খাগড়াছড়ির চিম্বুলইঃ বাংলাদেশের দূর্গম পাহাড়ি সীমান্ত

চিম্বুলই পাহাড়

সাজেক থেকে নির্মাণাধীন সীমান্ত সড়ক ধরে এগিয়ে গেলে উদয়পুর ঘাট। উদয়পুর থেকে সীমান্ত ধরে করল্যাছড়া, গন্ডাছড়া, উদলছড়ি পার হয়ে চিম্বুলই। অন্য রাস্তাটি হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশকে বিভক্তকারী সীমান্ত নদী। নদী যদি কোন দেশের সীমান্ত হয় তবে সেই নদী দুই দেশই ব্যবহার করতে পারে।  তবে সাধারণ মানুষ সে নদী ব্যবহার করে না। নভেম্বর ২০২০ সনে বিজিবির একটি দল নদীটি ব্যবহার করে প্রথম চিম্বুলই বিওপিতে যায়। 

 

নদী পথে প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। কোথাও পাথুরে নদীতে আটকে যায় নৌকা, কোথায় গাছ কিংবা বাঁশ পড়ে, কিংবা পাহাড় ধ্বসে প্রতিবন্ধক তৈরি করে। সীমান্ত সড়কবিহীন চিম্বুলই হেঁটে যেতে প্রায় ছয় দিন সময় লেগে যায়। তাই যত প্রতিবন্ধকতাই হোক না কেন নদী পথে একদিনেই চিম্বুলই ক্যাম্পে পৌঁছা যায়। তাই নদীকেই বেছে নেন বিজিবি সদস্যরা। 

 

নদীপথে যেখানে নেমে চিম্বুলইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয় সেখানে কোন জনবসতি নেই। নদী থেকে তিন-চার ঘণ্টা পাহাড়ি পথে হেঁটে পৌঁছাতে হয় চিম্বুলই ক্যাম্পে। কোন জনবসতি না থাকায় নির্দিষ্ট কোন পথও নেই। সম্প্রতি বিজিবির সদস্যরা পাহাড় কেটে পথরেখা তৈরি করেছে। কোথাও আন্দাজ করে হেঁটে যেতে হয়।

 

চিম্বুলই পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে 

স্বাধীনতার পর দীর্ঘ বছর অরক্ষিত ছিল এই সীমান্ত। এই গহিন জঙ্গল মিয়ানমার আর ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদীদের দখলে বলে ধারণা করা হয়। বিজিবি ২০১৩-১৪ বছরে সেখানে ক্যাম্প বসিয়েছে। চারপাশে ঘন কুয়াশায় আবৃত। আর দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধি হয়ে বিজিবির সদস্যরা অতন্ত্র প্রহরী হয়ে পরিবার ছেড়ে এখানেই কাটিয়ে দেয় বছরের পর বছর।   জঙ্গলে ঢাকা গহিন চিম্বুলইয়ে সূর্যও যেন লুকোচুরি করে। সারাদিনে সূর্যের খুব একটা দেখা মেলে না। মেঘ উড়ে বেড়ায় পাহাড়ে মাথা ছুঁয়ে। কখনও ঝুপ করে সূর্য ডুবে যায়, অঝুর ধারায় ভিজিয়ে দেয় চিম্বুলইয়ের চূড়া। ক্ষণেই মেঘ আবার ক্ষণেই বৃষ্টি। শুধু কি বৃষ্টিই ভেজায় চিম্বুলইয়ের চূড়ার বিজিবি সদস্যদের? পরিবার-পরিজন ছেড়ে এই দূর গহিন অরণ্যে হৃদয়ের বাষ্পও ভেজায় তাদের। আর এই ভেজা আর শুকানোতেই রক্ষিত হয় দেশের সীমান্ত।   


চিম্বুলইয়ে বিডিআর ক্যাম্প



 

Post a Comment

0 Comments