পিতৃগণ: বাঙালির উৎসমূলের আঁতুড়ঘর


পিতৃগণ

জাকির তালুকদার

প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১১ 

প্রকাশনী: রোদেলা 

প্রচ্ছদ: শিবু কুমার শীল 

মূল্য: ৩৫০ টাকা 

বাঙালির ইতিহাস মূলত চর্যাপদের ইতিহাস, চর্যীয় যুগের ইন্দো-আর্য জাতি হতে বাঙালির উৎপত্তি কেউ কেউ মনে করলেও ইতিহাস আসলে আরও পুরনোগভীরে প্রোথিত। চর্যাপদের দূরতম ইতিহাস ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু দলিল বলে বাঙালি জাতির উৎপত্তি ছয় থেকে সাত হাজার বছর পুরনো। তাদের আদি পুরুষ নেগ্রিটোযারা প্রাক আর্য যুগের ভূমিপুরুষ ভীল, সাঁওতাল, মুন্ডা­–তাদের দলে ফেলা যায় কৈবর্তদেরকে। রাজবংশীরা ভূমিপুত্র নেগ্রিটোদের প্রতিহত করা অস্ট্রিকদের দলভুক্ত। বলা হয়ে থাকে এই অষ্ট্রিক থেকে উৎপত্তি হয়েছে বাঙালি জাতির-সেই অংকে অস্ট্রিক জাতিগোষ্ঠীতেও ফেলা যায় কৈবর্তদের। উপন্যাসে কৈবর্ত পুত্রনেতা ভীম মহাভারতের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বীকার করছেন তারা একলব্যের বংশধর। সেটাও ইঙ্গিত করে কৈবর্তরা আর্যপূর্ব যুগের। আর্যপূর্ব যুগে সবশেষ এসেছিল মঙ্গোলীয়রা–গারো, চাকমা, ত্রিপুরা, কোচ জনগোষ্ঠী। 

আর্যপূর্ব যুগের ইতিহাস ধূয়াশার ইতিহাস এই অর্থে যেসঠিক দিন তারিখ দিয়ে কোন ইতিহাস লেখা নেই। পুরাকির্তীতে ধীরে ধীরে যা আবিষ্কৃত হচ্ছে। যতটুকু আছে তাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতব্যক্তি স্বার্থের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের স্বার্থপরতার দেয়ালের ফাঁকে উঁকি দিয়ে সত্য ও নিগুঢ় আলো ফেলার মানসে ভূমিপুত্র কৈবর্তদের বিজয়গাঁথা নিয়ে জাকির তালুকদার লিখেছেন মহাকাব্যিক উপন্যাস পিতৃগণ’। যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমূল্য মৌলিক সম্পদ। ইতিহাসের নিরিখে যার মূল্যমান অনির্ণিত থাকলেও সাহিত্যমূল্যমানে কাঁচা সোনা। 

বেঞ্জামিন ফ্রাংলিনের মতে–“অর্ধসত্য প্রায়শই বিরাট মিথ্যা”। একজন উপন্যাসিক ইতিহাসের অর্ধসত্যকে শিল্পিত ছোঁয়ায় উপস্থাপন করেন বর্তমানরূপে। কিন্তু ইতিহাসের ধূসর অঞ্চলে একজন প্রত্নতাত্ত্বিক বা ইতিহাসবিদকে এমন অর্ধসত্য ধরেই মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বের করতে হয় প্রকৃত সত্য। বরেন্দ্রীর লাল মাটিতে হেঁটে হেঁটে জাকির তালুকদার সেই সত্য উন্মোচনে মুরশিদের ভূমিকা পালন করেছেন। এখন দেখার বিষয় সেই দেখানো পথে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক বা ইতিহাসবীদরা কতটা পথ হাঁটতে পারেনকতটা মাটি খুঁড়ে গভীরে চাপা পড়া ইতিহাসের ফসিল উদ্ধার করতে পারেন। হয়তো এমনও হতে পারে বাঙালি সভ্যতা পৃথিবীর আদিম সভ্যতা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো কিংবা আরও পিছিয়ে মেসোপটেমীয় সভ্যতার কাছাকাছি কিংবা তার চেয়ে খুব বেশি নবীন নয়। পুন্ড্রবর্ধন কিংবা ওয়ারী বটেশ্বর সে ইঙ্গিতই বহন করে। 

ভূমিপুত্র কিংবা বাঙালির উৎপত্তির আলোচনায় প্রাক-আর্য যুগের অবতারতণা হলেও পিতৃগণ’ উপন্যাসের বিস্তার মূলত ভূমিপুত্র কৈবর্তদের দূরতম নবীন উত্তরপুরুষদের নিয়ে। যারা পাল আমলে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিগৃহীত ও শোষিত হয়েছিল। ধর্ম-জাতি-বর্ণের বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। এরকম শোষণ শুধু পাল আমলে পুণ্ড্র নগরে হয়নি। ইতিহাস বলছেআমেরিকার দাস প্রথা, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন-শোষণ এমনকি পাকিস্তানের শোষণের রূপ-ও একই। কৈবর্তদের যেমন শূদ্র শ্রেণিতে ফেলে অস্পৃশ্য-ব্র্যাত্য করে রাখা হতোপশ্চিম পাকিস্তান তেমনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মানুষদের নিচুস্তরের মুসলমান ভেবে শোষণ-নির্যাতন করতো। পরিকল্পিত ভাবে ব্রিটিশ ভারতে একই রকম ধর্মীয় বিভক্তি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায়। শোষণের এরকম নিচু মানসিকতা প্রাগঐতিহাসিক। আর এই শোষণ জমতে জমতে একসময় প্রতিরোধের অঙ্কুর মহীরুহে পরিণত হয়। ফলশ্রুতিতে বরেন্দ্র একসময় ভূমিপুত্র কৈবর্তদের শাসনে চলে আসে এবং পুণ্ড্র নগরে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবিক ও সাম্যের শাসন ব্যবস্থা। যেখানে কান্টের রাষ্ট্র দর্শননীতি প্রতিষ্ঠিত হয় আবার মার্কসের নীতির সাথেও সাংঘর্ষিক নয়। ব্যক্তিগত জীবনে জাকির তালুকদার সাম্য ও কল্যানরাষ্ট্রের ধারণায় মার্কসবাদের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই জানি। হয়তো তারও একটা প্রভাব উপন্যাসের কৈবর্তদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকতে পারে। 

কৈবর্তদের জীবন চারণ, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচারানুষ্ঠান, ধর্মীয় বিশ্বাস যথার্থরূপে বর্ণনা করেছেন। উপন্যাসের ভাষা প্রাঞ্জল ও সাবলিল। ধার করা কোন শব্দ বা উপমা নয়-বরং বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষের মুখের ভাষাকেই সাহিত্যের ভাষায় তুলে এনেছেন। কবি পপীপ কৈবর্ত হয়েও সংস্কৃতিতে কাব্য রচনার জন্য আত্মদহনে পুড়েনকবি তিলোঁর সাহিত্য যাকে নিজভাষায় কাব্য রচনার প্রণোদনা যোগায়। অথচ একটা সময় ছিল যারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বেড়ে ওঠেও সাহিত্য চর্চা করতেন পশ্চিম বাংলার ধাঁচে। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে নিজেদের সাহিত্য ভাষা তৈরিতে যারা সচেষ্ট হয়েছেনজাকির তালুকদার তাদের অন্যতম। পিতৃগণ’ উপন্যাসে শব্দ ও বর্ণনার চমৎকারিত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণ ভাবে। প্রাক-প্রত্যুষের বর্ণনা দিতে গিয়ে অন্য অনেক কিছুর সাথে তিনি বলেছেন–“যখন পাতলা ঘুমের মধ্যে শিশুরা হাতের আন্দাজে বুঝে নেয় পাশে মায়ের উপস্থিতির নির্ভরতা এখনো নিশ্চিত রয়েছে কিনা এবং তারপরে পাশ ফিরে নিজেকে সমর্পণ করে আবার আরেক চুমুক গাঢ় ঘুমের মধ্যে (০১. ক্রীতদাসের যাত্রাপথ, পৃষ্ঠা ৩১)”। এরকম আরও অনেক দর্শন ও উপলব্দি তুলে এনেছেন উপন্যাসটিতে। 

পাল-আর্যরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে রাষ্ট্র শাসন নিজেদের জন্মগত অধিকার মনে করেছে। ঠিক সেরকমটা না হলেও–কৈবর্তদের রাষ্ট্রক্ষমতার কালে আর্য প্রজাদের সন্ত্রস্ত থাকতে হয়েছে। আর্যদেরকে প্রমাণ করতে হয়েছে তারা আসলে আর্যবর্ত থেকে আসলেও এখন তারা এই মাটিরই সন্তান। একটা আর্যগ্রাম ঘুরে পপীপ তার সেই অভিজ্ঞতাকে সেনাপতি মল্লর কাছে বললে, তার অভিব্যক্তিই বলে দেয় কোন রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা চিরকালই নিষ্পেষিত। বর্তমান বাংলাদেও তার ব্যতিক্রম নয়। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে কৈবর্তরা নিজেদের ধর্মকে নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছে। নিজেদের জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করতে কবি পপীপকে দিয়ে আর্য শাস্ত্র শিখিয়ে তাদের দোষগুলো খুঁজে বের করিয়েছে। যে প্রবণতা আমাদের এ উত্তরাধুনিক সমাজেও বর্তমান। তবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর ভীম কিংবা সেনাপতি মল্লর অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন তাদের আদর্শকে সমুজ্জ্বল করেছে। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর কোন রকম অনিষ্ঠ থেকে দূরে থাকার দিব্যোকের নির্দেশ এবং তা কার্যকর করা ও রাখা তাঁকে মানবিক নেতার মর্যাদা দিয়েছে।  

উপন্যাসে কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রাজ অন্যপুষ্টসত্যকে ছাপিয়ে তিনি মনিবের স্বার্থরক্ষা করে, স্তুতি করে কবিতা রচনা করেন। নিকট অতীতের আরাকান রাজসভায় এমন রাজকবি ছিল। রাজ কবিরা মূলত রাজার ইচ্ছা দ্বারা আবর্তিত হন। তাঁর সৃষ্টিশীলতায় রাজার অভিপ্রায়ই বড় হয়ে ওঠে। এখন যদিও রাজকবি নেই কোথাও কিন্তু অসৎ উদ্দ্যেশ্য চরিতার্থ করবার জন্য একশ্রেণির স্তাবক কবি-সাহিত্যিকদের বর্তমান সমাজেও দেখা যায়। যারা বিশেষ উদ্দেশ্যে নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে সত্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে পিছপা হন না। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের সময় অনেক কবি-সাহিত্যিকরাই আনুকল্য-অনুকম্পা প্রাপ্তির মানসে শাসকদলের স্তুতি গেয়েছেন–এখনও তার ব্যতিক্রম নয় বরং আরও প্রকট ভাবে লক্ষ্যনীয়। অথচ কবি-সাহিত্যিকরা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। অন্যায়-অবিচার ও মিথ্যার বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে সত্য প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে–তারাই আজ মিথ্যা কিংবা অসত্যের ছায়ায় নিজেদের বিলীন করে দিচ্ছে।  

পিতৃগণ’ একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। অসীম দাসগুপ্তের মতে–“যদি কোন সাহিত্যিক অন্যযুগের মনকে তাঁর রচনায় ধরতে পারেন, পাঠক যদি সেই মনকে পৃথক বলে চেনেন কিন্তু স্বাভাবিক বলে মানেনতাহলে সেই সাহিত্য নিঃসন্দেহে ইতিহাসধর্মী”। তবে অতীত গৌরব নিজেরদিকে টানতে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ঘটনা কিংবা চরিত্রের অস্বাভাবিক বিকৃতির অধিকার কোন সাহিত্যিকের থাকতে পারে না। ‘পিতৃগণ’ উপন্যাসে কৈবর্তদের সরলতা, মানবতাবোধ আর সেই সাথে বীরত্বের ঘটনা বিধৃত হয়েছে ঐতিহাসিক সত্যকে আশ্রয় করেই। তবে উপন্যাসিক কিছুটা কল্পনাশ্রিত হয়ে একটা যুগের জীবন ও প্রাণ-প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তুলবেন এটাই স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঐতিহাসিক উপন্যাস সম্পর্কে যথার্থই বলেছিলেন–“সেখানে আমি সৃষ্টিকর্তা। সেখানে আমি একক, আমি মুক্ত বাহিরের বহুতর ঘটনাপুঞ্জের দ্বারা জালবন্ধ নই”। পিতৃগণ’ উপন্যাসের চরিত্রগুলো অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহের অবকাশ হয়তো নেই তবে তাদের জীবন সম্পর্কে কিংবা ঘটনাপুঞ্জের সম্পর্কে পুরোপুরি সত্যতার স্বাক্ষ্য দেওয়া যায় না। তাইতো পপীপকে কেন্দ্র করে যে উপন্যাস অবর্তিত হয়েছে সেখানে মাত্র সাত বছরের পপীপকে দিয়ে লেখক অনেক বৈষয়িক সত্যের মুখোমুখি করিয়েছেন যা কিছুটা বাস্তবতা বিবর্জিত। ঊর্ণাবতীর ঘরে পপীপকে দেশপ্রেমের যে ব্যাখ্যা আর স্বপ্ন মল্ল শোনান তা অতটুকু বয়সে তার বুঝার কথা না (১০. পপীপ তুমি কে?, পৃষ্টা ১০০)। এছাড়াও রাজধানী অভিমুখে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে দিব্যোকের যাত্রাকে যে কোন রাজাই বিদ্রোহ বলে ধরে নিবে। এবং বিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হবে। কিন্তু পুণ্ড্রের সৈন্যবাহিনী তখন তামিলের সৈন্যবাহিনীর সাথে যুদ্ধরত ছিল। রাজধানীতে মাত্র স্বল্প সংখ্যক সৈন্য ছিল। এই পরিস্থিতিতে রাজা রামপাল মন্ত্রী ভট্টবামনের প্ররোচনায় তাদের ওপর আক্রমণ করবে এমন বোকা কোন রাজাকেই ভাবা যায় না। কিংবা যুদ্ধের ময়দানে যতই চুক্তি হোকঅন্ধ বিশ্বাসে কোন সমরনায়ক রাতের বেলায় বিনা প্রহরায় সৈন্যদলকে ঘুমাতে দিবে এমনটাও হতে পারে না। 

উপন্যাসের অনেক জায়গায় কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করে পর্যাপ্ত সংখ্যক উল্লেখ করেছেন। অনুসন্ধিৎসু পাঠক মাত্রই প্রকৃত সংখ্যাটা পড়তে পারলে তৃপ্ত হতো। এছাড়াও দিব্যোকের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের সমাপ্তি টেনেছেন। ভূমিপুত্র কৈবর্তদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর নেতা হিসেবে দিব্যোকের রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনৈতিক গঠনের কোন বর্ণানা বিধৃত হয়নি। কিংবা রুদকের পরিচয় ছাড়া পাঠক আর কিছু জানতে পারেনি। যদিও সূচনা পর্বেই উপন্যাসের কলেবর নিয়ে লেখক নিজের সংশয়ের কথা বলেছেন তবুও দিব্যোকের রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্র গঠনের ছিটেফোঁটা অন্তর্ভূক্ত হলেও পাঠকে তৃপ্ত করতো। 

শেষ অবধি পপীপের মায়ের বিষয়টা অমিমাংসীতই রাখা হয়েছে। তবে সন্ধ্যাকর নন্দীর ইতিহাস বিকৃতিকে পপীপের সত্য ইতিহাস উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করবার দর্শন খুবই প্রশংসনীয়। তিনি নিজেও সত্যেন সেনের বিদ্রোহী কৈবর্ত উপন্যাসে উচ্চবর্গীও দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে প্রকৃত নায়ক কৈবর্তদের দৃষ্টিতে রচনা করেছেন পিতৃগণ। সনাতন ধর্মের ছিদ্রান্বেষণের জন্য পিতৃগণকে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার বানে জর্জরিত করা যায়। এতে করে ওই ধর্মবিশ্বাসী পাঠকের অনুভূতি আহত হতে পারে ভীষণ ভাবে। এমনকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও জাগ্রত হতে পারে এর মধ্যদিয়ে। 

এছাড়াও ভূমিপুত্র কৈবর্তরা নারী ও পুরুষে বিভাজন করে না বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ঘরে-বাইরে, ধর্ম-সংষ্কৃতিতে নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে কাজ করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে নারী-পুরুষের সাম্য রক্ষার্থে লেখক সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই সচেতন পাঠকের কাছে মনে হবে। কারণ যুদ্ধের শেষে যে নারীরা রামপালের সেনাদের বাঁধা উপেক্ষা করে কৈবর্ত পুরুষদের লাশ সৎকারে এগিয়ে যায়–সেই তারাই যুদ্ধে অংশ নিবে না এটা ভাবা দুষ্কর। ব্যক্তি জাকির তালুকদার সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখলেও তাঁর চিন্তায় কল্যাণ রাষ্ট্রের উপাদান অনুপস্থিত। 

এতসব কিছুর পরও ‘পিতৃগণ’ বাংলাসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এরং এর আবেদন অক্ষয়।  আমাদের উৎস, কেমন ছিল আমাদের পিতৃগণকেমন ছিল তাদের জীবন চারণ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানবিকতা, পিতৃগণ আমাদের সেসবের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। শিবু কুমার শীলের করা বইটির প্রচ্ছদেও ফুটে উঠেছে কিভাবে আদিপুরুষদের গত হয়ে যাওয়া দেহ থেকে ফুল হয়ে ফুটে আছে উত্তরপ্রজন্মবাঙালি জাতি। হাজার বছর পরেও আমাদের উত্তরপুরুষ তাদের উৎসমূলের সন্ধানেআদিপুরুষদের সন্ধানে নিশ্চয় চোখের সামনে মেলে ধরবে পিতৃগণ। 


লেখা: আকাশ মামুন



Post a Comment

5 Comments

  1. চমৎকার আলোচনা। বাঙালি সভ্যতা তাহলে এতো পুরানা? পৃথিবীর অন্যতম পুরান সভ্যতা তাহলে! জেনে ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. পড়ার আগ্রহ জাগছে।

    ReplyDelete
  3. সমালোচনাই তো বেশি হয়ে গেলো!

    ReplyDelete
  4. সুন্দর আলোচনা।

    ReplyDelete
  5. সুন্দর পাঠপ্রতিক্রিয়া। এধরনের পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়লে মূল বইটি পড়তে আগ্ৰহ জাগতে বাধ্য। অভিনন্দন।
    —যযাতি দেবল

    ReplyDelete