শুক্লপক্ষ ডেস্কঃ
শান্ত, পরিপাটি আর অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের জন্য থাইল্যান্ড বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একটি দেশ। এছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি দেশটিকে করেছে সমৃদ্ধ। তাইতো অবসর যাপনে, বিনোদনে, প্রাকৃতিক নিসর্গকে উপভোগ করতে থাইল্যান্ডের থাইল্যান্ড অতুলনীয়। দেশটি ঘিরে আছে সমুদ্র সৈকত আর অসংখ্য দীপপুঞ্জের জন্য দ্বারা। শুধু এশিয়া নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অবসর যাপনে, ভ্রমণে কিংবা হানিমুনে সুন্দর সময় কাটাতে পর্যটকেরা চলে আসে থাইল্যান্ডে। অন্যতম দর্শণীয় স্থানের মধ্যে আছে গ্র্যান্ড প্যালেস, পাতায়া সৈকত, ওয়াট ফো, ওয়াত অরুণ, ফুকে দ্বীপ, কো ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ, নর্দান হিল ট্রাইবস, চিয়াং মাই, সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড প্রভৃতি।
গ্র্যান্ড প্যালেস:
ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য শিল্পের জন্য ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেস সুপরিচিত। চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা প্যালেসটি। ফলে পর্যটকদের ভিতর এক অজানা আকর্ষণ কাজ করে ভিতরের রহস্য আর সৌন্দর্য উন্মোচন করবার জন্য। রাজা রামা-১ (ফুতথ্যায়তফা ছুলালক) প্যালেসটি নির্মাণ করেন ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি রাজদরবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানেও প্যালেসটি বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয় এবং প্রতি বছর রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠান প্যালেস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। প্যালেসের ভিতরের মন্দিরে সবুজ বর্ণের বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রাজ্যাভিষেকের পটমণ্ডপ, রাজকীয় অলংকরণ ও মুদ্রা যাদুঘরে মুদ্রা, রাজপোশাক, অলঙ্কারাদি, রাজ দরবারে ব্যবহৃত রাজকীয় অলংকরণদি রয়েছে।
ওয়াত অরুন:
ওয়াত অরুন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের একটি তীর্থ স্থান। এটি ‘ঊষার মন্দির’ হিসাবেও পরিচিত। সকালের প্রথম সূর্যালোক মন্দিরের গায়ে পড়লে মুক্তার মতো আভা বিকিরিত হয়। এই মন্দিরটি হিন্দু দেবতা অরুণের নামে নামকরণ হয় সতেশ শতকে। তবে মন্দিরের প্যাঁচানো কাঠামো তৈরী হয়েছে রাজা তৃতীয় রামার সময়কালে। মন্দিরটি তার কৃতিত্বের স্তম্ভগুলির জন্যও সুপরিচিত, যেটি ক্ষমের শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি ব্যাংককের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। সূর্যাস্তের সময় মন্দিরটির গায়ে গোধূলিঢ় আলো পড়ে এক মনোরম দৃশ্যের অবতারণা হয়। চাও ফ্রায়া নদীর পশ্চিম তীরে থোনবুড়িতে একটি রেস্তোরাঁয় বসে রাতের খাবার খাওয়ার সময় ওয়াত অরুণের মায়াবী রূপও উপভোগ্য।
ওয়াত পো:
ওয়াত পো ব্যাংককের আরও একটি ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির। ওয়াত পো থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ছয়টি রাজকীয় মন্দিরের মধ্যে প্রথম। রাজা রামা-১ এটি অন্য একটি মন্দিরের জায়গায় পুনঃনির্মাণ করেন। পরবর্তীতে রাজা রামা-৩ এটি সংস্কার করেন। এখানে গৌতম বুদ্ধের বিশালাকার শায়িত মূর্তি আছে যা ছেচল্লিশ মিটার লম্বা। আধশোয়া এ মূর্তিটি সম্পূর্ণ সোনার পাতে মোড়া এবং চোখ ও পা দুটি মুক্তো দিয়ে তৈরি।
পাতায়া সৈকত:
পাতায়া এশিয়ার অন্যতম বড় সৈকত। ব্যাংককের পরেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক পায়াতায় ভ্রমণ করে। এই সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র, সৈকতে ভেসে বেড়ানো রঙ-বেরঙের বাহারি নৌকা আর পেছনে দেয়াল তোলে পাহাড়ের সারি আপনাকে দেবে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি। সাজানো গোছানো পাতায়ার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য। ব্যাংকক থেকে পাতায়া ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পুবে। এখানে রয়েছে মনস্টার অ্যাকুরিয়াম। এখানে বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক প্রাণী যেমন হাঙ্গর ও গভীর সমুদ্রের অন্যান্য মাছের চলাচল দেখার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
ফুকেত:
ফুকেত থাইল্যান্ডের অন্যতম পুরনো দ্বীপ শহর। ব্যাংকক থেকে ফুকের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। অসামান্য সমুদ্র সৈকতের জন্য ফুকেতের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। ফুকেত দ্বীপে রয়েছে অনেক নান্দনিক সৈকতমালা। সাগরের নীল জলরাশি, বন ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সৈকত, সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ সৌন্দর্যের অনন্য করে তুলেছে ফুকেতকে। সৈকতের পাশাপাশি ফুকেতের আরেকটি সৌন্দর্য হলো আন্দামান সাগরের ভেতরে চুনাপাথরের পাহাড়। বৈচিত্র্যময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়।
চিয়াং মাই:
চিয়াং মাই থাইল্যান্ডের প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় শহর। চিয়াং মাই অর্থ নতুন শহর। এটি ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ঘেরা শহর চিয়াং মাই। চিয়াং মাইকে বলা হয় থাইল্যান্ডের উত্তরের রাজধানী। বাণিজ্যিক ভাবে চিয়াং মাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আছে সংস্কৃতি এবং অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ। বিভিন্ন উৎসবে চিয়াং মাই সাজে বর্ণীল ভাবে। এখানে আছে পাঁচশতাধিক মন্দির। রয়েছে সুদৃশ্য জঙ্গলের ভেতরে হাইকিং ও খরস্রোতা নদীতে র্যাফটিং করার সুযোগ। থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ডোই ইথানান রয়েছে চিয়াং মাইতে। পাহাড়ি উপজাতি, অসংখ্য জলপ্রপাত, থাই হাতির অভয়ারণ্য সব মিলিয়ে অসাধারণ এক জায়গা চিয়াং মাই।
ভিসা
থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে থাই দূতাবাসে। থাই দূতাবাস ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে। থাই দূতাবাসে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। ব্যাংকে কমপক্ষে ষাট হাজার টাকার বেশি জমা থাকলে ভালো হয়। আর ফ্যামিলি ভিসার জন্য এক লাখ কুড়ি হাজার টাকার অধিক থাকতে হবে।
আপনি যদি স্টুডেন্ট হন তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লিভ লেটার দিতে হবে আর অভিভাবকের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট দিতে হবে। সাথে আপনার অভিভাবক আপনার ট্যুরের খরচ দিচ্ছে এমন একটা লেটারও দাখিল করতে হবে। সাথে অভিভাবকের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিতে হবে।
সিঙ্গেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য ৩৭৪০ টাকা ভিসা ফি জমা দিতে হয়। দূতাবাসে ভিসার কাগজ জমা দিতে গিয়েই ফি জমা দিতে হবে।গুলশান দূতাবাসে গিয়ে জমা দিতে হবে সব পেপার। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক জমা নিয়ে থাকে।
পাসপোর্ট জমা দেবার পর ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। নিজে সাবমিট করলে দ্রুত পাবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে এমব্যাসি থেকে ফোন দেওয়া হবে। কল দেবার কারণ হলো ভেরিফাই করা আপনি ভিসা জমা দিয়েছেন কিনা? কেন যাবেন? দেশে কি করেন? এসব জিজ্ঞেস করবে। অনেকটা ভিসা ইন্টারভিউ বলা যায়। প্রথমবার ভিসার ক্ষেত্রেই তারা কল দিয়ে থাকে।
থাইল্যান্ড তিন মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করে। এই তিনমাস হল আপনার থাইল্যান্ডে ঢোকার জন্য নির্ধারিত সময়। এই তিন মাসের মধ্যে যেদিন ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিন বা ২ মাস থাকার অনুমতি পাবেন। আপনি যেদিন থাইল্যান্ডে ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আবার যদি থাইল্যান্ডে আসতে চান তবে থাইল্যান্ডের রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে পারেন।
1 Comments
Jete hobe.
ReplyDelete