“হাওয়া” সিনেমায় হাসিম মাহমুদের একটি গান নেট দুনিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদিও গানের কথা বেশ এলোমেলো। তবুও অসারণ উপস্থাপনা, সাধারণ সুর ও গায়কীতে দর্শক-শ্রোতার মনে জায়গা করে নিয়েছে “সাদা সাদা কালা কালা” গানটি। গত ২৯ জুলাই মুক্তি পেয়েছে “হাওয়া”। মুক্তির পরই দুই সপ্তাহের টিকেক অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। সিনেমাটি দেখে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন জুবায়ের ফয়সাল
চমৎকার একটা গান, অসাধারণ সিনেম্যাটোগ্রাফী ছাড়া হাওয়া আসলে হাওয়া হয়েই রইলো। না ভৌতিক, না অলৌকিক, না কমেডি, না রোম্যান্টিক, না অ্যাকশন, না ফিকশন! চিন্তার কোন জায়গাই নাই সেখানে। কি যে বানাইছে, একমাত্র পরিচালক, প্রযোজক আর গল্পকারই শুধু বলতে পারবেন। কোন স্টোরি নেই, সাসপেন্স নেই।
নায়িকার অভিযোগ তার বেদে সর্দার বাবাকে হত্যা করেছে মাঝি চরিত্রের ডাকাত চঞ্চল চৌধুরী। আর মাঝি চঞ্চলের অভিযোগ, নৌকায় যতো খুন হচ্ছে তার সবই কালাজাদুর প্রভাব। সে নিজের করা খুনকেও কালাজাদুর প্রভাব বলেই চালিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হলো কোন অভিযোগের দৃশ্যায়ন করা হয়নি সিনেমাতে। এমনকি নিস্পত্তিও করা হয়নি কোন অভিযোগের। কে ভিলেন আর কে হিরো সেইটাও বোঝা যায় না।
পুরো সিনেমাজুড়ে একমাত্র নারী চরিত্র তুষি। তুষিকে পেটখোলা শাড়ি আর বুকের একপাশ নানা কায়দায় প্রদর্শনের মাধ্যমে একটা সেক্সি লুক আনার চেষ্টা করা হয়েছে। যেন একটা পণ্য হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তার তথাকথিত ক্ষ্যাৎ (!) লুকটাই শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেছে। শিল্পিত উপস্থাপন হয়নি বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। যদিও মুভি শেষে তাকে সরাসরি দেখে আমার বেশ স্মার্টই মনে হয়েছে। আসলে ক্লিয়ার কনসেপ্টেড কোন কাহিনী না থাকলে যা হয় আর কি। অহেতুক সময় বাড়ানোর করার জন্য অগুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলোকে টেনে লম্বা করা হয়েছে বেশ কয়েক জায়গায়।
একটা নিম্নমানের সামুদ্রিক নৌযান আর জলদস্যু সংক্রান্ত ডকুমেন্টারিও এর চেয়ে অনেক থ্রিলে ভরপুর থাকে। বাচ্চাদের বইতে লেখা আজগুবি কল্পকাহিনীও এর চেয়ে মজার হয়। কিন্তু মুভিতে খুবই দৃষ্টিকটুভাবে গালাগালির বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছে। এইটাকে গালিগালাজের শর্টকোর্স বললে একেবারে ভুল হবে না। একটা মেয়েকে মাগী (!) বলে কতো অসংখ্যবার গালি দিলো, অকারণে, হুদাই—না দিলেও চলতো। এটা কি সত্যি গল্পের প্রয়োজন ছিল?
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নারীর সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট ও মানবতাবাদীরা এখানে নিরব। তারা প্রশ্ন তুলে না আধুনিক এই জগতে নারীকে এতটা নিচু ভাবে উপস্থাপন করা যায় কি না। কারণ, এর প্রবক্তারা উপরতলার সাংস্কৃতিক পীর। তারা যা করবেন সোকল্ড প্রোগ্রেসিভ সোসাইটি সেইটাতেই সহমত পোষণ করেন!
আবার এই সিনেমাটাকে কেউ কেউ রহিম-রূপবান কিংবা নাগ-নাগিনীর প্রেমের ডিজিটাল ভার্সনও বলতে পারেন। দেশের সকল মাধ্যম ব্যবহার করে চরম আগ্রাসী প্রচারণায় দেশের মানুষের ভেতর একধরণের কিউরিসিটি তৈরি করে হলে নিয়ে গিয়ে চুড়ান্ত প্রতারণা করা হয়েছে। আপনি স্বপরিবারে হলে দাওয়াত দিয়ে নিশ্চয়ই সিনেমার নামে গালি (স্ল্যাং) শুনাতে পারেন না। কিংবা নিজের গাটের টাকা খসিয়ে সাপ আর মানুষের অবাস্তব, অসম্ভব, কল্পনাতীত জড়াজড়ি আমি দেখতে চাই না। আমি আসলে “হাওয়া” দেখে প্রতারিত।
একটা জিনিস খেয়াল করেছি, আমাদের মিডিয়াপাড়ার উচুতলার সাংস্কৃতিক পীরদের কিছু বন্ধুবান্ধব আছে, তারাই এই মুভির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি, সিনেমা শেষ হতেই হলে হঠাৎ মুভির নায়ক-নায়িকা আর কলকুশলীরা উপস্থিত। সবাই বেশ উচ্ছ্বসিত, তাদের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। তারপর যখন হল থেকে বের হতে যাবো, ঠিক সেই সময় দরজার মুখে দেখা সাবেক সহকর্মী। খুব কাছের এক টিভি সাংবাদিক বড়ভাই আর তার ক্যামেরাপার্সন। উনি বক্তব্য নেবেন দর্শকের, তখন আমার বৌকে দেখে ওর ইন্টারভিউ নিতে চাইলেন, কিন্তু ও তো তখন পুরাই ক্ষ্যাপা। মুভি তো মোটেই ভালো লাগেনি। কিন্তু বড়ভাই বুঝিয়ে শুনিয়ে বললেন, নেগেটিভ বলা যাবে না, পজিটিভ কথা বলতে হবে! ও তো তাতে রাজী না। টিভিতেও আর চেহারা দেখানো হলো না বেচারির। কিন্তু এইটা বুঝলাম, গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে পেইড প্রমোশনের মাধ্যমে সিনেমা হিট করার জঘন্য নজীর এই সো কল্ড সেরা নির্মাতারাও করছে!
0 Comments