মাতৃত্ব নারীর কাছে এক সুন্দর অনুভূতি। একটা সুন্দর ফুটফুটে নিষ্পাপ মুখাবয়ব আর তুলতুলে নরম স্পর্শ নারীর সমস্ত অনুভূতি জুড়ে। কিন্তু মাতৃত্ব সুন্দর হলেও এসময়টা যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কঠিন। গর্ভকালীন শারীরিক নানা জটিলতার পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। শুধু তাই না অনেক সময় অসাবধানতা, অজ্ঞতার জন্য নানা জটিল সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগে এসব বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা নেওয়া একজন নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা জটিলতা নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে নিরাপদ মাতৃত্ব সম্ভব। কি কি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝা যাবে গর্ভবতী কি না? কি ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, দৈনন্দিন জীবন যাপন, ও খাদ্যা তালিকা কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় পুষ্টিবিদ ও গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে কোথা বলে তুলে ধরেছেন ইশরাত জাহান মিশু।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণঃ
গর্ভবতী হলে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তণ লক্ষ্য করা যায়। সবার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে খুব বেশি পরিবর্তন বুঝা না গেলেও কিছু কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১। সাধারণত যেসব নারীদের ঋতুচক্র নিয়মিত, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব ভালো ভাবে বুঝা যায়। কিন্তু অনিয়মিত ঋতুচক্রের ক্ষেত্রে হিসাবটা কিছুটা জটিল। মাসিকচক্রে ২৮/৩০ দিন পর পর যাদের পিরিয়ড হয় সেসব নারীরা পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ঘরোয়া কীট টেস্টের মাধ্যমে গর্ভধারনের বিষয়টি অবহিত হতে পারেন।
২। বমি হওয়া, মাথা ব্যাথা, খাওয়ায় অরুচি, শরীর দুর্বল, মুখে লালা (থুতু)—এ ধরণের প্রাথমিক সমস্যা দেখা দেয় অধিকাংশ নারীদের ক্ষেত্রে।
৩। পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা, ঘন ঘন প্রস্রাব, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়া, স্তনে ব্যাথা অনুভব, মেজাজ উঠানামা করা—অল্পতেই রেগে যাওয়া। হালকা স্পটিং বা রক্তপাত হওয়া, তবে অস্বাভাবিক মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
শারিরীর সমস্যাঃ
১। হালকা স্পটিং বা রক্তপাত হওয়া, তবে অস্বাভাবিক মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
২। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত বমি, মাথা ব্যাথা, বমি হওয়ার জন্য শরীর দুর্বল ও খাবারে অরুচি এসব ক্ষেএে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত কোন প্রকার ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা।
৩। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত ঔষধ সেবন করলে গর্ভপাতের সম্ভবনা বেড়ে যায়। এছাড়া গর্ভের সন্তান ও মায়ের শারীরিক নানা জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভ-পূর্ববর্তী টিকাঃ
১। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে কভিড-১৯ ভেক্সিন নিয়ে নেওয়া উচিত।
২। টিটেনাস টিকা।
৩। হেপাটাইটিস বি টিকা।
৪। রুবেলা টিকা।
এসব টিকা নেওয়া আছে কিনা, যদি না নেয়া থাকে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনার পূর্বে একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাতে গর্ভকালীন ও গর্ভ-পরবর্তী নানা রকম ঝুঁকি এড়ানো যায়। এক্ষেত্রে আপনার শারীরিক কোন জটিলতা আছে কিনা সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।
কেমন হবে গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যতালিকাঃ
মায়ের সুস্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে কেমন হবে গর্ভে শিশু। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী মতে–
১। কার্বোহাইড্রেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাত, রুটি, নুডলস, আলু, টোস্ট বিস্কুট, পাউরুটি কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস।
২। চাহিদার তুলনায় দ্বিগুন প্রোটিন নেওয়া যেতে পারে এসময়। মাছ, ডিম, দুধ হাঁড় ও দাঁত মজবুত করে। তাছাড়া ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
৩। ন্যাচারাল ফ্যাট, যেমন বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ডিমের কুসুম, মাংস ইত্যাদি।
৪। ফল, শাক-সবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা আবশ্যক।
৫। ভিটামিন- সি গর্ভাবস্থায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে আমলকী, লেবু, কমলা, মাল্টা, ফলের তৈরি ঘরে বানানো জুস নিরাপদ।
৬। প্রচুর পানীয় পান করা উচিত।
চিকিৎসকের কিছু পরামর্শঃ
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা বেগমের মতে, গর্ভাবস্থায় সঠিক ও সুষম খাবার খাওয়া যেমন অত্যন্ত জরুরি তেমনি কিছু কাঁচা খাবার (কাঁচা বা আধ কাঁচা মাছ, মাংস, ডিম) এড়িয়ে চলা আবশ্যক। তেমনি ধূমপান, মদ্যপান থেকে একেবারেই দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত হাঁটা ও গর্ভাবস্থার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম–ভারি কোন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কপি অনেকের পছন্দ–তবে দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কফি খাওয়া উচিত নয়। সেই হিসেবে এক কাপ কফি খাওয়া যেতে পারে। চিত হয়ে শোয়ার পরিবর্তে এক পাশে কাত হয়ে শোতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে অন্তত চারবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত যদি কোন জটিলতা না থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করতে হবে। এতে হাড়ের ক্ষয়রোধ হবে। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখলেই হবে না–মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। মন ভালো রাখতে নিজের পছন্দের ও শখের সাথে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। এতে করে মনে প্রশান্তি অনুভব হবে, যা কিনা মানুষিক সুসাস্থ্য নিশ্চিত করে। এছাড়াও পরিবার-পরিজনের সাথে সময় কাটানো যেতে পারে।
1 Comments
সুন্দর শেয়ার
ReplyDelete