পাহাড়ের রাণী ভুটান

 থিম্পুর তাসি চু মঠ ছবিঃ সংগৃহীত  

শুক্লপক্ষ ডেস্কঃ 

ভুটান সবুজ পাহাড়ি সৌন্দর্যের মায়াজাল ছড়ানো এক চমৎকার জনপদ। মাত্র আট লাখ মানুষের দেশ ভুটান পুরোটাই পাহাড় পরিবেষ্টিত। পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে সবুজ সৌন্দর্য এবং ভুটানিদের আলাদা ধাঁচের বাড়িগুলো যেন সৌন্দর্যকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভুটানের রাজধানী থিম্পু, শীতকালীন রাজধানী পুনাখা এবং অন্য শহর পারো ঘুরে মনে হলো সর্বত্রই যেন সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যের মায়াজাল ছড়িয়ে রয়েছে। তারা পাহাড়, নদী, সবুজ উপত্যকা এবং পুরো দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ করেছে কঠোরভাবে। ভুটানে মূলত তিনটা শহর ট্যুরিস্টদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজধানী থিম্পু, পুনাখা ও পারো।

থিম্পু

ভুটানের রাজধানী থিম্পু। স্বাভাবিক ভাবেই রাজধানী শহর হিসেবে আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রাজধানীর তুলনায় বোধ করি একটু সাদামাটা আর ছোট। সাদামাটা আছে বলেই প্রকৃতিকে তারা ধরে রাখতে পেরেছে। থিম্পু শহরের চারপাশেই উঁচু উঁচু পাহাড় যা থিম্পু শহরটাকে ভিন্ন একটা মাত্রা দিয়েছে। সমুদ্র সমতল থেকে থিম্পু ৭০০০ ফুটেরও অধিক উঁচুতে অবস্থিত। শহর হিসেবে থিম্পু বেশ পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে। শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ওয়াং চু নদী। রাজধানী থিম্পুতে দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে শখ্যমুনি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করেছে। ভুটানিরা মনে করে, দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে বুদ্ধ তাদের দেখে রাখছেন। দেশকে নিরাপদ রাখছেন। থিম্পু শহরের প্রায় সব প্রান্ত থেকেই বুদ্ধ মূর্তিটি চোখে পড়ে। মূর্তিটি উচ্চতায় ১৬৯ ফুট, প্রায় ১৭ তলা ভবনের সমান।


পুনাখা ডুবচেন উৎসবের একটি মুহুর্ত, ছবিঃ সংগৃহীত

পুনাখা

পুনাখা যাবার জন্য থিম্পু অফিস থেকেই একটা পারমিট নিতে হয়। পুনাখা প্রাকৃতিকভাবে অনেক সুন্দর শহর। পুনাখা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভুটানের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পুনাখাকে ডাকা হয় “মহান সুখ” বা “আনন্দ প্রাসাদ” বলে।  ডুবচেন উৎসবের সময় পুনাখা সাজে বর্ণিল সাজে। এই শহরে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা গ্রীষ্মকালীন অবসর যাপন করে এবং অনুসারীদের দীক্ষা দান করে।  


পাহড়ের ঢালে টাইগার নেস্ট মঠ, পারো ছবিঃ সংগৃহীত

পারো

পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলো পারো। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট এক শহর পারো। তবে রূপে যেন ক্লিওপেট্রা। বিশেষ করে বসন্তে পারো হয়ে উঠে লাস্যময়ী। স্বচ্ছ নদীর পানি, নীল আকাশ আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী পারোকে করেছে রূপের রাণী, স্বর্গীয় উদ্যান। পারোতে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমতল ভূমি আছে কিছু, যাতে ধান চাষ হয়। আছে টাইগার্স নেস্ট। যেখানে হাইক করা পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। উচ্চতায় ১০২৪০ ফুট হলেও হাইকিংয়ের রাস্তা খুবই মনোরম।

টাইগার নেস্ট ট্রেইলের একাংশ, ছবিঃ সংগৃহীত

অবারিত সৌন্দর্যের হাতছানি দেওয়া ভুটানকে বলা হয় প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। পর্যটনের এক আদর্শ জনপদ এটি। বাংলাদেশিদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয় ভুটান। ফলে ভিসার ঝক্কি এড়িয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির রাণী ভুটান থেকে। এছাড়া সড়ক পথে ভারত হয়ে ভুটান যাওয়া যায়। এতে প্রায় একদিন লেগে যায়। সড়ক পথ গেলে ভ্রমণ খরচ অনেক কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ভারতের ট্রানজিট ভিসা লাগবে। সাধারণত ১৫ দিনের ট্রানজিট ভিসা দেয় ভারত। দেশটিতে প্রতিবার প্রবেশ করে সর্বোচ্চ ৩ দিন থাকা যাবে।

ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে ১৫ টি ভারতীয় ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোনো ধরনের ঝক্কি ছাড়াই ভিসা দিয়ে থাকে।

আবেদনের প্রস্তুতি

  • ট্রানজিট ভিসা পেতে প্রথমে অনলাইনে পূরণ করতে হবে আবেদনপত্র। ফর্ম পূরণের দিন থেকে পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে।
  • ভিসার ধরন হবে ট্রানজিট। মনে রাখবেন, নেপাল যেতে চাইলে এন্ট্রি এবং এক্সিট পোর্ট হবে চ্যাংড়াবান্ধা/রানিগঞ্জ। যদি ভুটান যেতে চান তবে চ্যাংড়াবান্ধা/ জয়গাঁও সিলেক্ট করবেন।
  • ফর্ম ঠিক মতো পূরণ করে প্রিন্ট করে নিন।
  • ভিসা প্রসেসিং ফি হিসেবে ৮০০ টাকা জমা দিতে হবে আপনাকে।
  • এর আগে টুরিস্ট ভিসা থাকলে সেটা বাতিল হয়ে যাবে।

ভিসা আবেদন ফর্মের যা লাগবে

  • মূল পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ছয় মাস থাকতে হবে।
  • পাসপোর্টের ইনফরমেশন পেজের ফটোকপি।
  • এর আগে ভিসা থাকলে সেটার ফটোকপি।
  • ভিসা ফর্মের জন্য এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২ X ২)। ছবি অবশ্যই ৩ মাসের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না।
  • জন্ম সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা অ্যান্ডোর্সমেন্টের মূল কপি এবং ফটোকপি।
  • আবাসস্থলের প্রমাণস্বরূপ বৈদ্যুতিক বিলের ফটোকপি। ছয় মাসের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না।
  • পেশার প্রমাণস্বরূপ চাকরিজীবী হলে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) এর মূল কপি ও ফটোকপি। ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি। শিক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র।
  • যাওয়া-আসার টিকিটের অরিজিনাল কপি ও ফটোকপি।

মনে রাখতে হবে ভুটান ইমিগ্রেশনে পর্যটকদের সাত দিনের ভিসা দিয়ে থাকে। এর বেশি অবস্থান করতে হলে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আলাদা করে অনুমোদন নিতে হবে।

Post a Comment

4 Comments