-হ্যালো, আপনি শর্মিলী ইসলাম বলছেন?
-জি, বলছি। শোভন ইসলাম কে হোন আপনার?
-কেনো বলুন তো? আপনি কে বলছেন?
-আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনার সাথে শোভন ইসলামের বিয়ে হয়েছে কতদিন হলো?
-আপনি কে? তাছাড়া এই নিয়ে আপনাকে বলতেই বা যাবো কেন।
-বলুন না, শোভনের সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে কতদিন হলো? আপনি চাইলে শোভন সম্পর্কে কিছু খবর দিতে পারি আমি।
-জেনে আপনি করবেন কী? প্রতিবেদন তৈরি করবেন?' ঐ প্রান্ত থেকে এক রকম কটাকের সুর শোনা গেলো যেনো!
-প্রতিবেদন তৈরি করতেও তো পারি! বলুন না, শোভনের সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার কতদিন হলো!
-শুনুন, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। এই নিয়ে আপনার সাথে কোন কথা বলতে আমি আগ্রহী নই। আপনার যদি কিছু জানার থাকে আপনি শোভনকে ফোন করে জেনে নিন! শোভনই এ ব্যাপারে আপনাকে সব তথ্যই দিতে পারবে! সরি, আমি এ নিয়ে আপনাকে কিছুই বলবো না।
-আমাকেও অনেক কাজ করতে হয়! তাছাড়া আমি শুধুই আপনাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চেয়েছি এর বেশী কিছু না। জানালে আপনারই বরঞ্চ উপকার হতো।
এ ব্যাপারে ওর সঙ্গিটি আবার এক কাঠি বাড়া, চ্যাট থেকে শুরু করে ম্যাসেজ দেয়া-নেয়া, কথাবার্তাসহ যাবতীয় যোগাযোগ যা আগে বাড়ীতে সারতো, তা বাইরেই সেরে নিতে থাকে এখন। বাড়ি ঢুকেই আবার সেই স্ত্রী ধ্যানে সিক্ত আলাভোলা সিদ্ধ পুরুষ! কিন্তু নীরা যে ছাড়বার পাত্র নয়। সর্পিল গতিতে এগিয়ে যায় ওর নজরদারী। শোভনের ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে দিনের পর দিন ব্যবচ্ছেদ করে এক এক নারীকে।
এই বলে কণ্ঠে তীর্যক হাসির ক্ষীণ তরঙ্গের রেশ রেখে, তৎক্ষণাৎ লাইনটি কেটে দিলো নীরা। ফোন রেখে দিলেও অপমানের এই রেশ কিছুতেই কাটতেই চাইছিলো না যেনো! 'ছিনাল মাগীর তেজ কত! কি চ্যাটাং চ্যাটাং কথা!! তোর তেজ আমি দলে দলে পিষবো! দাঁতে দাঁত চেপে অন্য প্রান্তের এক নারীর অদৃশ্য সংসারকে পিষে চলে যেন ক্রোধে উন্মত্তপ্রায় নীরা। এ যেন রাগে-অপমানে নিজের মধ্যে নিজেই ফুঁসে চলা। সলতেয় আগুন ধরানোর যে উদ্যোগ নিয়েছিল সে, তার কিঞ্চিৎ তপ্ত শিখা এসে পড়লো নীরা'র শরীরেও। তবে ওপারের মানুষটিকে কতটুকু দগ্ধ করলো তা বোঝা গেল না। তবে এই আঁচের কিছুটা ঐ মানুষটির ওপরও যে হামলে পরেছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত সে।
এতো সহজে তো নিস্তার নেই শোভনের! মনে মনে এ কথা ক'টি আওড়াতে থাকে নীরা। বুনো পাখিকে কিভাবে খাঁচায় পুরতে হয় তা বেশ জানা আছে তার। যদিও হিসেবের কিছু গড়মিলের কারণে হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে পাখি। সময়ের ফেরে অভিজ্ঞতার পাল্লাটিও তো কম ভারি হয়নি তার! অবাধ্য পাখিটি আগে ধারে কাছে ভিড়ুক, এরপরই খাঁচায় এমনভাবে পুরবো যে কোথাও যাবার নামগন্ধটিও করবে না কখনো। প্রতিশোধের বিষবাষ্প চারদিক থেকে ঘিরে নীরাকে!
এদিকে রাজ্যের শূন্যতা নিয়ে নির্জীব পড়ে থাকে নীরা'র ছোট ঘরটি। প্রতিদিনই এই শূন্যতা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে যেন তাকে। কতজন তার এই শূণ্য হৃদয়ে এসেছে আবার ফিরেও গেছে। কিন্তু প্রাণের স্পন্দনে এখনো স্পন্দিত হয় নি তার হৃদয়ে। এই শূণ্য মরুভূমিতে শোভন থাকলে বুঝি মন্দ হতো না,ভাবে নীরা। এ যেন নির্জীব প্রাণের মাঝে স্নিগ্ধ সবুজের সন্ধান করা! নেতিয়ে পড়া শুকনো সলতের মতো ইনডেক্সের এক একটি পাতা উল্টিয়ে যায় সে। শেষ পৃষ্ঠার এক কোণে গিয়ে আটকে যায় চোখ! গোটা গোটা অক্ষরে লেখা সে-ই মোবাইল নাম্বার,যা সময়ের ফেরে ঝাপসা হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে পাঁচ বছর হয়ে গেলো। সময়গুলো দ্রুতই গেলো বুঝি! হাস্যোজ্জ্বল ও সদালাপী। সুঠাম ও মাঝারি গড়ন, পয়ত্রিশোর্ধ শোভন। কিন্তু দেখতে যেনো আরো বয়সী মনে হতো নীরা'র কাছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। মোটের ওপর বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-পরিজন নিয়ে ভর-ভরন্ত সংসার ওদের। উটকো কোন ঝামেলা এই ঘরটিতে হামলে পড়েনি তখনও। বুদ্ধিদীপ্ত নীরা এরই মধ্যে গুছিয়েও নিয়েছে সংসারটিকে। সহজেই যে কোন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারদর্শী, সুন্দরী ও সদাচরী। সরকারী চাকুরে। মাস শেষে একটি নির্ধারিত মাইনে আসে হাতে। কাজের ও তেমন চাপ নেই। আর এই গুণাগুণের জন্য পরিচিত মহলে যে তার যে বিশেষ কদর, তা বেশ বোঝে সে। এই নিয়ে একটি অহংবোধও আছে তার। এরপরেও একটি আক্ষেপ কিন্তু রয়ে গেছে এখনো। অন্য নারীর প্রতি শোভনের লোলুপ দৃষ্টি। এ নিয়ে বাদানুবাদও কম হয়নি। মেয়েমানুষের প্রতি ছোঁকছোঁকানিটা ওই মুখ পোড়া মিনসের আর গেলো না! নিজের মনে গজরাতে থাকে নীরা। এখন থেকে চোখে চোখে রাখতে হবে। ঘুড়ি যতো খুশি আকাশে ওড়ে বেড়াক। নাটাইয়ের সুতো তো তার হাতে। সুযোগ বুঝে শুধু সুতোয় টান দিতে হবে, আলগা হয়ে গেলেই মুশকিল! কখন, কোথায় কোন বাড়ির উঠোনে গিয়ে গেড়ে বসে কে জানে। বেটা মানুষের চরিত্রের কী ঠিক আছে! আর মেয়েগুলোরও যেন চোখের পর্দা খসে পড়েছে, বাঁধন একটু আলগা হলেই গলিঘুপচি দিয়ে অন্দরে ঢুকে পড়তে চায়!
সকাল থেকেই কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে ও গুমোট হয়ে আছে চারপাশ। ইচ্ছে করেই বুঝি এই বেশ নিয়েছে চরাচর। নিস্প্রভ এই ভাব ছোপ ফেলেছে উঁচু- নিচু সব বাড়িঘরগুলোতেও। এর খানিকটা পড়েছে যেন এখানকার যাপিত জীবনেও!
-এই, হলো কি তোমার? আজকাল মোবাইলটা দেখি তোমাকে বেশ পেয়ে বসেছে। ওর সঙ্গে ভালোবাসা পাতিয়েছো নাকি!" কথা ক'টি নীরা ঠাট্টাচ্ছলে বললেও এতে যে ঝাঁঝ ছিল তা বুঝতে অসুবিধা হলো না ওই পাশের সঙ্গীটির।
-বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ভীষণ আলসেমি লাগছে! কি যে বলো না তুমি, যন্ত্রের সাথে প্রেম হয় নাকি আবার! তোমার মতো এই মিষ্টি বউ থাকলে কারো সঙ্গে প্রেম করা লাগে নাকি। বলেই মুখ টিপে হাসলো শোভন।
-বেশ বুঝেছি। কি যে প্রেমের পাঠ পড়ো সারাদিন, তা তো দেখতেই পাই! সেট'টা দাও তো। ছুটির দিনেও সারাদিন এই যন্ত্রটায় মুখ গুঁজে দেখো কী, দেখি একবার।" এই বলে ছোঁ মেরে শোভনের কাছ থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয় নীরা। চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায় শোভনের। "মোবাইলটা আবার নিলে কেনো! একটি নিউজ দেখছিলাম তো। ধ্যাৎ, এই সব আমার একদম ভালো লাগে না! মোবাইল দাও।"
-এতে বিরক্ত হওয়ার কী আছে! নিউজ তুমি পরেও দেখতে পারবে। আমার চাইতেও তোমার এতো মোবাইল প্রীতি কেনো, সেটি তো আগে দেখি।" তাচ্ছিলের সাথে কথা ক'টি ছুঁড়ে দিলো নীরা।
-ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই করো। পাশ ফিরে শরীরকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে চিবুকটাকে অনেকটুকু বুক বরাবর এনে নিশ্চুপ হয়ে যায় শোভন।
-এ কী! এভাবেও কেউ সেলফি তুলে নাকি। কৌতুলী চোখে কথা ক'টি বলেই রহস্য উদঘাটনে আবারো ব্যস্ত হয়ে পরে অনুসন্ধিৎসু নীরা।
-এসব ছবি আবার ফেইসবুকেও দিয়েছে! ছিঃ ছিঃ!
-সবার রুচি, পছন্দ ও অপছন্দ এক হয় নাকি! ছাড়ো তো এসব।
-তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে তো দেখি অনেক মেয়ে! এতো মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব কেন করতে হবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না। হঠাৎই একটি ম্যাসেজে গিয়ে চোখ আটকে গেলো নীরা'র।
-নয়নতারা' এই মেয়েটা কে? এ তো দেখছি তোমাকে 'জানু' বলে ডাকে। ওর সাথে সম্পর্কটা কি তোমার? কিছু বলছো না যে। চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো।" হিংস্র বাঘিনীর মতো শোভনের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে নীরা। তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে ওঠে মোবাইলটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টারত শোভন, এমন কিছু একটা ঘটবে কস্মিনকালেও ভাবে নি যেন যে। শেষ পযর্ন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে ভিজে বিড়ালের মতো জবুথবু হয়ে সরে বসে বিছানার এক কোণে। ভেবে কুল পায় না এমন অদ্ভুত পরিস্থিতি আজ সামাল দিবে কিভাবে!
-এই, কথা বলছো না কেন? এভাবে চুপ করে থেকে কতদিন শাক দিয়ে মাছ ঢাকবে? ভাবখানা এমন করছো যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানো না। এখন তো দেখছি আমার ধারণাটাই ঠিক। তোমার মতো এমন দুশ্চরিত্র পুরুষ আর দু'টো দেখিনি আমি! 'জানু' বলে সম্বোধন করে যে মেয়েটি, আজই তাকে আনফ্রেন্ড করে দিবে। ওকে যেন আর তোমার ফেইসবুকে দেখতে না পাই।
-কি যে বলো না তুমি! এদের সাথে আমার সিরিয়াস কোন সম্পর্কই নেই। কেনো সে এই সম্বোধন করেছে তার আমি কি জানি। অনর্থক হাবিজাবি বিষয় নিয়ে ঘরটিকে মাছের বাজার করে ছাড়ছো। গজরাতে থাকে শোভন।
-এই,তুমি কথা ঘুরিও না তো। তোমার ভালো মানুষের মুখোশটা যদি না খুলছি আমার নামও নীরা নয়। তোমার ফেইসবুকের পাসওর্য়াডটা দাও।
-ঠিক আছে, এতোই যখন অবিশ্বাস,নাও পাসওর্য়াড। যত খুশি যা পারো দেখে নাও"।, এই বলে হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো শোভন। যাওয়ার আগে ইচ্ছে করেই জানান দিয়ে গেলো,"বাজারে যাচ্ছি, দোরটা পারলে দিয়ে দিও।"
সন্দেহের দৌরাত্ম্য যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে ছোটে তত ফন্দিফিকির ও। তাই এতোদিন যা প্রকাশ্য ছিলো ধীরে ধীরে তা যেন অন্তরালে যেতে শুরু করলো। এ যেন 'চোর-পুলিশ' খেলার মতোনই অদৃশ্য কোন খেলা। কেউ হয়তো জিতবে আবার কেউ হয়তো হারবে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল কারো ভাগ্যেই জোটবে না শেষ পযর্ন্ত। তা মেনে নিয়েই বুঝি নতুন নতুন খেলায় মেতে ওঠে এই ঘরের বাসিন্দা।
ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে শুরু করে শোভনের প্রতিদিনকার দিনলিপিতে এখন নীরা'র তীক্ষ্ণ নজরদারি। এ ব্যাপারে ওর সঙ্গিটি আবার এক কাঠি বাড়া, চ্যাট থেকে শুরু করে ম্যাসেজ দেয়া-নেয়া, কথাবার্তাসহ যাবতীয় যোগাযোগ যা আগে বাড়ীতে সারতো, তা বাইরেই সেরে নিতে থাকে এখন। বাড়ি ঢুকেই আবার সেই স্ত্রী ধ্যানে সিক্ত আলাভোলা সিদ্ধ পুরুষ! কিন্তু নীরা যে ছাড়বার পাত্র নয়। সর্পিল গতিতে এগিয়ে যায় ওর নজরদারী। শোভনের ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে দিনের পর দিন ব্যবচ্ছেদ করে এক এক নারীকে। সরকারী অফিস। অফুরন্ত সময়। তাছাড়া চাকরি হারাবারও কোন ভয় নেই। কাজেই সময়টাকে কাজে লাগানোর এটাই তো মোক্ষম সুযোগ। কিন্তু প্রতিটি খেলারই পরিসমাপ্তি ঘটে এক সময়। এক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি ঠিকই কিন্তু তা নানা রূপ নিয়ে দিনের পর দিন লেপটে থাকে ওদের দুজনের সঙ্গে। এটাই বুঝি ওদের নিয়তি!
আর তাই কোন এক দিন অন্ধকার ফুঁড়ে যখন একটি বিষয় দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো তখনই বাধলো গোল।
-নিত্য নতুন মেয়েমানুষের এই আনাগোনা আর গেলো না বুঝি তোমার জীবন থেকে! এমন লাম্পট্যপনা করতে বাধে না তোমার, তাই না! ওদের মধ্যে এমন কী দেখেছো, যা আমার মধ্যে দেখতে পাও না তুমি।" তিরষ্কারের ভঙ্গিতে বললো নীরা।
-বুঝলাম না। নতুন করে আবার কি হলো।
-তুমি তো কিছুই বোঝ না। যত বুঝতে হয় আর দেখতে হয় শুধু আমাকেই।
-এত ঘেঁটে ঘেঁটে মানুষের ফেইসবুক দেখতে যাও কেন! আমি তো তোমার এত কিছু দেখতে যাই না।
-আমার তো তোমার মতোন এত ছোঁকছোঁকানি ভাব নেই যে, আমাকে ঘেঁটে তুমি কিছু পাবা, সেজন্যই তোমার দেখতে যাওয়ার দরকার হয় না, বোঝলা।
-এই কথাগুলো যে বলো সব সময়, এর সত্যতার প্রমাণ তো আজও দিতে পারলে না।
-শিউলীমালা, নয়নতারা, শেষের কবিতা, অবন্তিকা এরা কারা? এদের সঙ্গে কি সম্পর্ক তোমার? ভেবেছো কী, এই মেয়েদের সম্পর্কে কোনদিন কিছুই জানতে পারবো না আমি। আর এদিকে তুমি নির্দ্বিয়ায় ডুবে ডুবে জল খাবা, ভালোই তো বুদ্ধি করেছো দেখছি।
-আগেও বলেছি এদের কারো সাথে সিরিয়াস কোন সম্পর্ক নেই আমার। আর তাছাড়া ওরা তো তোমার বাসা অব্দি আসে নি এখনও। তাহলে তোমার এত ভয় কিসের!
-বুঝলাম না। বাসা অব্দি আসেনি মানে কী!
এই শোন, তোমার এই নোংরা কাণ্ডকীর্তি আমি আর হজম করতে পারবো না, ব্যস। অনেক সুযোগ দিয়েছি তোমাকে। এখন এর একটা বিহিত হয়ে যাওয়া দরকার। কথা ক'টি এক নাগারে বলেই, দাঁতে খামটি দিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে নীরা । শোভন ও নাছোড়বান্দা। যে অভিযোগগুলো তুমি আমার বিরুদ্ধ করলে এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। আগেও বলেছি, এখনো বলছি। হতভম্ব নীরা'র চোখ দু'টো কপালে ওঠে গেলো যেন। জ্বলজ্বল করা এই নামগুলো আর এদের সঙ্গে তোমার ব্যাকালাপ যে তোমার ইনবক্সে সেঁটে আছে তা কি আমি লিখেছি? কি বলতে চাইছো তুমি? গোঁ ধরে থাকা শোভনের ওই একই কথা, “এই অভিযোগুলো ঠিক না। তাছাড়া এই নিয়ে তোমার যখন এতই সন্দেহ তাহলে তুমি প্রমাণ দাও”।
-এর প্রমাণ তো তুমি দিবে। আমি কেন দিবো! তাছাড়া আমি অনেক ভেবে দেখেছি, এভাবে আর তোমার সাথে থাকা সম্ভব না। কয়েক দিনের মধ্যে আমি উকিলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।
-যা ইচ্ছে মনে হয় তাই করো । এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই, বলেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো শোভন।
জীবনের নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে দুই বছরের বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি হলো শেষ পযর্ন্ত। কিন্তু প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বিচ্ছেদের ডাক যে দিয়েছিল, সেই নীরা'র ধারনা ছিল, আর যাই হোক ওর প্রতি শোভনের ভালোবাসা এখনো মরে নি। পরিচিতজনেরাও কথার ঠারেঠোরে সেটাই বোঝাতে চেয়েছে সবসময়।
অবশ্য এ ধরনের বারোভাতারি মাগির আবার সংসার! আজ এর সাথে জোটে তো কাল অন্য কাউকে বাগিয়ে নেয়। তবে তার দুঃসাহসেরও কী বলিহারি, শেষ পযর্ন্ত কিনা নীরা'র পাতের খাবারেই ভাগ বসালো! আরে তোদের মতো মাতারিদের আমি বগলদবা করে ঘুরে বেড়াই। কোন কাজ-কাম তো আর করিস না । বসে বসে কেবল স্বামীর অন্ন ধ্বংস করছিস, আবার কত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা!
শোভনের মতো পুরুষেরা যে কাউকেই ছাড়তে চায় না। অতীত, বর্তমান সব সম্পর্কের মাঝেই লেপটে থাকতে চায় তা বেশ বুঝে গেছে নীরা। আর এটিকেই তুরুপের তাস হিসেবে কাজ লাগাতে চেয়েছে সে। ধরাশায়ী করতে চেয়েছে অবাধ্য এক বুনো পাখিকে, যে কিনা নানান ডালপালা ঘুরে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঘরে ফিরতো। কিন্তু খেলার চালে যে ঘাটতি ছিলো তা টের পেতে সময় লাগেনি সেদিন, যেদিন শোভন তার এই নতুন সম্পর্কের সূচনা করলো। তাই বলে এখানেই তো খেলার পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে না। জমে থাকা রাগ, ঘৃণাগুলো আজ ফুলে ফেঁপে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যে লকলক করছে। এতদিন ধরে প্রতিশোধের চাষবাস করে আসছিল যে রমণী, শ্লেষাত্মক কথা ক'টি নিজে নিজেই আওড়াতে থাকে সে।
সংসার আমি ভেঙেছি, একে পুনঃনির্মাণও করবো আমি। এতে কার সংসার ভেঙে খান খান হলো, কার জীবন ধ্বংস হতে হতে নর্দমায় বিলীন হয়ে গেল তা দেখার দায় আমার নেই। আগে তো অবাধ্য পাখিটিকে খাঁচায় পুরি। এরপরই না হয় ওর পাখার শক্তিটা পরিমাপ হবে ধীরে ধীরে! নানান ডালে ওড়ে বেড়ানোর শখও মিটিয়ে যাবে তখন। সেখানে থাকবে শুধু নীরা'র রাজত্ব। এরপর যখন খুশি পাখিকে খাঁচায় পুরো আর ওর ছটফটানি দেখে তাড়িয়ে তাড়িয়ে আনন্দ নাও। যখন ইচ্ছে সাথে নিয়ে বাইরের আলো-বাতাসে ঘুরিয়ে নিয়ে আসো। আর ফেরেববাজ ঐ মেয়েছেলেটি! যার কথার তেজ এখনো এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে চায় তাকে ! পাখি ধরা পড়লে ওর সংসার করার শখও আজীবনের মতো ঘোঁচে যাবে। অবশ্য এ ধরনের বারোভাতারি মাগির আবার সংসার! আজ এর সাথে জোটে তো কাল অন্য কাউকে বাগিয়ে নেয়। তবে তার দুঃসাহসেরও কী বলিহারি, শেষ পযর্ন্ত কিনা নীরা'র পাতের খাবারেই ভাগ বসালো! আরে তোদের মতো মাতারিদের আমি বগলদবা করে ঘুরে বেড়াই। কোন কাজ-কাম তো আর করিস না । বসে বসে কেবল স্বামীর অন্ন ধ্বংস করছিস, আবার কত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! একটুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি খেলা করে যায় উদ্ধত নীরা'র ঠোঁটে-মুখে। মুহূর্তেই আবার সেই হাসি মিলিয়ে গিয়ে চোখের কোটর থেকে ঠিকরে বেরুতে চায় যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এভাবেই প্রতিশোধের নেশায় চেপে বসা ক্রোধে উন্মত্ত এক নারী লন্ডভন্ড করে দিতে চায় অদৃশ্য কোন সংসারকে, যে ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে পাঁচ বছর আগের ভেঙে যাওয়া সংসারটিকে আবার নির্মাণ করতে থাকে।
এই লেখকের আরও লেখা...
0 Comments