১
“কি করে হল এসব! কালই তো মিষ্টির দোকানে দেখলাম! দেখে তো বোঝাই যায় নি! "দীর্ঘদিনের বন্ধু বীরেন আত্মহত্যা করেছেন, পার্থ এখনও সামলে উঠতে পারেননি। চার দশকের বন্ধুত্ব। অন্যান্য বন্ধুরা এসে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন। পার্থ ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছেন। ঘটনাটা সত্যি অত্যন্ত আকস্মিক। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরই কেমন বদলে গিয়েছিলেন বীরেন। দুই ছেলে বাইরে সেটলড। আটশ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটটায় দুজনের সুখের সংসার ছিল, মাঝে মাঝে মজা করে বলতেন “প্রেম তো বুড়ো বয়সেই হয় রে! নিঃশর্ত কিন্তু গভীর! "হঠাৎ করে ত্রিশ বছরর জীবনসঙ্গিনী ছেড়ে চলে গেলেন। বীরেন যেন কক্ষচ্যুত হলেন। শেষের দিকটায় বিকেলের আড্ডায় ও খুব একটা আসতেন না। এলেও চুপ করেই থাকতেন। পার্থ চোখের জল মুছলেন। ছেলেদের খবর দেওয়া হয়েছে।আসতে তো একদিন লাগবেই। এখানে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলতে পার্থই রয়েছেন। তাই সব ব্যবস্থার দায়ভার ওনার কাঁধেই বর্তেছে।
এছাড়া বিকেলের আড্ডার গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরাও রয়েছেন। “বুঝলে হে পার্থ! তৈরি থেক! একে একে সবার পরিণতি এই রকমই হবে!”
“কিছু ভুল বলনি! আমরাও সেদিকেই এগোচ্ছি।”
এমনিতে পার্থ খুব বাস্তববাদী। বারবার বলেন “ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কেরিয়ার তৈরি করতে বিদেশে যাবে সেটা ত স্বাভাবিক। আমাদের ই উপায় বের করতে হবে। কত সখ পূরণ হয় নি সংসারের চাপে, এখন সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকা উচিত। অকারণে হতাশ হয়ে ছেলেমেয়েদের ওপর অভিমান করা আমাদের মত বয়স্কদের একটা বদ অভ্যেস।” কিন্তু এই মৃত্যুটা যেন পার্থবাবুকেও নাড়িয়ে দিয়েছে।
২
“কি হয়েছে তোমার বল তো! বীরেন দা র মৃত্যুর পর একদম বদলে গিয়েছ যে। এভাবে থাকলে হবে? স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হবে না।” পার্থ ও তনুজার একটাই ছেলে, বছর পাঁচেক ধরে ইউ এস এ থাকে। আগে বছরে দু বার আসত। বিয়ের পর সংখ্যাটা কমে একবার হয়ে গিয়েছে। আজকাল সবাই ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। সবার একটা বৃত্ত রয়েছে। কেউ তার বাইরে যেতে চায় না। আত্মীয়রা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও সম্পর্ক গুলো আলগা হয়ে এসেছে। যদিও জীবনের এ পর্যায়টিকে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছিলেন পার্থ। লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত রেখেছিলেন নিজেকে। তনুজার সাথে দাম্পত্য কে প্রতিদিন নূতন করে আবিষ্কার করে চলেছিলেন। এ বয়সে স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে ওঠে। কিন্তু হঠাৎ যদি এমন একদিন আসে যে এদের মধ্যে কেউ একজন রইল না, যে রয়ে গেল তার কাছে তো জীবন টা অত্যন্ত দুর্বিষহ হয়ে যাবে। যেমনটা ঘটে ছিল বীরেনের ক্ষেত্রে। এত কথা তনুজা কে বলতে পারে না পার্থ। গলায় বাষ্প জমে। “আমি যদি কোনদিন না থাকি, কি করে থাকবে ভেবেছ কোনদিন! “তনুজা এগিয়ে এলেন, হাত রাখলেন পার্থর কাঁধে “বীরেন দা তো পথ দেখিয়েই গিয়েছেন! তিন কুড়ি তো পেরিয়েই এসেছি, চার কুড়ির দিকে এগোচ্ছি। আমাদের কে আর কারোর দরকার নেই।জানো তো মাঝে মাঝে মনে হয় ষাটের আগেই চলে যাওয়াই ভালো। ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার দুঃখ টা পেতে হয় না!” পার্থ তনুজার হাতে হাত রাখলেন । কোন উত্তর নেই পার্থর কাছেও ।
“আমার হাতে অত টাকা নেই। তোমার আইডিয়া টা ভালো। কিন্তু এ বয়সে অত ইনভেস্ট করবে কে!”
“মনোজ, তোমরা সারা জীবন গলা শুকিয়েই মরলে, আরে টাকা নিয়ে কি স্বর্গে যাবে?” মাস খানেক মুষড়ে থাকার পর অবশেষে নিজের মেজাজে ফিরেছেন পার্থ। নিজেকে বুঝিয়েছেন পরিস্থিতির চাপে মাথা নীচু করে জীবন যাপন করা তার দ্বারা হবে না। নিজেকেই মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে। তবে বীরেনের মত করে নয়।
আপাতত পার্থ বাবু ঠিক করেছেন একটা বৃদ্ধাশ্রম করলে মন্দ হয় না। সব বয়স্ক রা সেখানে থাকবে। নিজেদের মত করে জীবন টা বাঁচবে। পায়রার খোপের মত ফ্ল্যাট গুলোতে না পচে সবাই মিলে শেষ ইনিংস টা উপভোগ করবে।বৃদ্ধাশ্রম হলেও এখানে কোন নেগেটিভ মানসিকতা থাকবে না। এখানে বৃদ্ধ বৃদ্ধা রা স্বেচ্ছায় আসবেন। এ শহরেই পার্থ র একটা পাঁচ কাঠার জমি ফাঁকা পড়ে আছে। ভেবেছিলেন ছেলের নামে করে দেবেন। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। এ জমিতেই তৈরি হবে বৃদ্ধাশ্রম। জমি তো হল কিন্ত কনস্ট্রাকশনের টাকা! সাহস করে বিকেলের আড্ডায় কথাটি পাড়লেন পার্থ। এখানে যারা আছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স সত্তরের ওপরে। ক্রাইসিস গুলোও কমন। কেউ কেউ প্রস্তাব শুনে যেমন লাফিয়ে উঠলেন, কেউ কেউ আবার বেশ নিমরাজি সেটাও দিব্যি বোঝা গেল।আবার মনোজের মত কেউ কেউ রাজি হলেও ইনভেস্টমেন্টের কথা ভেবে পিছিয়ে আসছেন। পার্থ ও নাছোড়বান্দা।তিনিও এ প্রজেক্ট টি বাস্তবায়িত করেই ছাড়বেন। কিন্তু এখনো তনুজাকে বলার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি।তনুজা এ পাগলামি সহ্য করবে বলে মনে হয় না। কিন্ত বলতে তো হবেই।
“তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছ! বৃদ্ধাশ্রম বানাবে! তার চেয়ে আমি আগে চলে গেলে তুমি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেও। এসব ছেলেমানুষি করতে যেও না! “তনুজা রাজি হবে না তা পার্থ বিলক্ষণ জানে। প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতেই পার্থ আবার চেষ্টা করলেন “বাজারে বৃদ্ধাশ্রম গুলো দেখেছ! দেখে মনে হয় যেন পরপারে যাবার অপেক্ষা করছে সবাই।সবসময় যেন বিদায়ের সুর বাজছে। আমার কনসেপ্ট টা আলাদা। এখানে সবাই আনন্দ করে সময়টা কাটাবে।”
“দেখ শুনতে তো অনেক কিছুই ভালো লাগে। কিন্তু এত খরচ আসবে কোথা থেকে? আমাদের আয় বলতে তো তোমার পেনশন, আর কিছু ফিক্সড ডিপোজিট” এ প্রশ্নের উত্তর পার্থর কাছেও নেই। কি করে হবে এসব! “তোমার কষ্টের জায়গাটা আমি অনুভব করি, কিন্তু আমাদের কে এটা মেনে নিয়ে চলতে হবে। তার থেকে যতদিন একসাথে আছি, চল না এত ভালো করে কাটাই যেন আর কোন আক্ষেপ না থাকে, কোন অপ্রাপ্তি না থাকে।” হয়ত ঠিকই বলেছে তনুজা ।
৩
“ঠিক আছে। তুমি যেভাবে বলছ সেভাবেই হবে। আর এগোব না।” তনুজা হাসলেন “চল না কোথাও ঘুরে আসি! দুবছর কোথাও ঘুরতে যাওয়াই হয় নি।” এমনিতে পার্থ আর তনুজা বছরে একবার নিয়ম করে ঘুরতে যান।অসুস্থতার কারণে গত দু বছরে সেই নিয়মে ছেদ পড়েছিল। এবার ঠিক হল ত্রিবান্দাম যাবেন। তনুজার সমুদ্র বরাবরের পছন্দ। পুরী, ভাইজাগ ইত্যাদি বীচ গুলো বহুবার যাওয়া হয়ে গিয়েছে। কেরালার আয়ুর্বেদের খ্যাতি তো বিশ্বজোড়া। সমুদ্র দেখাও হবে আবার আয়ুর্বেদের চিকিৎসাও হবে। ব্যস ব্যাগপ্যাক করা শুরু। বয়স সত্তর পেরোলেও ঘুরতে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই যেন ত্রিশের তরতাজা যুবক হয়ে ওঠেন পার্থ। সব কিছু অ্যারেঞ্জ করা, মেডিসিন, টিকিট ইত্যাদি নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে ওঠেন যে ওনার উৎসাহের সাথে তখন পাল্লা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
ঘুরতে এসে কার্পণ্য করা পার্থর ধাতে নেই। নামী ফাইভস্টার হোটেলে উঠেছেন। তবে এখানে আসার পর থেকেই তনুজার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। একে ত ব্রংকাইটিসের রোগী তার ওপর আবার ঠাণ্ডা লাগিয়ে বসেছেন। কাল আসার পর একবার সমুদ্র সৈকতে যাওয়া ছাড়া আর বেরোনো হয় নি। তবে তাতে কিছু যায় আসে না কারন ক্লাব রুম গুলোর বারান্দাতে দাঁড়ালেই সমুদ্র দেখা যায়। “কি গো! কেমন লাগছে এখন।” চা বানাতে বানাতে তনুজাকে প্রশ্ন করলেন পার্থ। “ভালো, তবে যাই বল বাঙালির সমুদ্র মানে কিন্তু পুরী।”
“তা যা বলেছ, তবে এই জায়গাটাও কিন্তু বড্ড ভালো, কাল বীচে যাবে দেখবে, কত সুন্দর আসর জমেছে। কত দেশের লোকজন আসে এখানে।” তনুজা হাসলেন “আর ভালো লাগে না এসব, তোমার সাথে দুদণ্ড আছি সেটাই ভালো।” পার্থ চা টা এগিয়ে দিলেন তনুজার দিকে “বড্ড তাড়াতাড়ি সময়টা চলে গেল, এই ত সেদিনের কথা।তোমার বাড়িতে গেলাম। তোমাকে দেখতে। চল্লিশ বছর এত তাড়াতাড়ি কেটে গেল কি করে বল ত!”
“এবার তো তুমি বিদায়ের সুর বাজাচ্ছ। সামনে দেখ আরও কত বছর আসছে।”
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, বাইরে ঢেউ গুলো ভাঙছে। বয়স বাড়লেই প্রেম পুরনো হয় না। প্রতিদিন যে প্রেম নূতন করে প্রকাশিত হয় তার আবার বয়স বাড়ে নাকি! সে চিরযৌবনা।
পরদিন আর ওদের বীচে যাওয়া হয় নি। তনুজা বেশ গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়।সেখান থেকে সোজা কলকাতা। এখানে এসেও বেশ কিছুদিন নার্সিংহোমে থাকতে হয়। “ট্যুর টা তো আমি মাটি করে দিলাম!” তনুজা এখন বেশ অনেকটা সুস্থ কিন্তু ডাক্তার বেশী হাঁটাহাঁটি করতে বারণ করেছেন।
“তুমি যে ভালো হয়ে উঠেছ, সেটাই তো সব!”
“বলছিলাম কি! তোমার প্রজেক্ট তা নিয়ে তুমি এগোও, টকা পয়সার জোগাড় হয়ে যাবে” পার্থ তনুজার কথা শুনে অবাক হলেন না, এত বছরের দাম্পত্য। মুখ খুললেই পুরো কথাটা পড়ে নেওয়া যায়। তনুজা দেখেছে পার্থর অসহায় অবস্থা। কেরালা, কলকাতা মিলিয়ে প্রায় কুড়ি দিন তনুজা নার্সিংহোমে ছিলেন। এর মধ্যেই ভেঙে পড়েছে পার্থ। ছেলের পক্ষে আসা সম্ভব হয় নি।
পার্থ র চিন্তা অন্য জায়গায়। যদি হঠাৎ সে আগে মারা যায় তনুজাকে কে দেখবে! জীবনের কথা কেই বা বলতে পারে! একটা অ্যাসোসিয়েশন থাকলে তো ভালোই হয়। পার্থ গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন। এককালে পার্টির হয়ে প্রচুর বক্তৃতা করেছেন। আড্ডার গ্রুপে ভাষণ দিয়ে অধিকাংশকেই রাজি করালেন। লাইসেন্স করা হল।
সবই হল! কিন্তু টাকার জোগান হবে কি করে! সবাই সাধ্যমত ডোনেট করলেও তো হচ্ছে না। অতএব উপায় লোন।এ বয়সে আবার লোন পাওয়া তো সাধারণ ব্যাপার নয়। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কনসেপ্ট টা বুঝতেই প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় নিয়েছেন, তারপর দেখছি দেখব করেই কাটিয়ে দিয়েছেন। অতএব কি বা করা যায়। “না হবে না! বুঝলে বন্ধুগণ!’’ পার্থ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন!
“আচ্ছা আমরা কি আমাদের ছেলেমেয়েদের থেকে টাকা নিতে পারি না!”
“বুদ্ধিটা খারাপ নয় বসু! তবে সবাই কি আর দেবে! থাক সব বয়সে সব কিছু হয়ে ওঠে না, এটা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো।” পার্থ হাল ছেড়ে দিলেন। একপ্রকার হার মেনে নিলেন।
৪
এরপর মাস খানেক কেটে গেল। হঠাৎ অনিমেষ হাজির। প্রথম দর্শনে পার্থ ও চিনতে পারেনি! কিছু বুঝে ওঠার আগেই একেবারে সটান পায়ে পড়ে গেল অনিমেষ। “আরে অনিমেষ না! কেমন আছিস!” অনিমেষ পার্থর পুরনো ছাত্র। প্রমোটারি করে প্রচুর পয়সা উপার্জন করেছেন। “ভালো স্যার! শুনলাম আপনি একটা বৃদ্ধাশ্রম করতে চাইছেন!” পার্থ কিঞ্চিৎ অবাক হলেন “তুই জানলি কি করে!”
“স্যার বাজারে ঘুরে বেড়াই আর এতটুকু জানব না! টাকা নাকি শর্ট পড়েছে। স্যার চিন্তা করবেন না একদম। আমি আছি।” অনিমেষ এক সেকেন্ডের জন্য থামল বার বলা শুরু করল “স্যার আমি তো ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না,মনে আছে আপনি আমাকে মাধ্যমিকের আগে বিনা পয়সায় অঙ্ক পড়িয়েছিলেন। এক্স, ওয়াই, জেট, ত্রিকোণমিতি আরও কত কি! আমার বাবার ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টের জন্য পয়সা তুলে দিয়েছিলেন। স্যার সব মনে আছে। এবার আমাকে করতে দিন। না বলবেন না।” পার্থর হাত দিয়ে প্রচুর স্কলার বেড়িয়েছে। এমন সাহায্য তিনি অনেককেই করেছেন। তারা কেউ বিদেশে পড়ছে কেউ বা দেশেই সুপ্রতিষ্ঠিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্থর ফ্রেন্ডলিস্টে এরা আছে অনেকেই। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আজকে এই ভার্চুয়াল যুগে এমন উষ্ণতা কোথায় আর পাওয়া যায়! পার্থ জড়িয়ে ধরলেন অনিমেষকে।
৫
কাজ শুরু হল জোড়গতিতে। দেখতে দেখতে কেটে গেল এক বছর। চারতলা মাথা তুলে দাঁড়াল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হল বারোটা ফ্যামিলি থাকবে সেখানে। একটা মাসিক খরচ দেওয়া হবে যা দিয়ে নানা রকম অনুষ্ঠান, ডাক্তার ইত্যাদি খরচ নির্বাহ হবে।
“বুঝলে তনু, ফ্ল্যাট টা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না! কত স্মৃতি এখানে! আমরা আমাদেরকেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছি! কি বল!”
“এত মায়া রেখে লাভ নেই। এই যে ছেলেটার ওপর আমার এত মায়া ছিল। দুবছর ধরে দেখি না! কি বলবে বল!”
যদিও পার্থ কে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয় নি। ভোররাতের ম্যাসিভ অ্যাটাকে মারা যায় পার্থ। এরপর মাস ছয়েকের মাথায় মারা যান তনুজাও। তিনি অবশ্য কিছুদিন বৃদ্ধাশ্রমে কাটিয়েছিলেন। ঠিক যে ভাবে চেয়েছিলেন পার্থ। হাসি, ঠাট্টা, গান সব মিলে এক পরিপূর্ণ বার্ধক্য। তীব্র কেরিয়ার সচেতন প্রজন্মের থেকে বেশী কিছু আশা করা উচিত নয়।কিন্তু হা হুতাশ না করে নিজেদের ব্যবস্থা যে নিজেরাও করা যায় তার একটা নিদর্শন রেখেছিলেন পার্থ।অ্যাসোসিয়েশন টা আস্তে আস্তে বাড়ছে। বহু মানুষ সাহায্য করছে। এগিয়ে আসছে আরো অনেক অনিমেষ। পার্থ আজ থাকলে নিশ্চয় বলতেন “জীবন তো পরীক্ষা নেবেই, বয়স বাড়লেও লড়ে জেতে হবে তনু। ভালো থাকার জন্য। ভালভাবে বাঁচার জন্য।”
0 Comments