সেই মাত্র পৌঁছেছি বর্ষাবিহারে। কালো কফির মতো মেঘ অলকাপুরী সফর শেষে বিশ্রাম নিচ্ছে ঝাপসাশরীরে। মাটির গামলায় জিইয়ে রাখা কইমাছ কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত জল ঝাপটে ঝাপটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ হাওয়ায় হাওয়ায় কার পদশব্দ, কে যে এগিয়ে আসছে কিছু বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার স্মৃতির ভিতর যেন নির্মিত হচ্ছে বহুদূর থেকে আগত অতিচেনা এক ফিসফিস কণ্ঠস্বর, কে যেন বলছে –
মেঘ করলেই ইচ্ছে করে তোমারনগ্ন নিরঞ্জন দেহে বৃষ্টি হয়ে ঝরি।সব ভুলে খুলে ফেলো তোমার বুকেরঅভিমান। এসো, সারারাত দুজনেগেঁথে থাকি, শিউরে উঠি নীলআনন্দ যন্ত্রণায়।
কথাগুলো কানের কাছে বেজে উঠতেই মহাকাশমেঘে গরগর শব্দ, সমস্ত আকাশ তখন অসংখ্য কৃষ্ণ পাথরের গুহা। সেসব গুহা থেকে বেরিয়ে আসছে রাত্রিদানবীর ভয়ংকর সন্তানেরা, যাদের চক্ষু বলয়ের মধ্যে পাক খাচ্ছে বিষম ঝড়। তাদের নিঃশ্বাসে লাফিয়ে উঠছে বজ্রপাত। এমন শীতল দৃশ্যে আমারশরীরের কলকব্জা বরফ হয়ে উঠছিল। কোনো রকমে শরীরটাকে টেনে সামনের জঙ্গলের মধ্যে নিক্ষেপকরতেই দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে এক চমকপ্রদ ঘটনা। সেই জঙ্গল যেন এক বিস্ময়ভরা সবুজধরণী! অরণ্যের মুকুট ছুঁয়ে আধোজাগো বিস্তৃত আকাশ। তার নীচে থৈ থৈ নীল জলাশয়,সেই জলাশয়ের পাড়ে বিরাট এক শ্বেত পাথরের উপর শুয়ে আছে নগ্ন এক নারী। তাকে ঘিরে উড়ছেঅসংখ্য শ্বেতজোনাকি। নারীর পাশে পড়ে থাকা বিস্রস্ত নীলাভ শাড়ির আভায় চারিপাশ অস্পষ্ট নীল কুয়াশার ঘোর। সেই কুয়াশা ভাঙতে ভাঙতে দূরের আকাশে প্রগাঢ় সমর্পণের ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে মধুবন্তী চাঁদ। রমণীর আলুলায়িত কেশরাশি থেকে ছড়িয়ে পড়ছে লবঙ্গ সুবাস। তার তুমুল স্তনের তরঙ্গ পেরিয়ে যায় কার সাধ্য... সপ্ত ঋষি আকাশলোকে বেদপাঠ ভুলে অনিমিখ চেয়ে আছে সে নারীর যোনিহ্রদের পানে...
কে! কে এই নারী! অদম্য কৌতূহলে পা বাড়াব কি সমস্ত অরণ্য জুড়ে চলকে ওঠে আলোর মূর্ছনা। চঞ্চলহাওয়ায় শোনা যায় কুমারী পাখির গান। সেই আলোর মূর্ছনার ভিতর আবির্ভূত হলেন একজন রাজপুরুষ। যিনি সেই নারীর পাশে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চিত স্বরে ডেকে উঠলেন –
বাসবদত্তা, বাসবদত্তা তুমি এখানেএভাবে শুয়ে! আর আমি কতযুগধরে আমার স্বপ্নদীক্ষিত পথে পথেঘুরে বেড়িয়েছি তোমার কারণে, বলোহে রমণী, এখনো কি অভিমানেফিরিয়ে থাকবে মুখ?
একি! ওই নারী বাসবদত্তা! ইনিই কবি ভাসের স্বপ্নবাসবদত্তা! এরাই সেই আশ্চর্য প্রেমিক প্রেমিকা! এই সেই বিখ্যাত বৎস রাজ উদয়ন! ধন্য আমি, ধন্য আমার চক্ষুদ্বয় ...চারিদিক তখন বইতে শুরু করেছেরমণপিপাসু হাওয়া, বুভুক্ষু দুটি নারীপুরুষ দুজনের কোমলস্থান কণ্ডুয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তা দেখে সপ্ত ঋষি লজ্জায় মুখ ঢেকে নেয় মেঘের আড়ালে, ঘন চাঁদ সরে যায় পাহাড়ের চূড়া ঘেষে। বাতাসে ছড়িয়েপড়ে শীৎকার ধ্বনি, বাসবদত্তার বাম স্তনের কালো তিলে রাজা ঠোঁট ছোঁয়াতেই হঠাৎ সমগ্র অরণ্য ছেয়েযায় কালো-তিল অন্ধকারে ...আমি তখন ভিজে উঠছি স্বমেহনে, গোড়ালি চুঁইয়ে স্খলিতভঙ্গীতে নেমে যাচ্ছে শৃঙ্গারবেদনের নদী। কে যেন চিৎকার করে উঠলো, গলা শুনে মনে হল পাশের বাড়ির কমলা কাকিমা-
ছিঃ, ছিঃ, কী কাণ্ড! দেখো গো সব, কোন অশ্লীল ছোকরা নিজেকে সামলাতে না পেরে রেতঃ ফেলেফেলে নদী করে দিলে গা! ও মাগো! এ নদীর কী বেগ! ঘরের সোমত্ত মেয়েদের সামলাই কী করে! এ নদীযে বয়ে যাচ্ছে যৌবনের মোহনা অবধি! মরি হায় হায়!
রেতঃ নদী! তবে আমি কি...নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি! নিজস্ব নারী দেহ বাসবদত্তার শৃঙ্গারলেখা পড়তে পড়তে কখন যে হয়ে গেছি পুরুষ্টু যুবক তা বুঝতেও পারিনি। হা প্রভু, কোথায় লুকাবো এ রোমশ শরীর! এতদিন যে শরীর পুরুষলাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত ছিল আজ সে কী এক অনন্ত ক্ষুধায় হাহাকার করছে। এই শরীরের সমস্ত তন্ত ডুবতে চাইছে নারীমাংসের মালসায়। ভেঙে ফেলতে চাইছে যত কোমল নারীশিলা! কীভাবে লুকাবো আমার এ লোলুপ আকাঙ্ক্ষা! হে নিখিলেশ্বর,আর কতক্ষণ হস্তমৈথুনে ভিজিয়ে যাব এই বিভ্রমের শরীর! প্রভু, হয় আমাকে নিয়ে চল কোনো অসূর্যস্পশ্যার যোনির ঊষালোকে, যেখানে আমার সমস্ত চেতনার অন্ধকার নির্বাণ লাভ করবে, নতুবা এই রূপ প্রকরণ ভেঙে আমাকে মিশিয়ে দাও ধুলোর ধ্বনিতে ।
এই লেখকের আরও লেখা…
0 Comments