মালদ্বীপের নীল জলে ।। নিলয় কুমার ঘোষ



করোনা মহামারিতে থিতিয়ে যাওয়া বিশ্বের সাথে মনটাও থিতিয়ে গেছে। কাজের চাপ মুক্ত হয়ে মুক্ত বাতাসে একটু শ্বাস নেওয়া তাই জরুরি বোধ হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। তবে সময় বের করা অতটা সহজ নয়। ঈদের ছুটি সেই ফুসরত নিয়ে হাজির হল সহজেই। ভেবেই রেখেছিলাম মালদ্বীপ যাব। সবকিছু গুছিয়ে স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে উড়াল দিলাম। তবে ভাবিনি এতটা সুনীলে বিমোহিত হবো! হাজার দ্বীপের সমাহারে নীল জলরাশির এক অপার সৌন্দর্যের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের বুকে এক চিলতে ভূস্বর্গ। বাংলাদেশ থেকে কাছে ও সাশ্রয়ী হওয়ায় করোনা ও করোনা পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থান হিসেবে হয়েছে জনপ্রিয়। ভ্রমণপিপাসু মানুষেদের উপচে পড়া ভিড় ছিল তাই লক্ষ্যনীয়।

নীলজলরাশির তীর ঘেঁষা রিসোর্ট 

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সে সরাসরি মালে। মালদ্বীপে নেমেই শীতল বাতাসে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ মাফুশি দ্বীপ। আমাদের যাত্রা সেখানেই। ভ্রমণ গাইডের সাথে ইয়টে করে যাত্রা। বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি। অদূরে পাহাড়সবুজে আচ্ছাদিত, সমুদ্রের গর্জন, বাতাসের মধুর সঙ্গীত। সারিসারি পাখি উড়ছে, পেলিকন, ঈগল আরও কত কত অচেনা পাখি। ঘাঁই মেরে সমুদ্রে নামছে। কেউ ঠোঁটে মাছ নিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে আবার কেউ ব্যার্থ। আবার পানিতে চোখ রেখে উড়ছে শিকারের খোঁজে। জীবনানন্দকে মনে পড়ছিল খুব—  


যেই খানে মূক মায়াবিনীর কাঁকন শুধু বাজে

সাঁজ সকালেঢেউয়ের তালেমাঝসাগরের মাঝে!

               যায় না জাহাজ যেথায়নাবিকপায় না নাগাল যার,

লুঘ উদাস পাখায় ভেসে আঁখির তলে তার

               ঘুরছে অবুঝ সে কোন সবুজ স্বপন—খোঁজার কাজে!

রিসোর্ট থেকে সমুদ্রের নীল জলরাশি 

সমুদ্র যেন সব দেশেই সমানভেদাভেদ নেই। তাই হয়তো কক্সবাজার ভেবে ভ্রম হতে পারে। এখানকার পর্যটকরা বেশ সচেতন। সাগর তীর বেশ পরিষ্কারযেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হয় না।  আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। সারি সারি আকাশচুম্বী নারিকেল গাছ প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁয়। যেন নিরাপত্তার সাথে সাথে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। বিস্তৃত সমুদ্রে যতদূর চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি ও নীলাকাশের সুগভীর প্রণয় যা আপনাকে উদাস করবে। তবে সে উদাস ঘর-সংসার ছেড়ে বৈরাগ্য যাপনের নয়বরং আপনাকে প্রশান্তি দিবে, জীবন চলার পথে যোগাবে জ্বালানী আর রসদ। 


রাতের মায়াবী মাফুশি 

মালদ্বীপের এই অংশে বেশ বাংলাদেশি বাস করেসংখ্যায় প্রায় ৫০ হাজারের অধিক। মাফুশি থেকে শেরাটন ফুলমুন রিসোর্টের ভ্রমণটা ছিলা আরও দৃষ্টিনন্দন। রিসোর্ট থেকে রাতের নির্মল আকাশ,তারকারাজি আর বিশাল জলরাশির মিতালিসে এক নৈসর্গিক দৃশ্য। নীল জলরাশির ঢেউ আঁচড়ে পড়া সৌন্দর্য সত্যি এক স্বর্গীয় অনুভূতি। এখানকার ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্ত্বার আটটি রেস্তুরায় ভোজন রসিকের উৎকৃষ্ট আকর্ষণ। সামুদ্রিক মাছ ইচ্ছে মতো নির্বাচন করে পছন্দ মতো ম্যানু তৈরি করিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়াও আপনি যদি একটু সাহসী হন তবে লাইফ জ্যাকেট পরে নেমে যেতে পারে সমুদ্রে। রিসোর্টে রাত্রি যাপনও প্রশান্তিরসমুদ্র আপনার সব জড়তা আর কাজের চাপে জং ধরা মনটাকে ফুরফুরে করে চনমনে করে তুলবে। নতুন উদ্যমে কাজে ফিরতে ফিরতে অজান্তেই মন বলবে, হে নীল জলরাশি ধন্যবাদ তোমায়—সময় পেলে আবার দেখা হবে। 

স্কুবা ড্রাইভিং এর মতো সমুদ্রে সাঁতরে বড়াচ্ছেন লেখক 


Post a Comment

0 Comments