মৃত মেয়েটি হরমুজ আলীর পেছন পেছন ছুটছে। হরমুজ ভয়ে পালাতে চায়। পারে না! যেখানে পালাতে যায়, মৃত মেয়েটি সেখানেই হাজির। হরমুজ বুঝতে পারছে না, মৃত মেয়েটি তার পেছনে কেনো! হরমুজ কোনো উপায় না পেয়ে দৌড় দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে ঢাকা শহর ছেড়ে চিটাগাং রোডে গিয়ে থামে। যাক বাঁচা গেল, মেয়েটি আর ধাওয়া করছে না।
গাড়িবাসবিহীন রাস্তার এক পাশে বসে ভাবছে এবার ঢাকায় ফিরতে হবে। এমন ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই দেখে মেয়েটি আবার পেছনে। আবার দৌড় শুরু।দৌড়াতে দৌড়াতে অদৃশ্য হয়ে যায় হরমুজ।
০২
বছরের ঈদ দুটি সামনে রেখে গ্রামমুখো মানুষ যেভাবে শহর ছেড়ে যায়, একইভাবে বাস, ট্রেন, লঞ্চযোগে বাড়ির দিকে ছুটছে সবাই। কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। যেন ভৌতিক ভয় আর আতংক পেছন পেছন ধাওয়া করছে। লোকমুখে একটাই শব্দ- আসছে! আসছে! ধেয়ে আসছে! কে ধেয়ে আসছে? কি ধেয়ে আসছে? সেসব জানে না কেউই। কেবল একটাই কথা– বিপদ ধেয়ে আসছে। বিপদ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় গ্রামে ফিরতে হবে। মানুষ প্রজাতির বিনাশ ঘটাতেই এই বিপদের বৈপ্লবিক আগমন! কেউ কেউ শুনেছে ওই বিপদের কাছে পৃথিবীর অনেক মানুষই অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। গলায় স্পর্শ করেছে মৃত্যুর মালা। যাকে একবার ধরেছে তাকেই শেষ করে দিয়েছে। অথচ মানুষ মরতে চায় না। তাই মৃত্যু ভয়ে সবাই আতংকিত! পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে পরীক্ষার হলে যেতে যেভাবে ভয় পায় পরীক্ষার্থী। এমন বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটির ভেতরেও কেউ কেউ স্থির দাঁড়িয়ে আছে। যে স্বজনহীন, কেউ তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকবে না। এরা যাবে কোথায়! এরা আসলে যায় না, নিজের কাছেই স্বেচ্ছা নির্বাসনের মতো অন্ধকারের অতলে থেকে যায়।
পিঁপড়ারা খাবারে সন্ধানে ছুটছে। কোথাও খাবার নেই। শহর ও গ্রামে লকডাউন চলছে। পিনপতন নিরবতা। অভেদ্য দেয়াল ভেদ করে বের হতে পারছে না কেউ। শহরের পরিচিত দৃশ্যগুলোও আর নেই। মানুষের ভিড় নেই। নেই স্ট্রিট হকার। রিকশাঅলা নেই। চিরাচরিত গাড়ি-বাসের জ্যামও নেই। রাস্তায় রাস্তায় আছে পুলিশ আর্মি। কিছুক্ষণ পরপর র্যাবের গাড়ি সাঁইসাঁই ছুটে যায় সিগন্যাল দিয়ে। সাধারণত এভাবে তারা ভয়ংকর খুনিকে তাড়ায়। এরপর ক্রসফায়ার টেবিলে বসে। ফলে রাস্তায় কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে না। থাকতে পারে না। সেনাবাহিনীও নেমেছে কড়া নিরাপত্তা অভিযানে। এতক্ষণ পর পিঁপড়ারা বুঝতে পারল দেশ জুড়ে কারফিউ নেমেছে। এতসব পিঁপড়ার মধ্যে একটি পিঁপড়ার নাম ফুলমতি। সে শুনেছে কারফিউ হলে প্রবল খাদ্য সংকট শুরু হয় রাষ্ট্রে। খাদ্য সংকটে পড়ে অন্য সব প্রাণিরা। শুনেছে কারফিউ দেয়ার কারণ ভিনগ্রহ থেকে আগত ভাইরাস। সাংঘাতিক হিংস্র এই ভাইরাস! যাকে ধরে স্বমূলে বিনাশ করে। শুধু তাই নয়, অন্যদেরও ঘায়েল করে। মাস চারেকের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় দেড় কোটি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ খেয়েছে। আর কত খেলে ক্ষুধা মিটবে সেটাও বোঝা যায় না। এই মহামারি এখন বাংলাদেশেও। এরা শুধু মারবেই না, স্নেহের পৃথিবীটা স্বৈরশাসকের মতো দখল করে ধ্বংসের রাজত্ব কায়েম করবে। হতে পারে এটা সেই আশ্বাসেরই নমুনা। বিশ্বখ্যাত ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করছে প্রতিষেধক বানাতে। এখনও সফল হতে পারছে না। তারপরও কেউ হাল ছাড়ছে না। তবে ততদিনে পৃথিবীর আরো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। খাবারের অভাবে মারা যাবে অন্তত দুই কোটি মানুষ। ফুলমতি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! এরপর আশপাশে তাকিয়ে কাউকে খোঁজার ভান করে।
এক সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে। লকডাউন আর কারফিউ যেন মামাত-ফুপাত ভাই। এর ফলে দেশে খাদ্য সংকট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। সংকটে আছে ফুলমতিরাও। যখন স্বাভাবিক অবস্থা থাকে তখন মানুষের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে বাঁচে কুকুর, বিড়াল। কিছু অংশ ফুলমতিরাও পায়। অবশ্য ফুলমতিরা তো হরহামেশা রাস্তায় বিশাল জায়গা জুড়ে আর থাকে না। থাকে বিল্ডিংয়ের দেয়ালে। রাস্তার পাশে। বড়ো বড়ো গাছের গোড়া অথবা মানুষের ঘরের নির্জন কোনো প্রান্তে। তাই রাস্তার খাবারের জন্য বেশি টেনশন নেই তাদের। মানুষের খাবার চুরি করে দিব্যি সংসার চালাতে পারে। চিনি অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার পেলে ভালো জমে। কোথায় থেকে যেন দলবেঁধে মুহূর্তের মধ্যে চলে আসে হাজার লাখ পিঁপড়া। তবে মিষ্টি খুবই পছন্দের। তৃপ্তি নিয়ে খায়। শুধু যে খায় তা-ই না, শীতের মজুদটাও ভালোভাবে হয়। যেন সংসারের নবীন প্রবীনরা খেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে পার করতে পারে মওসুম। অথচ রাষ্ট্রে এখন লকডাউন। যদিও ফুলমতিরা চাইলে অনেক জায়গায় যেতে পারে। কিন্তু যাবে কোথায়!
০৩
ফুলমতি দিনাজপুরের অস্বচ্ছল পরিবার থেকে এই শহরের বাসিন্দা হয়েছে। অস্বচ্ছল হওয়ার কারণও আছে। গল্পটি এগিয়ে নেয়ার জন্যে ফুলমতির বাবার একটি নাম থাকতে পারে। শাকুর সরদার। শাকুর একটা সময় দিনাজপুর অঞ্চলের বিশটি ইউনিটের একটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান ছিল। একবার দুইপক্ষের মধ্যে বিশাল যুদ্ধ বাঁধে। চলে টানা তিনদিন। যুদ্ধে জয়লাভ করলেও বিপক্ষ দলের আঘাতে তিনটি পা হারায় শাকুর। বাকি তিনটি দিয়ে কোনোরকম চলতে পারলেও আদতে সে পঙ্গু। সেই থেকে শাকুর পরিবারের বোঝা। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের দায়িত্ব কে নেবে? স্ত্রীও নেই। পিঁপড়াদের পরিবারে স্ত্রীদের ভূমিকা অনেক। সবাইকে কাজের নির্দেশ দিতে হয়। মনিটরিং করতে হয়। শুধু তাই নয়, এক, দুই, তিন লাখ পর্যন্ত ডিম দিতে হয়। এরপর তা দিয়ে বাচ্চাও ফোটানো। ফলে পুরুষদের সঙ্গে থাকার প্রশ্নই আসে না। শাকুর পাঁচ সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আছে মহাবিপদে। সংসারে বড়ো ফুলমতি। সে পিঁপড়া পরিবারের হয়ে নিজেকে মানুষের মতো ভাবতে চাইত সর্বদা। পিঁপড়া জীবন কখনই তার ভালো লাগে না। বিবর্তনের ইতিহাসে মানুষের আগে পিঁপড়া এসেছে। প্রায় ১৪ কোটি বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগে এদের উদ্ভব। সে তুলনায় মানুষ একেবারে নতুন। ত্রিশ লাখ বছর আগে মানুষের আর্বিভাব হলেও বুদ্ধি ও কৌশল দিয়ে তারা নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে। আজকের জনসংখ্যার বিস্ফোরণে টালমাটাল হলেও তলে তলে পিঁপড়ারাও যে ওজনের পাল্লায় মানুষের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে, সে খবর রাখে কয়জন? পঙ্গপাল, মশা, মাছি কিংবা পিঁপড়ারাও এই পৃথিবী দখল করে নিতে পাওে যে কোনো মুহূর্তে। হার্ভাড ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক এডওয়ার্ড ওসবোর্ন উইলসন ও সহযোগী গবেষক বার্ট হোয়েলডব্লার 'জার্নি টু দ্য অ্যান্টস' নামক বইটিতে লিখেছে, দাঁড়িপাল্লার এক দিকে পৃথিবীর সব পিঁপড়া চাপালে তা অন্য ধারে সব মানুষের মিলিত ওজনের সমান। আধুনিক অস্ত্র ছাড়া মানুষের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারে পিঁপড়া। তবুও পিঁপড়ারা নিজেদের অসহায় ভেবে থাকে। ভুলে গেছে অতীত ঐতিহ্যের কথা। ফুলমতি এসব ভাবতে গেলে চোখ বেয়ে পানি আসে। দোষ দেয় গোত্র প্রধানদের ভুল পরিকল্পনাকে। আত্মকলহে সাম্রাজ্য হারিয়ে পরজীবি হয়ে বেঁচে আছে। তবে, এই দায় থেকে কিছুতেই বাদ যাবে না নারীদের দূর্বল নেতৃত্ব।
০৪
লাইলি এই শহরে খুবই অল্প বেতনে গার্মেন্টসে চাকরি করে। থাকে মান্ডার তিনতলা পুরাতন একটি ভবনের নিচতলার দুই রুমের ফ্ল্যাটে। ভাড়া খুবই কম। বাসায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পৌঁছতে না পারলেও তিনপাশে জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধ অনায়াসে পৌঁছে। এখানে লাইলি একা থাকে না। দশজন মেয়ে মিলে মেসের মতো করে থাকে। দিনের বেলা অফিসে থাকলেও রাতটা কোনোরকমভাবে ঘুমিয়ে কিংবা না ঘুমিয়ে পার করে। শুক্রবার নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবাই। কেউ বাড়িতে ফোনে মা-বাবা অথবা নিকটাত্মীয়র সঙ্গে কথা বলে, কেউ কাপড় পরিষ্কার করে, কেউ শপিং করতে যায়। লাইলির শপিং করা হয় না। অভাবের সংসার। লাইলিকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। বাড়িতে পঙ্গু বাবা। স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজাকারদের হাতে পা হারায়। এরপরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম নেই। অথচ এখন সংসার নিয়ে আছে অথই সাগরে।
ফুলমতির মতো লাইলিরাও তিন বোন দুই ভাই। এত বড়ো সংসারের দায়িত্ব লাইলির ছোটো কাঁধে। লকডাউনের কারণে লাইলির রুমমেটরা বাড়ি চলে যায়। দিনাজপুরের প্রান্তিক এক গ্রামে লাইলির বাড়ি। ঢাকায় এনেছে পাশের বাড়ির আকলিমা। কাজও জুটিয়ে দেয় আকলিমা। এই প্রথম লাইলির ঢাকায় আসা। শহর দেখা। প্রথম ট্রেনে চড়া। কমলাপুর স্টেশন দেখা। এর বাইরে লাইলি কিছুই চেনে না, জানে না। আকলিমা বাড়ি যাওয়ার সময় লাইলিকে বার বার যেতে বলেছে, লাইলি যাবে না। বাড়ি যেতে অনেক খরচ। লাইলির হাতে এত টাকা নেই। বরং কিছু টাকা আকলিমার মাধ্যমে পাঠালে ডাল-ভাত চারটা মুখে নিতে পারবে ভাইবোনরা। বাড়ি গেলে ফিরে নতুনভাবে বিপদে পড়তে হবে। সহজে আসা যাবে না। তখন কারো কাছে ধারও পাবে না। আবার যাওয়া-আসার পথে ওই ছোঁয়াছে রোগের ভয় তো আছেই। অনেক ভেবে-চিন্তে বাড়ি যাওয়া বন্ধ রাখে লাইলি।
লকডাউনের কারণেই লাইলি স্বেচ্ছায়গৃহবন্দি। লকডাউন ভাইরাসের কারণে। লাইলি অনুপ্রেরণা খোঁজে কারাগারে থাকা মানুষদের থেকে। চার পাঁচ দিনের খাবার নিয়ে ঘরে সে একা। শেষ হতে থাকে এক, দুই, তিন করে পঞ্চম দিন। টেনেটুনে কোনোরকম শেষ হয় ষষ্ঠ দিনও। সপ্তম দিনে অবশিষ্ট কোনো খাবারই নেই। এতদিন লাইলির ভাবনায় ছিল সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। থাকার কথাও ছিল না যদি দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্বারা সব কিছু ঠিকঠাক বণ্টন হতো। খাবারের অভাবে মানুষ মারা যায় একথা যতটা সত্য, তারচেয়ে অধিক সত্য সুষম বন্টনের প্রকটাভাব। এদিকে লকডাউনও শেষ হয় না। দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ভাইরাসের প্রতাপের কারণে উলটো আরো বাড়বে। যদিও লকডাউনের দিনেও প্রশাসন অনেক কিছুর স্বাভাবিক চলাফেরার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। নির্দিষ্ট স্থানে পুলিশের পাহারায় বাজার বসে। দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করা সম্ভব হলেও লাইলির হাতে কোনো টাকা নেই। বাজার করবে কীভাবে! ভাবছে, আকলিমার সঙ্গে বাড়ি চলে গেলে এতটা ঝামেলায় পড়তে হতো না। মস্ত শহরে আমার আপন কেউ নেই। কে আমাকে টাকা দিবে? কে দিবে চাল, ডাল কিনে? লাইলি এমন হাহাকারকে এখনই সুযোগ না দিয়ে- ভাবছে একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সেই উপায়ের জন্যে আরেকটি উপায় খুঁজবে। অথচ কিছুই মাথায় আসছে না। বিপদের দিনে মাথা ঠিকঠাক কাজ তো করেই না বরং মনের সঙ্গে মনের একটা দ্বৈরথ বেড়েই চলছে!
০৫
লাইলি আর ফুলমতি রুম ভাগাভাগি করে থাকে, সে খবর লাইলি জানে না। জানার কথাও না। ফুলমতি বুঝতে পারলেও সে আছে পিঁপড়াদের সঙ্গে ঘরের দেয়ালে দেয়ালে। বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে লাইলি। পাশের দরজার কাছ থেকে পিঁপড়াদের সারি। দলবেঁধে উপরের দিকে উঠছে ফুলমতি ও তার সদস্যরা। ফুলমতি স্বগোত্রীয়দের দেখে আশায় বুক বাঁধে। যাক, না খেয়ে অন্তত মরতে হবে না। পিঁপড়া বাহিনী যে কোনো বিপদে একত্রিত থাকে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের শক্তি কয়েকগুণ বৃদ্ধির সঙ্গে অসাধ্যকে সহজে সাধন করার কৌশলটা ভালোভাবে জানা তাদের। পৃথিবীতে বিশ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া আছে। বারো সাড়ে বারো হাজার আনাচে-কানাচে বসবাস করলেও পিঁপড়েদের সবচেয়ে বড় উপনিবেশ ছিলো প্রায় ৩,৬০০ মাইলের! ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো বড়ো দেশগুলোর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই উপনিবেশ। এটি তৈরি করেছে আর্জেন্টিনার একটি পিঁপড়ার প্রজাতি। পিঁপড়ারা দেয়ালের প্রতি ইঞ্চিতে লাইন বজায় রেখে মাইলের পর মাইল অনায়াসে পাড়ি জমায়। এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল পিঁপড়াদের জন্য কয়েক মাইলের সমান। পিঁপড়াদের যেহেতু ক্লান্তি নেই। ঘুম নেই। তবুও পথ পাড়ি দিতে অনেক দিন লেগে যায়।
প্রতিটি পিঁপড়া নিজের ওজনের চেয়ে বিশ গুণ বেশি পরিশ্রমী। খাদ্য সংগ্রহের দিনে দীর্ঘ পথ অনায়াসে পাড়ি দিতে বেশ পারঙ্গম। এতে করে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীনও হয় তারা। পিঁপড়া সমাজেও আর্মি পিঁপড়া, পুলিশ পিঁপড়া রয়েছে। আর্মি শত্রুর আগাম সংকেত পায়। সংকেতের জন্য এক ধরনের রস ছিটিয়ে অপেক্ষায় থাকে। মাটিতে শব্দ করে শত্রুর আগমনের খবর জানতে পারে সহজেই। টিকটিকি, মাকড়শা আর তেলাপোকা পিঁপড়াদের প্রধান শত্রু। কখনও কখনও অন্য গোত্রের পিঁপড়ারাও শত্রু শত্রু খেলায় নিমজ্জিত হয়।
ফুলমতি জানে এই পিঁপড়াদেরও খাবার সংকট চলছে। সামনে যা পায় মেরে টুকরো টুকরো করে মিলেমিশে রস আস্বাদন করে। আর্মি ও পুলিশ পিঁপড়া গোয়েন্দা সূত্রে শত্রুর আগমনের খবর জানতে পেরে বিষয়টি সরদারকে অবগত করে। পিঁপড়া গোত্রের প্রধান যেহেতু নারী পিঁপড়া থাকার নিয়ম। ফলে ফুলমতি এখন চিফ মিনিস্টার অব অ্যান্টস। ফুলমতি সব পিঁপড়াকে ডেকে বলে, যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। সেই সঙ্গে খাদ্য মজুদ করতে হবে।
পিঁপড়াদের হিসেবে হাতের প্রতি বিঘত এক কিলোমিটার। বিশ কিলোমিটার অতিক্রমের পরই শত্রুবাহিনীর আগমনের খবর জেনে তাবু ফেলে। শত্রুরা লক ডাউনের দিনে ডাকাতি করতে এসেছে। এরা জানে শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে মানুষ নেই। সহজেই ব্যাংক, বুথ, স্টোরগুলো লুট করতে পারবে। গোয়েন্দারা জানায়, ডাকাতরা অধিকাংশ স্পেশাল ফোর্সের। যাদের মধ্যে আছে টিকটিকি, মাকড়শা আর তেলাপোকা। এরা লকডাউনের দিনে রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা। চিন্তায় পড়ে ফুলমতি। শহর রক্ষা করতে হবে যে কোনো উপায়ে। লকডাউন শেষে খাদ্য সংকট আরো তীব্র হবে। লুটপাট বন্ধ না করলে একজন আরেকজনকে অনায়াসে খেয়ে ফেলবে। ভেঙে পড়বে প্রশাসন। পৃথিবীর সব উৎপাদন বন্ধ। রাষ্ট্রের গুদামে যতটুকু আছে ততটুকুর সুষম ব্যবহার করলে মাস কয়েক চলা সম্ভব। ততদিনে বিপদ কেটে যাবে। অতএব এদেরকে শক্ত হাতে দমন করার সময় এখনই।
পিঁপড়াদের এমন চেইন দেখে লাইলি আপ্লুত। মূল সারির দুই পাশে আরো দুই সারি। এরা পুলিশ অথবা আর্মি হবে। শৃঙ্খলা যে কাউকে অনেক উপরে নিয়ে যায়। ইস্ মানুষ যদি পিঁপড়াদের থেকে এসব শিক্ষা নিত। মনে মনে লাইলি নিজেকে পিঁপড়া গোত্রের একজন ভাবে। ফুলমতি পিঁপড়া বাহিনীর দিকে যেমন খেয়াল রাখে, একইভাবে লাইলির দিকেও। লাইলি অনেক ক্ষুধার্ত ফুলমতি সেটাও জানে।
ফুলমতি বাহিনীর লড়াই শুরু হয় মাকড়শা, টিকটিকি ও তেলাপোকা বাহিনীর বিরুদ্ধে। এরা শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। সেসব ভুলে গিয়ে আমানতের খেয়ানত করছে। ফুলমতির মনে পড়ে তার বাবার যুদ্ধকৌশলের কথা। কীভাবে নিজের ইউনিটকে নিরাপত্তা দিয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনা করে আক্রমণ করেছে। আবার পেছন ধাওয়া দিয়েছে। কৌশল পালটিয়ে নতুন কৌশল প্রয়োগে বিপক্ষ শিবিরকে পরাস্ত করে নিজ বাহিনীকে রক্ষা করেছে। দুই রুমের ঘরটি এখন এই শহর। ঘিরে রেখেছে শত্রুর ছাউনি। ঘরটির সামনের রুমের ডান দিকে, দ্বিতীয় দেয়ালের কর্ণারে অবস্থিত ব্যাংকটি রাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ব্যাংক। পরদিন খুব ভোরে এটি লুট হবে দুইটি করে মাকড়শা, টিকটিকি ও তেলাপোকার নেতৃত্বে। সেনাপ্রধান ফুলমতির পরামর্শে রাতের বেলায় তেইশ লাখ পিঁপড়া একত্রিত করে ব্যাংকের আশপাশে কড়া নিরাপত্তা বসায়। দৃশ্যমান শত্রুরা অদৃশ্য ভাইরাসের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ ভয়ংকর! ফুলমতি বলেÑ জনমানবহীন এই শহর রক্ষার মহান দায়িত্ব এই মুহূর্তে আমাদের উপর। পবিত্র দায়িত্ব শেষ চেষ্টা দিয়ে হলেও রক্ষা করব। আমরা জানি, এটি একটি অসম লড়াই। ওদের শক্তির সঙ্গে আমাদের পারার কথা না, কিন্তু সত্যের শক্তি যে সাহস। সেই সাহস আমাদের আছে।
আর্মি পিঁপড়া দলবেঁধে আক্রমণ করতে ভালোবাসে। তবে এদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। এরা অ্যান্টেনার সাহায্যে আশপাশের শত্রুর উপস্থিতি টের পায়। একইভাবে খাবারের সন্ধানও পায়। শুধু তাই নয়- একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগও করে এই কৌশলে। ফুলমতি আর্মি পিঁপড়াকে ডেকে বলে, ওরা সংখ্যায় মাত্র ছয়, আমরা তেইশ লাখ। কিছুতেই আমাদেও সঙ্গে কুলাবে না। ওদেরকে বুঝতে না দিয়ে আক্রমণ চালাতে হবে। মুখোমুখি দু-পক্ষ। পায়ের নিচে পড়ে কিংবা হাতের ঘষায় হাজার হাজার পিঁপড়া মরে। তা সত্ত্বেও আক্রমণ পালটা আক্রমণ থামেনি। ফুলমতি খবর পাঠায়, যুদ্ধে জয়ের চেয়ে শহর রক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই পিছু হটা যাবে না। আমরা পিছিয়ে গেলে দেশটা হবে অচল পয়সা। আমাদের সব পিঁপড়ার চেয়েও দেশের মূল্য অনেক বেশি। ফুলমতির কথায় সবাই উজ্জিবিত। মাকড়শা, টিকটিকি, ও তেলাপোকাদের টুকরো টুকরো করে। জীবিত থাকে একটি মাকড়শা। পিঁপড়ারা শত্রুদের এমনভাবে খতম করে সেখানে রক্তের কোনো চিহ্নও রাখে না। এই মাকড়শাকে বাঁচিয়ে রাখার মানে হলো মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা। উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন শেষে র্যাব মাকড়শাকে সবাই মিলে আনন্দ করে খাবে।
যুদ্ধ শেষে সবাই বিশ্রামে। সৈন্যরা ক্লান্ত। ফুলমতি ক্যাম্পের সকলের খোঁজখবর নেয়া শেষে বলল, যুদ্ধ শেষ হয়নি। এখন অঘোষিতভাবে নগর রক্ষার দায়িত্বে আমরা। নগর রক্ষা করতে হলে বাঁচতে হবে। বাঁচতে গেলে খেতে হবে। খাবার সংগ্রহ করতে হবে। সেই সঙ্গে আশপাশের অন্যদের মুখেও খাবরের ব্যবস্থা করতে হবে।
০৬
গত তিনদিন লাইলি পানি ছাড়া মুখে কিছুই দিতে পারে না। এখানে আর ভালোও লাগছে না। বাড়ি যেতে চায়। দরজা খোলে। দারোয়ানের কাছ থেকে খাবারের সহযোগিতা চায়। দারোয়ান নিরুপায়। পুরো বাড়িতে এই মুহূর্তে আমি আর আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো প্রাণি নেই। লাইলি অবাক হয়ে বলে, তাহলে আমাদের কী হবে! কিন্তু আমাকে যে বাঁচতে হবে- আমার পরিবারের জন্যে। আমি বাড়ি যেতে চাই- কোনো একটা ব্যবস্থা করুন। দারোয়ান বলল, পুলিশের অনুমতি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখতে পারেন ট্রেন কখন ছাড়বে। তবে, যতটুকু জানি দেশের ভেতরে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। শুধু তাই নয়, সারাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন বাসায় থাকা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। মন শক্ত করে দরজায় খিল আঁটে লাইলি। এই খিল হয়ত নিশ্চিত মৃত্যু। অথবা টিকে থাকার জেদ। লাইলি এটাও জানে- যেখানে মৃত্যুর হাতছানি সেখানে টিকে থাকা যায় না।
বাঁচিয়ে রাখা মাকড়শাটি র্যাবগ্রুপের সদস্য। ফুলমতি ও র্যাব মুখোমুখি। র্যাবের নজর যায় ক্ষুধার্ত লাইলির দিকে। এরপরই সে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। শহর ও রাষ্ট্রকে নিরাপত্তার পাশাপাশি খাবারের সুষম বণ্টনের দায়িত্ব ছিল আপনাদের উপর। বাস্তবায়ন না করে নিজেরাই ভোগ দখল করতে চেয়েছেন। এখন ক্ষুধার্তকে বাঁচিয়ে রাখা পিঁপড়াদের প্রধান নৈতিক দায়িত্ব। সে যেই হোক না কেনো। লাইলি বাঁচতে চায়। শরীরের শেষ শক্তি দিয়ে কোনোরকম উঠে দাঁড়ায়। আবার দরজা খোলে। চারপাশে কেমন যেন নিস্তব্ধতা। অন্ধকার না থাকার পরও অন্ধকার। দারোয়ান নেই। গেটও বন্ধ। তাহলে দারোয়ান চলে গেছে! শেষ তেলটুকু শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাতিটাও নিভে গেল! লাইলি দারোয়ানের চেয়ারে বসে। স্মৃতিচারণ করছে অতীত। স্মৃতিচারণেও কাটছে না সময়। এভাবে কাটে কয়েক ঘণ্টা। ক্ষুধা নিয়ে এতক্ষণ বসে থাকা যায় না। লাইলি ঘরে এসে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ে। ততক্ষণে দূরের কোনো মসজিদ থেকে ক্ষীণকণ্ঠে আজানের শব্দ আসছে। হয়ত মুয়াজ্জিনও তিনদিনের অনাহারী। কণ্ঠের শক্তি লোপ পেয়েছে। এমনটা ভাবতে ভাবতে লাইলি আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু শেষ হওয়ার যে উপায় নেই। খুব সকালে লাইলির ঘুম ভাঙে। সুইচ অন করে। রুমে আলোর রেখারা খেলে যায়। তবুও ঝাপসা লাগে। ক্ষুধায় কাতর মানুষের এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে চোখের ঝাপসা কিছুটা পরিষ্কার হয়। লাইলির নজর ঠেকে দেয়ালের নিচে। সেখানে চাল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চালের স্তুপ। এত এত চাল দেখে লাইলি রীতিমতো অবাক! চোখ ক্রমে উপরের দিকে যায়, যত দূর যায় ততদূরই সারি। সারিতে লাখ লাখ পিঁপড়া। পিঁপড়াদের মুখে চাল। লাইলির চোখ বড়ো হয়ে যায়। বড়ো হওয়া চোখে আনন্দের ঝিলিক। মনে যখন আনন্দের প্লাবন খেলে যায়, তখন ক্ষুধাও হারিয়ে যায়। অনেকক্ষণ লাইনের পিঁপড়াগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লাইলি। অদূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি পিঁপড়া। এতটুকু বুঝা যায়, হাত ও মাথা নাড়ছে। সম্ভবত পিঁপড়াদের নেতা। নির্দেশনা দিয়ে ঠিকঠাক কাজের তদারকি করছে। লাইলির ইচ্ছে করছে পিঁপড়াটি ধরে কাছে এনে জড়িয়ে আদর করতে।
০৭
দারোয়ান স্থানীয় নেতা হরমুজ আলীর বাসায় যায়। তিনতলা ভবনের নিচ তলায় একা একটি মেয়ে। খাদ্য সংকটে তিন দিন অনাহারী। নিজের বিনিময়ে হলেও খাবার পেতে চায় সে। হরমুজের কৌতূহলী চোখ দারোয়ানের কথা ভেদ করে অনেকদূর পর্যন্ত যেতে থাকে। গেট খোলার শব্দ শোনে লাইলি। পিঁপড়ারা তখনও খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। ফুলমতি দক্ষ অফিসারের মতোই নির্দেশনা দিয়ে যায়- যে কোনো মূল্যে মানুষটাকে বাঁচাতে হবে। বিপদের দিনে সব প্রাণি সমান। পৃথিবীতে যতবার বর্ষা, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক যত দূর্যোগ নেমে এসেছে ততবারই সব প্রাণি এক কাতারে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে। মানুষ ছিল বড়ো রকমের আশ্রয়ের জায়গা তখন। সেই মানুষের বিপদের দিনে দাঁড়াতে না পারলে পিঁপড়ার জন্ম-জীবন বৃথা হবে। ভাবনাটা নিজের ভেতর না রেখে পিঁপড়াদের জানিয়ে দেয় ফুলমতি।
দরজায় ঠক্ ঠক্ করছে কেউ একজন। শব্দ শুনে নেতা পিঁপড়াটি দরজা ঘেঁষে দাঁড়ায়। লাইলি দরজা খোলে, সামনে দারোয়ান পেছনে হরমুজ। দারোয়ান লাইলিকে জানায়, ঘোর বিপদের দিনে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চায় হরমুজ। দারোয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই ভয়ে দরজা চাপাতে চায় লাইলি। হরমুজ ধাক্কা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। লুট করতে চায়- সোনালি আর রূপালি ব্যাংক। লুট করতে চায় লাইলির অব্যবহৃত স্বর্ণঘর। হরমুজ হাতে থাকা খাবার পাশে রাখে। লাইলি অসহায়ের মতো হাত জোড় করে ফ্যালফ্যাল তাকায়। হরমুজ বলে, সেই দিন লাশ হয়ে আমাকে তাড়া করেছিলি। আজ তোকে কিছুতেই ছাড়ছি না। হরমুজের কথা শেষ না হতেই লাইলির কয়েকটা হাচি আসে। গত দুইদিন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে শরীরের তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে কাশিটাও। নাক বেয়ে পাহাড়ি ঝর্নার মতো জল ঝরছে অবিরাম। হরমুজের সন্দেহ মেয়েটি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু সুযোগ তো সব সময় আসে না। হাতছাড়াও করা ঠিক হবে না। বসে উপায় খুঁজে হরমুজ। সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল দিয়ে স্প্রে করিয়ে নিলেই দুধের স্বাধ গোলে মেটানো সম্ভব।
ফুলমতি হরমুজের কুমতলব বুঝতে পেরেই আর্মি পিঁপড়াকে ইশরারা করে। লাখ লাখ পিঁপড়া হরমুজের শরীরে বেয়ে ওঠতে শুরু করে। হরমুজ হাত দিয়ে ঘঁষে মারার চেষ্টা করে। কিন্তু মারবে আর কত! লাখ লাখ পিঁপড়া। কামড় খেয়ে লাফাতে থাকে হরমুজ। শরীর থেকে খুলে ফেলে শার্ট ও গেঞ্জি। খুলতে বাধ্য হয় পরনের জিন্স। তাতেও কামড় থামছে না। হরমুজ চিৎকার দিয়ে দেয় দৌড়। পেছন পেছন দৌড়ায় দারোয়ানও।
কয়েকটি পিঁপড়া লাইলির হাতের উপর ওঠে। লাইলি খুশিতে পিঁপড়াদের দিকে তাকায়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা গরম পানি গড়িয়ে নামে।
0 Comments