মুক্তির পর হাসিম মাহমুদের “সাদা সাদা কালা কালা” গানটিকে দর্শক-শ্রোতারা খুব ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছে। বলা যায় দর্শক-শ্রোতারা বুঁদ হয়ে আছে। দেশের সর্বোস্তর, এমনকি দেশের বাইরের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যপক আলোড়ন তুলেছে গানটি। নিজের একান্ত সময়ে কিংবা ঘরোয়া আড্ডায় জায়গা করে নিয়েছে গানটি। কিন্তু গানটিতে আসলে কি এমন আছে? এর জনপ্রিয়তার কারণই বা কি?
সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখলে গানটির কথা খুবই সাধারণ। নেই কোন চমক। উপরন্তু গানের কথাও এলোমেলো। পঙক্তির সাথে পঙক্তির যোগসাজশবিহীন ভাবে এগিয়ে গেছে গানের কথা। এবং গানটিও নাতিদীর্ঘ। তবুও গানটি শ্রোতাদের আকর্ষণ করবার একমাত্র কথা ব্যাখ্যা হতে পারে খুবই সাধারণ চটুল কথা এবং সাধারণ গ্রামীণ মেঠো সুর। উপরন্তু গানের উপস্থাপনা বাড়তি আবহ যোগ করেছে। বাদ্যযন্ত্র হিসেবেও খুবই সাধারণ ভাবে খোমাককে ব্যবহার করা হয়েছে। কোন অতিরঞ্জন রাখা হয়নি। এসব মিলেই পোয়াবারো! গানটি হিট করে গেছে।
গানের জগতে কয়েক ধরণের শ্রোতা দেখা যায়। খুবই ভারিক্কি ধরণের তাল-লয় ঠিক রেখে গাম্ভীর্য বজায় রাখে। আবার আরেক ধরণের গান চটুল, সুরও খুব সাধারণ। পরের ধরণের গান খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে মুখ থেকে মুখে-আড্ডা আলোচনায়। কারণ এসব গান যে কেউ কণ্ঠে তুলে নিতে পারে খুব বেশি কসরত করা ছাড়াই। সুরের এদিক সেদিক হলেও খুব বেশি বেখাপ্পা লাগে না। তবে এসব গান কালোত্তীর্ণ হবে কি না সেটা ভিন্ন আলোচনা।
হাসিম মাহমুদের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো তিনি নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছেন। “সাদা সাদা কালা কালা” তাকে খ্যাতি এনে দিলেও শ্রোতা মহলে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন “তোমায় আমি পেতে পারি বাজি” গান দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গানটি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। মনযোগ দিয়ে শুনলে বুঝা যাবে সেখানও গানের কথায় এলোমেলো একটা ভাব ছিল। তবে কোথায় যেন ছোঁয়ে যায় শ্রোতাদের। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন “সাদা সাদা কালা কালা” গানটিতে। যা সহজেই তাঁকে আলাদা করে। মূলত হাওয়া সিনেমায় ব্যবহারের পরই তা শ্রোতা মহলে ছড়িয়ে পড়ে। হাসিম মাহমুদ বলেছেন, তাঁর কাছে এরকম গানের কম-বেশি নব্বইটি লিরিক্স আছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত সেগুলোকে শ্রোতামহলে পৌঁছে দেওয়া। এসব লিরিক্স বাংলা গানকে সমৃদ্ধই করবে।
গানটির ব্যাখ্যায় হাসিম যা বলেছেন তা রীতিমত বর্ণবাদী অভিযোগে আভিযুক্ত হবার মতো। তিনি বলেছেন লালনের আখড়ায় এক কালো (যাকে আমরা আদর করে শ্যামলা বলে থাকি) মেয়ে দেখেছিলেন। যার চোখ ছিল সাদা। সেখান থেকেই তিনি গানটি লিখেছেন। কারও গায়ের রঙ কালো হলেই আমাদের সমাজে তাকে কালো বলবার যে প্রবণতা-আধুনিক সমাজে আসলে তা ঘোরতর অন্যায়। গায়ের রঙ কালো হলেই কাউকে কালো বলা যায় না। তবে গানটির অন্য একটি ব্যাখ্যা হতে পারে কালো পাখি বলতে বসন্তের কোকিল। যা মানুষের প্রিয় এবং প্রেমেরও প্রতীক। প্রিয়াকে বসন্তের কোকিল হিসেবে তুলনা করাই যায়। পরেই ব্যাখ্যাটা শুনলেই আমার ভালো লাগতো।
তুমি বন্ধু কালা পাখি
আমি যেন কি ?
বসন্ত কালে তোমায়
বলতে পারিনি।
সাদা সাদা কালা কালা
রং জমেছে সাদা কালা।।
হইছি আমি মন পাগলা
বসন্ত কালে ..তুমি বন্ধু কালা পাখি
আমি যেন কি ?
বসন্ত কালে তোমায়
বলতে পারিনি।।
পিরিত ভালা গলার মালা
বল্লে কি আর হয়,
যারে ভালো লাগে আমার
দেখলে তারে চোখে নেশা হয় রে বন্ধু
চোখে নেশা হয়।
সাদা সাদা কালা কালা
রঙ জমেছে সাদা কালা।।
হইছি আমি মন পাগলা
বসন্ত কালে ..
তুমি বন্ধু কালা পাখি
আমি যেন কি ?
বসন্ত কালে তোমায়
বলতে পারিনি।।
1 Comments
কোকিলই মুক্তসঙ্গ মনে হয়।
ReplyDelete