সত্যি, তুমি নাওনি?
নিয়েছো জীবনের রঙ, শুধু নাওনি আমার প্রাণ!
পলিমাটির ঘ্রাণ মেখে ছুটেছিল যেসব পঙ্গপালের রাখাল
আমি তার পথঘাট—গচ্ছিত ঘাসফুল—বাঁশির সুর
অতিযত্নে লাকড়ি অভাবই নারীর
শুকনো পাতার মতো জড়ো করে রাখি
তারার সাথে জেগে—আঁকা-বাঁকা সরু নদীটির শরীর ঘেঁষে
ক্লান্ত ঘন হিজলের বেহিসেবি সখিতা কিশোরীরাত
স্মৃতির আকাশে সিঁদুরে মেঘে আজো জমা হয়ে আছে।
খুব শখ করে শিশুর মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখা
খুচরো পয়সার মতো টুংটাং বেজে ওঠো তুমি
বাউশালার ভাঙা কালভার্ট পার হতে হতে
জলে ছুড়ে দিতে অন্য কোনো যুবকের—না পড়া চিঠি
অর্থহীন মেঠো তর্কে মেতে থাকা
উথাল-পাথাল—সেইসব তুমুল দুপুর
পবিত্র সম্মানে চুম্বিত আসমানি কিতাবের মতন
আমাকে সীমাহীন বিশ্বাসী করে তোলে।
মুচকি হাসে হারানো নাকফুল
ভেঙচি কাটে—পুরোনো রূপোর বাজু—পায়ের ঘুঙুর
অভিমানে আমার ঠোঁটে ফুলে ওঠে টেপা মাছের পেট
চোখ দিয়ে দীর্ঘশ্বাসের ট্রেন বুকের প্লাটফর্মে
ছুটে যায় মুমূর্ষু হুইসেল বাজাইয়ে
এভাবে মখমলের মতো রক্তিম ভোর
একটি খয়েরি ডানার মোরগের ডাকে
কিছু উটকো কাকের অশনিসংকেতে
কিংবা ক্ষেতে খাটা মানুষের কপালের ঘাম
পায়ের ধূলিতে ঝরে পড়ে জীবনের ঘুরঘুর
কচুপাতা রঙে আমার গচ্ছিত প্রীতির শিশির
মানুষের পায়ে পায়ে ক্ষয়ে যাওয়া দূর্বাঘাসের পথের শরীর
সিঁথিকাটা চুলের কথা মনে করিয়ে দেয়
ধূসর রঙের ঘুঘুপাখি ডাকার মতো তোমার বাচনভঙ্গি
আর চড়ুইপাখির উড়ন্ত দুষ্টুমি
বলো—এসব কীভাবে ভুলি?
দুপুর তোমার ঠোঁটের পিপাসা বাড়িয়ে দেয়
বৈকাল শুয়ে থাকে আমজাদ খালুর উচ্ছেফুলের মাচানে
গেরুয়া গোধূলির আস্তলামিত সূর্য—গাভিন গম ক্ষেতে
কোন কোন দিন—তোমার সিঁদুর টিপে লেপ্টে থাকে হলুদ সন্ধ্যে
আরো মনে পড়ে—তোমায় মনে পড়লে আর কী কী করি?
গভীর-ঘন রাত—জানালার পাল্লা চুপি চুপি খুলি
কদবেলের দোল খাওয়া পাতা দেখে মুর্ছিত হই
তোমার পুরনো চিঠির বাক্স খুলি,
ধুলায়িত হলদে খামে আঙুল বুলাই
চিঠির সাথে লেগে থাকা গোলাপের দাগ
ভাঁজ খুলতে খুলতে চোখে জল জমে
এরপর সশব্দে পড়ি—যেন আমার কাছে কেউ শুনতে চাচ্ছে
তোমার অমোঘ ঐশী বাণী—
‘ওয়াহিদ, বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া’
এই লাইনটা নীল রঙ পেন্সিলে
দাগি আসামির মতো চিহ্নিত করা
রাতে ডাকা দর্পিত পতঙ্গের মতো নেমে আসে গলা
যেন হঠাৎ এক সাথে বন্ধ হলো ঝিঁঝিঁর ডাক!
অথচ জীবন বুঝায়ে দিলো—সে কতোটা স্বর্ণখচিত স্বপ্নমুখর
কাউকে ছাড়া দণ্ডিত যাপনেও বড্ড বাঁচা যায়!
তবু তো এমন দিনে—নতুন করে জন্ম নিতে ইচ্ছে করে-
সব নিষেধের আগুনে মন চায় ঘি ঢেলে দিই
রাতজাগা পাখির ডানায় অতীত ঝাপটায়
মসজিদের কাঠের মিনারে দাঁড়ায়ে
তোমার কপালে চুমু খাওয়ার দৃশ্য
আমাকে করে তোলে বেহেশতি আদম!
আতকা কোথায় নিশি পাখি ডেকে ওঠে
শরীরের লোমকূপে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে
ঠিক সেই পোথম রাতের মতো
দুইজনে ভিজে একাকার
তবু কিছুতেই কিছু হলো না—
কিন্তু যেন তুর পাহাড় পেরিয়ে এলাম
তুমি আল্লাওয়ালি আমি মাংসের লাঠিতে বীর্যময় মুসা!
তোমার গন্ধম দর্শনের পর
এঁর কোনো হাওয়া, খাওয়া দরকার নেই
গভীর রাতে ভরা পুকুরে রেখে এলাম নাপাক
মুয়াজ্জিন সেই জলে অজু করে হলো পাক!
জগতের মানুষ—তৈয়ার করে পাখির হৈ-হুল্লোড়
মসজিদে আজান হলে বৃক্ষরা নমিত হয় সিজদায়
শিঙায় ফুঁক দেয় উদয় স্যারের মা
সূর্য ভুবনের পেট থেকে পিঠে নেমে আসে
এঁর আমরা আলোর ভয়ে পৃথক হয়ে গেলাম
আথচ অন্ধকারেই ছাড়তে হয় আলোর বীজ!
যখন কলেজ বালিকা ছিলে হিজলডাঙ্গার ছায়ামাখা গায়ে
রোদের ওড়না বুকে জড়িয়ে আমিও উড়েছি কবুতর হয়ে,
তোমার কল্পিত কামিজের ঘিয়ে রঙের বোতামে
পোথম যে-দিন গোলাপ দিলে— ‘ভালোবাসা ভালো থেকো’
তার আগেই প্যেছিলাম মনের আলাপ
উষ্ণ ঠোঁটে ছুঁয়ে চোখ—অপলক বাক্যবিনিময়।
চারিদিকে মৃদু গনগনে—মাতাল মাঘের জোছনাচাদর
জলহীন পুকুরের নাভি—পাড়ি দিয়ে রাতের তাবৎ আঁধার
একঝাঁক গেঁয়ো কুকুর ছায়া দেখে ডাকে
ভয়মিশ্রিত সতর্ক সংকেতে তোমার জানালায়
হালকা—গভীর আঙুলের টোকা
পড়ার টেবিলে হারিকেনের হালকা ময়লা আলোয়
তুমি জেগে হাসো—হায়রে প্রেমিক বোকা।
ঘুমকাতুরে চোখে, মুখে কাঁচাঘুমের গন্ধ মেখে
চুমুকে চুমুকে রাত ভোর করা
পাষাণী মনের চরে পলি জমে ভরাট—উপুড় নদী
হাহাকারে পুড়ে যায় সুরেলা সম্পর্কের তান
নিঃসঙ্গ কোলাহলে হারিয়েছে জীবনের গান
পান করি বিষাদের স্বর অ সুর
উর্বর সভ্যতা নিয়ে বেঁচে যায় আত্মগ্লানির ইতিহাস।
বসে আছি অলৌকিক শব্দহীন শূন্য চরাচর
তার নীল পাখি ওড়ে হলুদ পাখনা নিয়ে
কুসুম রঙের পালক ফেলে ছায়াদের ঢেউ
কাদামাখা ধানক্ষেতে ফেলে আসা মলিন পায়ের চিহ্ন
চৈত্রের দুপুরের মতো ছটফট করে অপেক্ষা
আর তোমার ঠোঁট লাল হয় অহংকারে
জমে আছো দারুণ উল্লাস নিয়ে
উজানি স্রোতে তুমুল উত্তেজনা মেখে
ফিরে আসি নতুন মাছের সাঁতারে
দূরত্বের মাপকাঠিতে বাঁধি চেতনার ফিতে
কচুরিপানার ফুলে
সোনালু ফুলের দুলে
ভুল দোলাচালে পৌঁছে যাবো তোমার কাছে
ম্যাচের বাক্সে শুয়ে ঘুমন্ত বারুদ
তার সাথে ভারী সখ্যতা ছিলো
জীবনের কোছে গচ্ছিত পাপ
পৃথিবীর প্রতি সুন্দরী অবহেলা
সিন্দুক হারানো চাবির মায়া
কারো প্রতি কোনো অনুযোগ না রেখে
দাঁড়ায়ে থাকবো আমি গৌরবের রাজহাঁস!
ভিক্ষার প্রেমপাত্রে বিষ দিও
সেও ভালো—তবু আমাকে জানতে হবে—
কতোটুকু প্রেমিক হলে…
এই লেখকের আরও লেখা...
0 Comments