প্লাস্টিকঃ পাখিদের মৃত্যু ফাঁদ

মৃত পাখির ভিতর প্লাস্টিক সামগ্রি, ছবি- smithsonian

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং মানুষের স্বাচ্ছন্দের এই যুগে দৈন্দদিন জীবনে প্লাস্টিক এক অপরিহার্য উপাদান। অপচনশীল উপাদানে তৈরি হবার ফলে পরিবেশে প্লাস্টিক টিকে থাকে বছরের পর বছর।  প্রচণ্ড বুদ্ধিমত্তা আর মেধা দিয়ে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষ দিন দিন আবিষ্কার করছে জীবনকে সহজ করবার নানান অনুষঙ্গ। তবে জীবকুলের অন্য প্রাণীরা মানুষের মতো বুদ্ধিদীপ্ত না হওয়ায় মৃত্যুর কারণ হচ্ছে মানুষের আয়েশি অনুষঙ্গ। 

এক রিপোর্টে জানা যায় প্রতি বছর ১৭.৬ বিলিয়ন পাউন্ড বর্জ প্লাস্টিক সাগরের পানিতে যুক্ত হচ্ছে। এর সাথে অন্য আরও বর্জ পদার্থ তো আছেই। পূর্বে ভারি ধাতু সমুদ্র ও পানি দূষণের জন্য অন্যতম চিন্তার কারণ হলেও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক। সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণীর সাথে পাখিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বর্জ প্লাস্টিক। 

 

প্লাস্টিক কীভাবে সাগরে যায়?

খুবই আশ্চার্যের বিষয় কি করে এতো এতো প্লাস্টিক সাগরে যায়! প্লাস্টিক খুবই পাতলা এবং ভাসমান পদার্থ। যারফলে ভেসে ভেসে এবং বাতাসে ওড়ে উৎস থেকে দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে খুব সহজেই। আগেই বলেছি প্লাস্টিকের জীবন চক্র খুবই দীর্ঘ-তাই প্রকৃতিতে টিকে থাকে দীর্ঘ বছর-এমনকি শতাব্দি পর্যন্ত। যদিও ক্ষয় হয়ে হয়ে খুবই ছোট কণায় পরিণত হতে পারে। যাকে মাইক্রো প্লাস্টিক বলে। যা পাখি ও অন্য আরও প্রাণের জন্য খুবই বিপদজনক। এমনকি খাদ্যের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্য প্রবেশ করলেও মারাত্মক বিপদের কারণ হয়। 

 

ওজনে হালকা এবং দীর্ঘস্থায়ী বিশিষ্টের কারণে নর্দমা বা নদী স্রোতের সাথে সাগরে গিয়ে মিশে প্লাস্টিক। গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রের বর্জ প্লাস্টিকের ৮০ শতাংশই আসে সমতল থেকে। বাকি ২০ শতাংশ সরাসরি সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়। 


প্লাস্টিক ব্যাগ ঠোঁটে পাখি, ছবি- অনুজ তেওয়ারি 

 

পাখি ও বন্যপ্রাণীদের জন্য প্লাস্টিকের ভয়াবহতা  

প্লাস্টিক বর্জ পাখি ও অন্য বন্যপ্রাণীদের দুই ভাবে ক্ষতি করে- ১। খাবারের মাধ্যমে ২। প্লাস্টিকের সাথে জড়িয়ে 

১। 

প্লাস্টিক হালকা হবার কারণে এটা পাখি ও অন্য বন্যপ্রাণীরা সহজের গিলে ফেলতে পারে। সারগ তীরের বালিতে কিংবা সাগরে ভাসমান মাইক্রো প্লাস্টিক কণা দেখতে অনেকটাই প্লাংটনের মতো যা পাখি ও অন্য প্রাণীদের খুবই প্রিয় খাবার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে পুরনো প্লাস্টিক পাখি ও সাগরের অন্য প্রাণীদের কাছে খাবারের মতো গন্ধ ছড়ায়। ফলে তারা খুব সহজেই আকৃষ্ট হয়। 

 

প্লাস্টিক খেলে পাখি ও অন্য প্রাণীদের ভিতরের নরম টিস্যুসহ অন্য অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বড় প্লাস্টিকের টুকরো গিলে ফেললে অনেক সময় তা খাদ্যনালীতে আটকে যায়। এমনকি পরিপাকতন্ত্র ও পাকস্থলির এসিডও তা ভাঙ্গতে পারে না। ফলে পাকস্থলিতে প্লাস্টিক জমতে থাকে। এতে করে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং খাবারের আগ্রহ কমে না খেয়ে মারা যায়। 

 

জালে আটকে পড়া পাখি, ছবি- The Narwhal

২। 

প্লাস্টিক সামগ্রীতে জড়িয়ে গিয়েও পাখি ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল ও অন্যান্য প্লাস্টিক বর্জের সাথে সহজেই মাছ ও পাখি ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সহজেই আটকে যায়। যা থেকে তারা মুক্ত হতে পারে না। অন্য পাখিও সাহায্য করতে পারে না। খুব শক্ত ভাবে প্লাস্টিক জড়িয়ে গেলে তা শরীরের চামড়া ভেদ করে ধীরে ধীরে শরীরের অংশ কেটে ফেলতে পারে, শরীরে পচন ধরতে পারে এমনকি তাদের পাখা হারিয়ে উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। 

 

প্রতিকার 

প্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্তি খুব সহজ নয়। কারণ প্লাস্টিককে রিসাইকেল করে পুনঃব্যবহার উপযোগী করা খুবই কঠিন। অনেক প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করা যায় না, এমনকি কিছু কিছু প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করার চেয়ে নতুন করে বানানো সস্তা। সারা পৃথিবীতে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য রিসাইকেল করে তৈরি হয়। তাই যে ভাবে প্লাস্টিক দূষণ কমানো সম্ভব- 

 

প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো 

যদিও আপনি যথাযথ স্থানে বর্জ ফেলেন, তবুও ওজনে হালকা হবার কারণে সহজেই উড়ে গিয়ে প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করতে পারে। তাই যখন খাবার দোকানে যাবেন তখন স্ট্র ছাড়া কমন পানীয় চেয়ে নিন। অন্য খাবার সামগ্রীগুলোর জন্য দোকানীকে অনুরোধ করুন যাতে প্লাস্টিক সামগ্রী ছাড়া দেয়। যদি নাও সম্ভব হয় তবে যা সব ক্ষেত্রে প্লাস্টিক পণ্য এড়িয়ে চলা সম্ভব সেক্ষেত্রে এড়িয়ে চলুন। যেমন মেলামাইন বা কাঁচের কাপে চা, কফি পান করুন। ধাতুর চামিচ ব্যবহার করুন। কাগজের প্যাকেটে খাবার বাইরে নিন। 

Post a Comment

0 Comments