9. প্রতিটি কবিতায় সুন্দর।

    ReplyDelete
  10. দারুণ।

    ReplyDelete
  11. শুভকামনা জানবেন।কিন্তু আপনার নাম দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।নাম জানতে পারলে ভালো লাগতো।
    ―-----যযাতি দেবল

    ReplyDelete
  12. তুমি কি বই প্রকাশ করেছো! তোমার প্রত্যেকটি কবিতাই খুব ভালো লাগলো । নির্মাণ এবং শব্দ চয়ন খুব সুন্দর । এ যাবৎ অনেক কবিতা লিখেছ,এবার একটা নির্বাচিত সংকলন বের করো । অপেক্ষায় থাকলাম দেখবার আশায় ।👍👍

    ReplyDelete
    Replies
    1. নামহীন মন্তব্য তাই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে এই মন্তব্য কার!
      এটা প্রযুক্তিগত সমস্যা।
      যাইহোক এমন সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।শুভকামনা।
      ―যযাতি দেবল

      Delete
  13. কোথাও গাঢ় রঙ ঢাললে,
    কোথাও দিলে ফিকে;
    শব্দ নিয়ে খেললে তুমি
    বিভিন্ন আঙ্গিকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রেরকের নাম নেই।কিন্তু লেখা দেখে মনে হচ্ছে মাথুরীয় লেখা। ঠিক তো? শুভকামনা।
      ―যযাতি দেবল

      Delete