তোমাকে লেখা কবিতা ।। রাখী সরদার


প্রথম দু'টি পঙক্তি

বধূর নুপুরের চেয়েও ধীর,শান্ত

 

এলোচুলে শবরীনদী দাঁড়িয়ে

পাড় ভাঙার শব্দে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বনি...

 

তুমি কেমন এলাচনয়নে তাকিয়ে

 

পরের পঙক্তি টি

তোমার বুকে মুখ ডুবিয়ে

 

পাথুরে জমিতে ঝরে পড়ছে

শাওন মেঘের ফোঁটা

 

তুমি তখন নিবিড় নিবিড় হাওয়া

 

শেষ পঙক্তি যেন

গৌরহরির বিষ্ণুপ্রিয়া, কেঁদে 

কেঁদে লুটিয়ে পড়ছে ভুঁইয়ে ...

 

তুমি পূর্ব নাম ভুলে নব প্রিয়ার

নয়ন পথগামী

            

অথচ সেই পূর্ব বসন্ত

 

কতকাল ঠোঁটে ছোঁয়াওনি কূপের

 জলের আনন্দিত চাঁদ

 

তুমি আরেকটু কাছে বসলে

অচেনা শব্দগুলো আর্যাবর্তের ঘোড়া তাদের সোনালী কেশরে হাত বুলালে

 

তোমার মুখ বনখেজুরের ছায়া

 

আরবকন‍্যে একমনে 

মরুফুলে ঢেকে নিচ্ছে নাভি কুন্ডের

টানাগদ‍্য।

 

খোলা কোমরের বাঁকে কী ভীষণ

বালুঝড়!

 

তোমার চোখে মুখের ধ্বনিতে তখন

বাতাস ভেঙে চুর চুর

 

কেন এতদিন গ্রহণ করোনি?এই

প্রশ্ন নিয়ে তোমার বিছানায় 

আলুথালু শুয়ে অসামান্য সব চিত্রকল্প—নারী।


ছায়ার পরিবর্তে এই উন্মাদ সূর্যোদয়

 

আলোর কথাটুকু নিয়ে

উড়ে আসে স্নানমুগ্ধ দুপুর

 

 

কে আছো? নিয়ে চলো অসামান্য

 সে স্নানের কাছে... জল গড়িয়ে

গড়িয়ে

 

তোমার বুক টলটলে পুকুরতল

 

ভেসে আছে

 পদ্ম -দেহে বহুকোটি সর্বনাম

 

এতটুকু স্পর্শ পেলে

সেসব 'তুমি' 'আমি' নিজেদের গোত্র

ভুলে উল্টে থাকা নিদারুণ শামুক

 

 

ওই যে নিঃস্ব পাখিটি

চাঁদ-পালকে ধরে আছে আলো 

কিরূপ ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে তাকে ওড়াই?

 

ঝিকিমিকি মেঘের ছায়ায়

অরন্যের নীল সম্মোহন... কত

অন্ধকার পেরিয়ে ফুটেছে দারুচিনি ফুল 

 

শ‍্যাম-কম্বোজের অবগুণ্ঠনবতী লীলা

কুড়িয়ে নিচ্ছে আশ্চর্য সুবাস

 

তুমি যেন ভিজে বাতাস

 

 কাঁকনখোয়া হাতে খেয়ে চলেছ

শত শত চুমু

 

 

তোমার বুকে হাত রাখতেই 

ধেয়ে এলো নৈরঞ্জনা নদী...

চক্ষুসীমা দূরে আশ্চর্য এক গাছ

 

তুমি নিজের গভীরে

এতটাই শান্ত, উদাসীন!

 

নদীর পাথরচিত্রে জমে উঠছে 

বুকের রোদন ...

 

কত সন্তাপ পেরিয়ে তোমার জন্য

এনেছি প্রণয়—পায়সান্ন

 

এসো,হাত ধরো

 

আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে

তুলে নাও মধুর আস্বাদ‌।

          

            

ভোরের মৃত্তিকায়

নীচুস্বরে উঠে আসছে দূর্বার শপথ

 

শান্ত শুকতারাটি তখনও

সুবর্ণ শরীরে নুয়ে মহাকাল মন্দিরের পরে

 

মরণের পূর্বে

যেমন জ্বলে ওঠা মাটির প্রতিমা

 

মনে পড়ে?

একদা নিবিড় ভোরে

তোমার উঠোনে নেমেছিল 

                              মনিকাঞ্চনার রথ

 

সে নারী পূর্বাপর কীর্তিনাশা। বুকের ওড়না সরে থিরিথিরি বিভঙ্গ লহরী... 

 

 গভীর সংরাগে মনে 

 মনে তুমি তার কাঁচুলি উপকথা...

 

 

সামান্য দেখার অন্ধকারে

কত মুখ দশমীর 

সন্ধে...

 

আবছা হয়ে আসে কত

বিভোল চিবুক

 

তবু দৃষ্টির ঘোরে

কোনো কোনো মুখ পারিজাত ভোর

ঠোঁটের কুঁড়ি চুঁইয়ে

 

ছড়িয়ে পড়ছে রোদ্দুর...

 

আকাশ হয়ে উঠছে আবির রঙ শাড়ি

 

এমন দেখার কাছে  তুমি

 বিশ্ব প্রেমিক‌। বুকের নির্জন অবধি

 

 খুঁজে যাও সে কোন নন্দিনী!

 

 

দীর্ঘ আকাল শেষে 

ময়ূর-সঙ্গমের মেঘ। মাটির বসনে

ফোঁটা ফোঁটা আলগা অভিমান

 

চারিদিক বর্ষাকালীন কদমের সুবাস

 

এমন আকুল করা দিনে

তোমার কথা ভাবলেই হৃদয় যেন

মজে যাওয়া খাঁড়ি...

 

স্রোত নেই—জল নেই ...

 

বিষণ্ণ কাদায় আটকে একাকী

নৌকাবিলাস...

 

তুমি বহুকাল শাল্মলী দ্বীপে

 

পাখিসাঁতারে জোয়ার তোলো

তন্বী শ‍্যামা শরীরে।

 

 

তোমাকে নিয়ে অনেক কথাই হয়

 

তুমি হয়তো নাটকলেখক...

কোনো কোনো মহৎ দৃশ‍্যে

ধরে রাখো রতিপ্রিয় মগ্ন হাঁস।

 

কেউ বলে তুমি মাত্রাভুলের কবি

ধুলো ও ভাঙনের পথে অহরহ

বিষাদ লেখো

 

কেউ ভাবে তুমি শান্ত সন্ন্যাসী

ত‍্যাগ ও তিতিক্ষায় চলে গেছ

দূর,সুদূরে...

 

কেবল আমিই জানি

তুমি ভালোবাসো নারী ও নক্ষত্র

 

যুগ যুগ সুতনুময় সুতানুকার

আত্মার জোছনায় আছো বন্দী...

 

মাঝে মাঝে রাতে জোর হাওয়া দিলে

সে গন্ধর্ব রমণীর কোমল স্তন থেকে

 

উড়ে আসে চেনা পুরুষের শিষ ...

 


১০

অনর্গল কথার হাওয়ায়

ডুবে যাচ্ছে

 

নীল ময়ূর,চন্দ্রালোক এবং

একটি নরম সম্পর্ক...

 

কাকে যে বাঁচাই!

 

তামাকের বন ঘেঁষে মুখ উঁচিয়ে

যে স্বর্ণ-নেউল,চোখে তার ঈর্ষার দাগ

 

চাঁদমনি,তোমার সুদর্শন আয়ু

বুকে লিখে রেখে 

                  কতবার প্রতারিত হয়েছে

                  সে তীর্থবতী নদী ...

 

ওগো সুন্দর,তুমিও

বাঁধা কোনো মায়াবী আদরে, যে

 

 কাজল ইশারায় ছেড়েছো এ স্পর্শের আঙুল ...সবকথা মুছে গেলে

 

তোমার স্বপ্নভূমে দাঁড়িয়ে 

চুল ঝাড়ে বিন্ধ‍্যবাসিনী সে সুন্দরী।

 

 

 

Post a Comment

0 Comments