কাওয়ালি ধর্মীয় গান নয় ।। ফারুক ওয়াসিফ

ফারুক ওয়াসিফ 

কাওয়ালিকে ঠেলে পুরান ঢাকায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল সেই পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দার ভাষা আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন ঢাকা ছিল গানের আর বাগানের শহর সেই শহরে শাহবাগ,    পরীবাগ, সেগুনবাগসবুজবাগআরামবাগলালবাগগোপীবাগরাজারবাগমালিবাগসোবহানবাগ এইসব ছিল চল্লিশ দশকেও গানে ভরপুর ছিল ঢাকা দীপেন্দ্রেনাথ বন্দোপাধ্যায়ের লেখায় পাচ্ছিবুদ্ধদেব বসুর লেখায় পাচ্ছি এটা ছিল বাগান আর হারমোনিয়ামের শহর


সেইখানে টিএসসিতে গানের জলসায় যারা হামলা করেছেতারা তাদেরই দলে যারা বাউলের চুল কাটেরবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করে। তোপুরান ঢাকায় ঢুকিয়ে দেয়া কাওয়ালীকে সংস্কৃতির মূল মঞ্চে আসতে হলে বাধা তো আসবেই। সংস্কৃতিই আসল যুদ্ধক্ষেত্রএটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য হামলাবাজদের ধন্যবাদ। এইই চলছে।আমাদের দেশে। সেই ষাটের দশক থেকে

কাওয়ালী ধর্মীয় গান নয়। ভাষা আন্দোলনে সামিল কুট্টিরা কাওয়ালী ভালবাসে। এই হামলা তাদের ওপরও বর্তায়।

হামলার রাজনৈতিক আলাপের আগে জরুরি হলোফৌজদারি আলাপটা করা। যদি ছাত্রলীগ করে থাকেসেটা কোন অংশতাদের গডফাদার ও দেশি-বিদেশি মদদদাতা কারা। যারা আবরারকে হত্যা করেছিল সেই অংশটা?কাওয়ালী কেন এখন এত প্রাসঙ্গিক হলো সেটাও জানা দরকার। কারা আয়োজক ছিলতাদের উদ্দেশ্য কী ছিলগণবিরোধীদের দাপট ভাংতে সামাজিক হেজিমনি তৈরির অস্ত্র হিসেবে কাওয়ালিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল কি?আর তার বিরোধিতায় কীভাবে ফ্যাসিবাদী আর ওয়াহাবীরা আবার তাদের ঐক্যের জিগীর নবায়ন করলো?


কাওয়ালী ধর্মীয় গান নয়। ভাষা আন্দোলনে সামিল কুট্টিরা কাওয়ালী ভালবাসে। এই হামলা তাদের ওপরও বর্তায়। ঢাকায় ভাটিয়ালিও নাইভাওয়াইয়া নাইজারিসারি নাইযাত্রাগান নাই। এই ঢাকায় স্বদেশী পাহাড়িদের কনসার্টও নিরাপদ থাকলো না। কাওয়ালী হামলার পরে। খালি ওয়াজ আর ওয়াজ আর আতশবাজির হিন্দি-লেডি গাগা এখানে চলবে। আর কিচ্ছু না। 


ঢাকা কার শহরকার রাজধানী সেই প্রশ্নটা মনে জাগছে। কাওয়ালীর দমক শরীরীতা আত্মাকে দেহের ওপর জাগায়ভয় সেখানেই। শরীরকেই ভয় তাদের


সবচে বড় কথাএত বড় জমায়েত যে দর্শক হতে গিয়ে পলাইলএদের নিয়া কই যাব আমরাএই নিষ্ক্রিয়তার দর্শন আর অশরীরী জনতা ইজ পার্ট অব দি প্রবলেম

 


ফারুক ওয়াসিফঃ লেখক ও সাংবাদিক 


Post a Comment

0 Comments