তৈমুর খানের কবিতা II নিঃশব্দের তর্জনী ও অন্যান্য



ঝড়


ধূসর বর্ণের মেঘ উড়ে উড়ে আসে

আজ নিশি অপেক্ষায় আছে কার?

বাসর সাজায় যুগ , যুগের কন্যারা

দুর্মর আকাঙ্ক্ষার দৃপ্ত প্রহর

সমস্ত পুরুষ বুকে জেগে ওঠে ঝড়

উড়ুক উড়ুক সব বিষাদের ছায়া।

 


গোধূলি


গোধূলি নামছে

 হৃদয় নদীর বাঁকে আমরা কজন নৌকা ভাসাই

 গৈরিক আলোয় উচ্ছল ঢেউগুলি

 কী সংবাদ দেয় আমাদের?

 কতদূর পরপার? ওই সুদূরের পার ছুঁয়ে

 দিনান্তের ঝরে পড়া সুর জলে মিশে যায়

 

 তুমিও বাউল গাও, আমিও বাউল

 আমাদের প্রেমের তীর্থে

 আজ এক বাউল নেমে আসে।

 দাঁড় টানো মাঝি,দাঁড় টানো

 আমরা ফিরে যাই

 যেখানে পড়শিরা সব সান্ধ্য আলো জ্বেলে

 আছে অপেক্ষায়….

 


গৌতম


যে যা- বলুক গৌতম

আমার সমূহ স্তব্ধতায়

মনে মনে তোমাকেই চেয়েছিলাম।

যদিও সুজাতারা আসে

যদিও নক্ষত্র জাগে অদ্ভুত আকাশে

কিছুই দেখি না আমি

চারিপাশে দেওয়াল তুলে দেয়

আমার সুতীব্র সংযম।

 

কেহই চেনে না আমাকে

পঞ্চইন্দ্রিয় ঘুমিয়ে গেলে

চুপিচুপি আমার আমিকে ডাকি :

এসো হে আমার গোপন গৌতম!

 

 

উদ্বিগ্ন


ভাঙা নৌকা আর দুপুরের মেঘ

আমরা কোথায় চলেছি আবেগ?

ঝড় আসবে সেসব আততায়ী ঝড়

কী করে বাঁচাবে মূর্খ আবেগ আমাদের?

চারিপাশ ঘিরে দাঁড়াবে কাতিল অন্ধকার।

 

 

এগারো জ্যৈষ্ঠের প্রার্থনা


 কত ঝড় বয়ে যায় জ্যৈষ্ঠের প্রান্তর জুড়ে

আমরা বিপন্ন বারবার, ঘরবাড়ি ওড়ে।

একটুকরো শান্ত চাঁদ জন্মদিনের পতাকা তুলে ধরে

খুঁজে পাই তোমাকেই আমাদের বিমূঢ় অন্ধকারে।

 এখনো মানব আছে মানুষের ঘরে

এখনো ফিরে আসো তুমি নিত্য জন্মান্তরে।

মুখে ন্যায়ের বাণী, সত্যের অবিচল ধারা

আত্মা বিদ্রোহ জানে, প্রেমে আত্মহারা।

সহজ সুন্দর এই হৃদয়ের তাপে

গোলাপ জন্মায়, তরবারি ছলকে ওঠে খাপে।

ব্যথার অশ্রু ভেজায়, আগুনে ঝলসায়

 মুখর শ্রাবণ আসে, নীরব জলসায়।

কাণ্ডারী পথ ভুলে গেলে বারবার

তুমিই উচ্ছল তারে করো হুঁশিয়ার।

এই দগ্ধ ভাঙা দেশে দিশেহারা জাতি

তোমার উদ্দাম স্বপ্নে ফিরুক সদ্গতি।

 

 

একটি সকালের নাম সন্দীপ দত্ত

 

রোজ রাত্রি পার করে যদি একটি সকাল পাই

তবে সেই সকালের নাম সন্দীপ দত্ত নিশ্চয়।

 

এজীবন একটি লিটিল ম্যাগাজিন

সংগ্রহশালা থেকে রোজ বের হয়ে এসে

তোমাদের সম্মুখে দাঁড়াই

একটু আদর করো, ভালোবাসা দাও

এজীবন জুড়ে শুধু শব্দের ঘ্রাণ

এজীবন জুড়ে শুধু শিল্পের অভিমান।

 

ইট কাঠ পাথর নয়, হৃদয় আর হৃদয়ের গান

চলো, সন্দীপ দত্তের কাছে যাই

নতুন প্রচ্ছদ হোক আমাদের

প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে বলি লেখা চাই!

 

আমাদের তো থামা নেই, আমরা আবহমান

পৃথিবীর মতো হোক আমাদের আয়ু;

আমাদের সুতীব্র ঘোষণা:

আমরাই সন্দীপ দত্ত, আমরাই লিটিল ম্যাগাজিন!

 

 

নিঃশব্দের তর্জনী

 

পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ নিয়ে সময় পেরোচ্ছি রোজ

আমার সন্ততি বেঁচে থাক

                            জানু পেতে বসেছি পশ্চিমে

 

এখানে মেঘের ঘোর, বজ্রপতনে ঘুম ভাঙে

ধ্বংসের সকাল হয় দেখি

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি

এখনো জেগে ওঠে দ্যাখ নিঃশব্দের তর্জনী

 

গান কি ভুলে যাচ্ছি তবে?

মুখ ঢেকে আছে বিজ্ঞাপনে

নিয়ত মানুষ আছে তবু

বহুস্বর স্তব্ধতায় তারা জাগে


মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয় একথা জেনেছে সব আলো

তবু তো অলীক এসে প্রতিশব্দে এভিটে কাঁপায়

সে অনেক শতাব্দীর কাজ

আমাদের অসময় আর নিয়ত বিনাশ একদিন মুছে যাবে

স্নায়ুর ভিতরে বহমান কাল

জন্ম দেবে, জন্ম দেবে রক্তিম প্রবাল




এই লেখকের আরও লেখা...

Post a Comment

2 Comments

  1. বিষাদের ছায়া উড়ে যায় ধূসর বর্ণের মেঘ হয়ে। গোধূলি নামার কালে দিনান্তের ঝরে পড়া সুর জলে মিশে যায়। কবির কবিতার পরতে পরতে বোধের বিচ্ছুরণ অথচ তীব্র বাক সংযম। কবিতায় ডাক দেয় এসো হে গৌতম। তেমনি আমাকে মুগ্ধ করেছে তাঁর অমোঘ শব্দ ক্ষেপন "কাতিল অন্ধকার"! কবি জানেন কি করে হৃদয়ের তাপে গোলাপ জন্মায়; দিশাহীন জাতিকে নিয়ে সদা ভাবিত কবি।
    ভালো লাগলো। ভালো লাগা কবিতাগুলি।—— যযাতি দেবল ,পানাগড়, পশ্চিমবঙ্গ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

      Delete