ঈদকে ঘিরে অনেক আনন্দের স্মৃতিই মনে পড়ে। তবে তার মধ্যেও যদি বিশেষ স্মৃতি মনে করতে চাই, তাহলে বলতে হবে ঈদের সকালে রান্না ঘরের কথাগুলো। সারাবছর আম্মুই বাসার সব রান্না করেন। আব্বু শুধু ঈদের দিন সকালে রান্নায় হাত দিতেন। বিরিয়ানী-মাংস রান্নাটা আব্বু নিজ হাতেই করতেন। হরেক রকমের মসলার মিশ্রনে অন্যান্য দিনের মাংস রান্নার থেকে আলাদা একটা ঘ্রান বের হতো। ভাই-বোনেরা তখন রান্না ঘরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে আব্বু-আম্মুর খুনসুটি দেখতাম। আব্বু জানতে চাইতো রান্না কেমন হতে পারে। ঈদের ওই রান্নার জন্য আমাদের ভোট আব্বুর দিকেই বেশি থাকতো। আম্মুকে একটু অভিমান করতে দেখতাম। আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলেই ফেলতেন, ‘একবেলা রান্না করতে আসছে মসলা যা আছে সবই ঢেলে দিয়েছে। রান্নাতো ভালো হবেই। আমার রান্নাতো ভালো লাগবে না। আমিতো খরচ বাঁচিয়ে কম মসলায় রান্না করি।’
ব্যাপারটা কিন্তু আসলেই সত্য। সারা বছর দিনের অর্ধেকটা রান্না ঘরেই কাটিয়ে দিতো আম্মু। সংসারের আয়-ব্যয় হিসাব করে তিনিই আমাদের ভালো থাকার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে আপ্রান চেষ্টা চালাতেন। তাই তো আম্মুর কথা, ‘আমিও মসলা বেশি দিয়ে রান্না করলে এরচেয়ে ভালো রান্না হতো, ঘ্রানটাও টের পাওয়া যেতো।’ আম্মুর কথা নিয়ে প্রথমেই আব্বু হেসে ফেলতেন আর মজার ছলে একেক সময় একেক কথা বলতেন। আমরা ভাই-বোনেরা আম্মুর অভিমানের মান নির্ণয় করে কখনো আব্বুর সঙ্গে হাসিতে যোগ দিতাম। কখনো আবার চুপচাপ থাকতাম বা আম্মুর অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য তার কথার সঙ্গেই সায় দিতাম। এই মান-অভিমান চলতো খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। সেই দিনগুলো আজও স্মৃতিতে অটুট হয়ে বেঁচে আছে।
লেখক: আইনজীবী ও সাংবাদিক
ইমেইল: emran.bae71@gmail.com
এই লেখকের আরও লেখা...
0 Comments