আজ (১৭ আগস্ট) শমসুর রাহমানের দশম মৃত্যু দিন। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ও অন্যতম এই প্রগতিশীল কবি ২৩ অক্টোবর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে পুরনো ঢাকার মাহুটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। আজকের এই দিনে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে বনানী কবরস্থানে তার ইচ্ছায় মায়ের কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর প্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ।
রাহমান ভাই যখনই বিদেশ গেছেন, তখনই আমাকে চিঠি লিখতেন। টোকিও, কলকতা এবং ফ্লোরিডা থেকে আমাকে তিনটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আজও চিঠির অক্ষরগুলোতে চোখ পড়লে কবির অস্তিত্ব অনুভব করি। চিঠিগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে–শক্তিশালী হয়ে ওঠে-তাঁর কবিতার মতো। মনের অজান্তেই স্মৃতিকারত হয়ে পড়ি। মনে পড়ে প্রাণবন্ত রহমান ভাইয়ের সাহচার্য।
রহমান ভাই পান করতে পছন্দ করতেন। আমি দেশের বাইরে গেলে তাঁর জন্য রেড ওয়াইন আনতে বলতেন। তাঁর একটি অপ্রকাশিত কবিতাও আছে আমার কাছে-যত্ন করে রেখেছি। একটি সাক্ষাৎকার নেবার চেষ্টা করিছিলাম-সময় আর ব্যস্ততার জন্য তা শেষ করতে পারিনি। আফসোস থেকে গেছে। তাঁর সাথে অনেক তিক্ত-মধুর স্মৃতি আছে, আছে অনেক ছবি-ছবিগুলো জীবন্ত রহমান হয়ে উপস্থিত আছে আমার ঘরে, সুদূর এই কানাডাতে। আয়ুরেখা কতবড় জানি না–আয়ুর সাথে যদি দৌড়াতে পারি তবে স্মৃতিগুলো নিয়ে একটা বই লেখার বাসনা পুষি।
গতবছর দেশে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কবির পুত্রবধূ টিয়া রাহমান ফোন করে অনেক দুঃখের কথা বললেন। পারিবারের সবার খবর জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, আব্বু এতো বড় কবি ছিলেন, আব্বু বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন, তবু নয়নার চাকরিটা বাংলা একাডেমিতে হলোনা!
অথচ রাহমান ভাইয়ের পুত্র ফাইয়াজ রাহমানের বড় মেয়ে নয়না রহমান ইংরেজিতে অনার্স পাস করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে। মাস্টার্স করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অনার্স, মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম বিভাগ।
এই নিয়ে গত বছর ১৯ নভেম্বর ২০২১ সালে সাংবাদিক নঈম নিজাম এক স্ট্যাটাসে বলেছেন– ‘কবি শামসুর রাহমানের নাতনিকে বাংলা একাডেমির চাকুরির জন্য ঘুরতে হয় দুই বছরের বেশি সময়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী শুধু বলেছেন, হবে, হবে…শামসুর রাহমান বাংলাদেশে একজন’।
এখানে মন্ত্রিকে দোষ দেওয়া যায় যেমন, তেমনি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় তৎকালীন একাডেমির মহা পরিচালকেও! একজন কবির স্মৃতি ধরে রাখতে হলেও হয়তো নয়নার চাকরি হবার সুযোগ ছিল। নয়না তো কোন সুবিধা চায়নি। যোগ্যতা নিয়েই চাকরির জন্য গিয়েছিল। কিন্তু একাডেমি চাকরি দিতে পারেনি। অথচ এমন অনেক 'অযোগ্য' লোককে আমি চিনি যারা দিব্যি একাডেমিতে চাকরি পেয়েছে, করছে!
0 Comments