ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ চট্টগ্রামে, মৃত্যু ১১ এপ্রিল ২০২৩। চিকিৎসাশাস্ত্রে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক। উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হয়েছিলেন বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে। এফআরসিএসের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে শুরু হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ। সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিবেন। করলেনও তাই। পড়া স্থগিত করে যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় গড়ে তুললেন মুক্তিযুদ্ধের ফিল্ড হাসপাতাল। অপ্রতুল রিসোর্স নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুললেন বহু আহত মুক্তিযোদ্ধা। সেই যে সংগ্রাম শুরু আর থামেননি। যুদ্ধ শেষে আর বিলেতে ফেরত যাননি। অন্যদের সাথে মনযোগ দিয়েছিলেন দেশ পুনর্গঠনে। জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নে ১৯৮২ সালে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। যার ফলে দেশের ওষুধ শিল্প বিকাশ হয়। আমরা সুলভ মূল্যে দেশে তৈরি ওষুধ কিনতে পারি। গড়ে তুললেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল।
শুরুতে হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বন্ধুরা অনেকেই আবার বিলেতে ফেরত গিয়েছিল। কিন্তু তিন যাননি। মাটি আঁকড়ে সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭২ সালে এক রিক্সা চালক তাকে বলেছিল, স্যার আপনারাতো বিলেত চলে যাবেন আমরা কোথায় যাব? রিক্সা চালকের সেই বক্তব্য তাকে আলোড়িত করেছিল দারুন ভাবে। প্রেরণা পেয়েছিলেন দেশের জন্য কিছু করবার।
অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেতেন। এক শার্টের বয়স ২৫-৩০ বছর। নিজের জন্য কোন বাড়ি গড়েননি। নিজের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাননি। তাঁর মতে, যে দেশের সাধারণ মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পারে না সে দেশে থেকে তিনি বাইরের দেশে চিকিৎসা নিতে রাজি হননি। দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাঁর নামে মাছ চুরির মামলা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান গণতন্ত্রহীন সময়ে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। মিছিলে সংগ্রামে মাঠে থাকতেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। হুইল চেয়ারে বসে মিছিলে যোগ দিয়েছেন। অথচ তাঁর মতো মানুষ চাইলেই সরকারের অনুকম্পা নিয়ে ভালো থাকতে পারতেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করলেও কখনও ক্ষমতার লোভ করেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জিয়া কিংবা খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। চাইলেই মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু কোনদিন চাননি। নিজে আইনজীবী না হয়েও নুরু-রাশেদদের দলের কর্মীদের সাধারণ মামলায় জামিন না হওয়ায় তিনি নিজে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। জজ সাহেব জাফরুল্লা চৌধুরীকে দেখে আশ্চর্য হয়েছেন। এবং তার জিম্মায় জামিন দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় গণতন্ত্রের উত্তরণ দেখে যেতে পারলেন না।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন কি না। কিছু কিছু ঘটনা মনে প্রশ্ন জন্ম দেয়। তবে শেষ জীবনে তিনি কোরআন শেখার চেষ্টা করেছিলেন। আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করুন। হে সংগ্রামী আপনাকে লাল সালাম। আপনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। আপনার অনন্ত যাত্রা সুন্দর হোক।
0 Comments